শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রোগীপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কমিশন নিতেন ডা. মামুন

রিমান্ড শেষে মাইন্ড এইডের ৪ জন কারাগারে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

২০১৯ সালের জুলাইয়ে রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই অবৈধ এ হাসপাতালের সঙ্গে কমিশন নিয়ে কাজ করতেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন। সর্বশেষ সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমসহ কমপক্ষে ২৫ জন রোগীকে ওই হাসপাতালে পাঠিয়েছেন ডা. মামুন। প্রতি রোগী থেকে গড়ে কমিশন বাবদ ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি। দুই দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনে তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার এএসপি আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেদিনই তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত ডিসি মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, মাইন্ড এইডের অন্যতম পরিচালক মামলার ১১ নম্বর আসামি মুহাম্মদ নিয়াজ মোর্শেদের সঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের ভালো সখ্য ছিল। নিয়াজের মাধ্যমেই মামুন অবৈধ এই হাসপাতালের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১২জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে এখন পর্যন্ত এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্যাতনেই সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যু হয়েছে। হত্যাকান্ডের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাইন্ড এইড হাসপাতালে কখনও রোগী সংকট থাকতো না। একটু উচ্চবিত্ত শ্রেণির রোগী আসলেই মাইন্ড এইডে পাঠিয়ে দিতেন ডা. মামুন। বিনিময়ে কমিশন পেতেন আবার রোগী চিকিৎসা করতে গিয়ে মোটা অঙ্কের ভিজিট নিতেন। মামুন মাইন্ড এইড হাসপাতাল ছাড়াও আদাবরের মাইন্ড ওয়েল হাসপাতাল এবং টাঙ্গাইলে ঢাকা ক্লিনিক নামের একটি হাসপাতালে রোগী দেখতেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশীদ জানান, মঙ্গলবার সকালে শেরেবাংলা নগর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে মামুনকে গ্রেফতার করা হয়। আনিসুলের ঘটনায় করা মামলায় আদালতে যারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আনিসুলকে তার কর্মস্থল থেকে ঢাকায় এনে স্বজনরা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে একজন চিকিৎসক পান তারা। তিনি রোগীকে না দেখেই দুটি ইনজেকশন লিখে দেন। হাসপাতালের এক কর্মচারী নিজেই পুলিশ কর্মকর্তাকে ইনজেকশন পুশ করেন। পরে আনিসুলের স্বজনরা হাসপাতালটির রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে যান। মামুন তাদের পরামর্শ দেন, তার হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর খুব ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। দ্রুত রোগীকে মাইন্ড এইডে ভর্তি করলে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, এর পরই মাইন্ড এইডের ম্যানেজার আরিফকে ফোন করে মামুন জানান, একজন রোগী পাঠাচ্ছেন তিনি। যেন দ্রুত ভর্তি করানো হয়। ওই চিকিৎসকের কথায় আস্থায় নিয়ে স্বজনরা মাইন্ড এইডের দিকে আনিসুলকে নিয়ে যান। আনিসুলকে হত্যার পর আবার মাইন্ড এইড হাসপাতাল থেকে ডা. মামুনকে ফোন করা হয়। মামুন গিয়ে আনিসুল মারা গেছে জেনেও তাকে ওই হাসপাতাল থেকে বের করে অন্য হাসপাতালে ভর্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ চালান। যেন কোনোভাবেই তার দায়িত্বে অবহেলা না বোঝা যায়।

উল্লেখ্য, গত ৯ নভেম্বর বেলা ১১টায় আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতালটির কর্মচারীদের মারধরের পর আনিসুল করিম নিহত হন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। নিহতের বাবা ফয়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। নির্যাতনেই মৃত্যু হয় এএসপি আনিসুল করিমের এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
মাইন্ড এইডের ৪ জন রিমান্ড শেষে কারাগারে এএসপি আনিসুল করিম হত্যা মামলায় মাইন্ড এইড হাসপাতালের চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমান তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন-হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, ওয়ার্ড বয় জোবায়ের হোসেন, লিটন আহাম্মদ ও সাইফুল ইসলাম পলাশ। গত ১০ নভেম্বর ১০ জনের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ছয় আসামি আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। গতকাল স্বীকারোক্তি দেওয়া দুইজন হলেন- জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে মামলায় ছয়জন স্বীকারোক্তি দিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
বাবুল ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ২:৪৯ এএম says : 0
এই হলো তাদের চরিত্র
Total Reply(0)
S M Ahasanul Haque ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৪১ এএম says : 0
এদের শাস্তি হওয়া উচিত , ওই হাসপাতালের সামনে জুতাপেটা করা ।
Total Reply(0)
Shamsul Hoque ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৪৩ এএম says : 0
একটা জঘন্য অপরাধীর জন্য কর্মবিরতি করছে কর্মকর্তা কর্মচারীরা, কি অদ্ভুত!
Total Reply(0)
Siraj Hasan ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৪৩ এএম says : 0
সরকারি হাসপাতালে রুগীদের ভোগান্তি যেনো শেষ নাই
Total Reply(0)
তুষার ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৪৪ এএম says : 0
সঠিক বিচারের দ্বারা শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক।।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন