শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

কয়লাবিদ্যুৎ নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বিদ্যুত খাতের অগ্রগতিতে সরকারের সাফল্য অনস্বীকার্য। গত এক দশকে বিদ্যুতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। তবে বিদ্যুৎ খাতের রাজস্ব, লোকসান, ভর্তুকি ও ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির মত সিদ্ধান্তগুলোর কারণে একটি নেতিবাচক জনমত গড়ে উঠেছে। সেই সাথে সুন্দরবনের কাছে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মত বিতর্কিত ও পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে মানুষকে প্রতিবাদি ভূমিকায় দেখা গেছে। বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকাভিত্তিক খাত ঘোষণা করে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, ফার্নেস অয়েল, পেট্টোলিয়াম ও আমদানিকৃত এলএনজিসহ বিদ্যুত উৎপাদনে গতানুগতিক সম্ভাব্য প্রায় সব জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছিল সরকার। ইতিমধ্যে একযুগের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে দু’একটা উৎপাদন পর্যায়ে পৌছতে সক্ষম হলেও বেশিরভাগ এখনো নির্মাণ শুরুও করতে পারেনি। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশ্ব প্রেক্ষাপট আমূল বদলে যেতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে সরকার কয়লা বিদ্যুত নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। গত এক যুগে ১৮টি কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হলে মাত্র ৫টি কেন্দ্র প্রাথমিক পর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে পারলেও বাকি ১৩টির কোন হদিস নেই। ফান্ডিংসহ নানা জটিলতায় অনিশ্চিত বিদ্যুত প্রকল্পগুলো বাতিল করার বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলে জানা যায়। চলমান বাস্তবতায় সরকারের এই সিন্ধান্ত ইতিবাচক। ব্যাপক কার্বণ ডাই অক্স্ইাড ও কার্বণ মনোক্সাইড নি:সরনের জন্য দায়ী, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ও জনস্বাস্থ্যের জন্য দেশে দেশে বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টিকারী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এমনকি ঝুঁকি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকটের কারণে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ইতিমধ্যে এ ধরণের বহু বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ বা ডি-কমিশন্ড করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের উন্নয়ন ছাড়া শিল্পবিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিদ্যুতের ঘাটতি পুরণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ভাড়াভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার পাশাপাশি পুরনো সরকারি বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি ও অব্যাহত রাখার কার্যকর উদ্যোগের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্র বাস্তায়নের উদ্যোগকে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সমর্থন করা হলেও ভারতের সাথে যৌথ বিনিয়োগে সুন্দরবনের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি সৃষ্টিকারী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের বিষয়টি নিয়ে যে বির্তক ও দেশি-বিদেশি আপত্তি করা হয়েছিল তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারনে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশগত নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকন্দ্রগুলোকে বিশেষভাবে দায়ী করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত শিল্পোন্নত দেশ গত এক দশকে শতাধিক কয়লাভিত্তিক থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সাথে অন্তত ১০টি পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রি-এ্যাক্টর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং আরো প্রায় ২০টি কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন সরকার। ইউরোপের বেশি কিছু শিল্পোন্নত দেশও কয়লা ও পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ডিকমিলন্ড করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে শুরু করেছে।

কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার সারাবিশ্বে পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। ভূ-পৃষ্ঠের উষ্ণায়ণের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। লক্ষ লক্ষ বছরে জমাকৃত হিমালয়ের আইসক্যাপগুলো খুব দ্রুত গলে যাচ্ছে বলে গত দশকের শুরুতে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। গতকাল একটি ইংরেজী দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রীনল্যান্ডের বৃহত্তম হিমবাহ ধারণার চেয়ে দ্রুত গতিতে গলে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চলতি দশকের শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে। এর ফলে বাংলাদেশের সমুদ্রোপকুলীয় জেলাগুলোর বিশাল এলাকা নোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্লাইমেটচেঞ্জ ইনিশিয়েটিভে শিল্লোৎপাদন ও পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে যে সব শিল্প কারখানাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তার মধ্যে কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুতকেন্দ্র অন্যতম। প্রতিদিন হাজার হাজার টন নিম্নমানের কয়লা পুড়িয়ে হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি প্রতিদিন শত শত টন কাবর্নডাই-অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি মানুষের জন্য বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরী করছে। ইতিমধ্যে দেশে বিদ্যুত উৎপাদনে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হচ্ছে। এই বাস্তবতার বিপরীতে দেখা যাচ্ছে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫৭ ভাগের বেশি গ্যাসনির্ভর, ২৫ভাগের বেশি ফার্নেস অয়েল নির্ভর এবং ডিজেল ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের হার ১০ ভাগের বেশি নয়। ইতিমধ্যে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ এগিয়ে চলেছে, সেই সাথে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারের উপর বাড়তি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় ব্যপক পরিবেশ দূষণ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। বিশেষত রামপালসহ যে সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়নের পথে এগোতে পারেনি, পরিবর্তিত বাস্তবতায় সে সব প্রকল্প বাতিল করে বিকল্প সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack Ali ২০ নভেম্বর, ২০২০, ৮:২৯ পিএম says : 0
The whole world belongs to Allah, this government don't know how to rule a country.. Only Allah's Law can prevent the Environmental Disaster and also moral Disaster.. If we compare our country with European country, our country looks like a dustbin whereas we in the past when European people live in dark age we the muslim taught them how to live like a human being.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন