শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ঝালকাঠিতে অ্যাসাইনমেন্ট ফি নিয়ে বিপাকে অভিভাবকরা

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ৩:০৭ পিএম

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে হোম অ্যাসাইনমেন্টের কথা বলে ঝালকাঠির অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোড়পূর্বক অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে জেলার রাজাপুর সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পাঁচ লাখেরও বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। চলতি বছরের ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা গাজী। অবসরে যাওয়ার আগমুহূর্তে সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এসব টাকা আদায় করেছেন তিনি। এতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীদের দরিদ্র অভিভাবকরা। এদিকে জেলার নলছিটি উপজেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হোম অ্যাসানমেন্টে ও অন্যান্য খরচের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ে হোম অ্যাসাইনমেন্ট ছাড়াও মসজিদের চাঁদা, কারেন্ট বিল, বেতন, সেশন ফি, পরীক্ষার ফি নিচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। করোনার মধ্যে আয় হারানো অসংখ্য পরিবার এসব টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ধার দেনা করেও অনেক অভিভাবক সন্তানের বভিষ্যত চিন্তা করে বাধ্য হচ্ছে বিদ্যালয়ের বেধে দেওয়া টাকা পরিশোধ করতে।
জানা যায়, রাজাপুর সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সাত শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণিভেদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাঁচশ থেকে আটশ পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সকল প্রকার অর্থ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘হোম অ্যাসাইনমেন্ট’ এর কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে অনেক অভিভাবক ক্ষুব্দ হন। অনেকেই বিভিন্ন স্থানে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এতেও থামেনি তাদের অর্থ বাণিজ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজাপুর সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা গাজী বলেন, আমরা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে বিদ্যালয়ের নিজস্ব ফটোকপি মেশিনে ফটো করে বিনামূল্যে দিচ্ছি। এ বিষয়ে কোন টাকা পয়সা নেওয়া হয়নি। যারা অভিযোগ করেছেন, তারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনা মেনেই আমরা কাজ করছি।
অভিভাবকদের অভিযোগে জানা যায়, নলছিটি উপজেলার প্রতাপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুবিদপুর বিজি ইউনিয়ন একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খাগড়াখানা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্ট ফি নিলেও রশিদ দিচ্ছেন বেতন আদায়ের। রশিদে ১৯টি বিষয়ের বিবরণ থাকলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কোন বিষয় ছাড়াই ৭০০ থেকে ৮৮০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। করোনার মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে, নেই পাঠদান কার্যক্রম। অথচ এসব বিদ্যালয়ে বেতনও নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলার সুবিদপুর বিজি ইউনিয়ন একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লিয়া আক্তারের মা নুসরাত জাহান অভিযোগ করেন, আমার কাছ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। বাড়িতে বসে পরীক্ষা হলে খাতাও আমাদের কিনতে হবে, তাহলে কেন টাকা দিবো। শুধু আমার কাছ থেকেই নয় সব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক নাসির উদ্দিন খান বলেন, আমার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আমার কাছ থেকে ৬০০ টাকা নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে, তারা একটি রশিদ ধরিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে সুবিদপুর বিজি ইউনিয়ন একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আহম্মেদ বলেন, আমরা অ্যাসাইনমেন্ট ফি নিচ্ছি না। বিদ্যালয়ের বেতনসহ অন্যান্য খরচ বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে, এটার রশিদও দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু কোন প্রকার টাকা নেওয়া যাবে বলে সরকারের নির্দেশ রয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের কোন নির্দেশনা নেই।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের মতামত নিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ঘোষণা দিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এখন কোন প্রকার টাকা নেওয়া যাবে না। অ্যাসাইনমেন্টের জন্য কোন ফি নেই, এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের বেতনসহ আনুসাঙ্গিক কোন খরচ নেওয়া যাবে না। এ নির্দেশনা অমান্য করছেন, তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে টাকা নিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ লিখিতভাবে জানালে আমরা ব্যবস্থা নিবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন