শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজনীতিকদের চেয়ে বেশি অর্থপাচার করে আমলারা

মিট দ্য রিপোর্টার্স-এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, রাজনীতিবিদরা নয়, বিদেশে বেশি অর্থপাচার করেন সরকারি কর্মচারীরা। গোপনে কানাডার টরোন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয় তাতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে। বিদেশে টাকা পাচার করছে এমন অনেক লোক আছে এবং অনেকে তাদের ছেলেমেয়ে বিদেশে রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এরমধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চার জন। এছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি। শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তবে তথ্য পাওয়া খুব কঠিন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ায় যে তথ্য বের হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, আসলে তা কতো তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। তবে আমার ধারণা প্রচার যেভাবে হচ্ছে পাচার তত নয়। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার প্রশ্নে বিদেশি সরকারগুলোরও দায় রয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, যেমন, সুইজারল্যান্ডে কে ব্যাংকে টাকা রাখলো, সেই তথ্য আমাদের দেয় না। তারা ট্রান্সপারেন্সির কথা বলে, কিন্তু যদি বলি কার কার টাকা আছে, সেই তথ্য দাও, তখন তারা দেয় না। এ ইস্যুতে তারা ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ বলেই মনে করি আমি।

গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ফ্লাগশিপ প্রোগ্রাম ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ডিআরইউ’র সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, পররাষ্ট্রনীতি এবং এ সংক্রান্ত সম-সাময়িক ঘটনা নিয়ে ডিআরইউ’র মতবিনিময় অনুষ্ঠানে খোলামেলা কথা বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোমেন।

সেখানে সদ্য সমাপ্ত মার্কিন নির্বাচন এবং ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে অধিকারী জো বাইডেনের বিজয়ে রীতিমত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন দীর্ঘ সময় জাতিসংঘে দায়িত্বপালনকারী মন্ত্রী ড. মোমেন। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসা ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে আমরা আগেও কাজ করেছি। জো বাইডেন খুব পরিপক্ব রাজনীতিবিদ। এটা পৃথিবীর জন্য আশীর্বাদ। নতুন সরকারে সঙ্গে কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা জলবায়ু নিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করবো। প্রবাসীদেরও সুবিধা হবে।

প্রায় সোয়া ঘণ্টার ওই আলোচনায় প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে বিবদমান নানা ইস্যু, বিশেষত; বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি না হওয়া, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফেরানো এবং তাদের দন্ড কার্যকর করতে সরকারের প্রয়াসসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্যাগের কথা শুনলে মানুষ তাজ্জব হয়ে যায়। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা যাকে নেতা হিসেবে পেয়েছি, তার মতো ত্যাগী নির্বাচিত নেতা বিশ্বে আর দ্বিতীয়জন নেই। ভোটের অধিকার আদায়ে প্রধানমন্ত্রী অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তার ত্যাগের কারণে মানুষ সম্মান করে। আমরা ভাগ্যবান, তার মতো নেতা পেয়েছি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পাঁচজন খুনি এখনো পালিয়ে আছে। দু’জন খুনির অবস্থান জানি। একজন আমেরিকায় রয়েছে। আরেকজন কানাডায়। ইতোমধ্যে আমরা কানাডায় আইনজীবী নিয়োগ করেছি। এখনো খুব সুরাহা হয়নি। আমেরিকায় অবস্থানরত খুনিকে ফেরাতে আশা পেয়েছি। তাদের অ্যাটর্নি জেনারেলকে সব তথ্য পাঠিয়েছি, তারা একটা সিদ্ধান্ত দেবে। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি আটজন বাংলাদেশিকে ফেরত আনতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। তাদের দেশে আনতে টাকাও পাঠিয়েছি। তারা ওমান থেকে পাকিস্তানে ঢোকে। তিনমাস জেলও দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। সেটা শেষ হয়েছে। পাকিস্তানে সরাসরি ফ্লাইট নেই, এখন তারা ওমানে যাবে। তারপর ওমান থেকে ফ্লাইটে দেশে আসবে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কতজন প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছেন জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সময়ে ১ লাখ ৬০ হাজার প্রবাসী দেশে এসেছেন। অধিকাংশ এসেছেন সউদী থেকে। কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর সউদী চাপ দিলো লোক নিয়ে যাও। তারা প্রথমে পাঠালো, যারা জেলে ছিল। যারা ক্রিমিনাল এদেরও পাঠালো। তবে সংখ্যা খুব কম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেখানে আলোচনা হবে। পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমাধান বলে আশাবাদী।

ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রচুর বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হয়। কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশে সেটা অনেক কম। ধর্ষণও আমাদের দেশে প্রতি ১০ লাখে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। কিন্তু ওপেন সেক্সের দেশ হওয়া সত্তে¡ও আমেরিকায় সেটা আরো বেশি। তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ ভারত। তাদের সঙ্গে একটা সলিড রিলেশন। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নতি হলে কিছু শত্রুও বাড়বে। সেজন্য আমরা কাজও করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন