শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ক্যান্সারে আক্রান্ত পুতিন, ক্ষমতা ছাড়বেন আগামী বছরের শুরুতেই : দ্য সান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২০, ২:০২ পিএম

মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, সেই সাথে দেখা দিয়েছে পারকিনসন রোগের লক্ষণও। এজন্য গত ফেব্রুয়ারিতে তার জরুরি অপারেশন করা হয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় আগামী বছরের শুরুতে ক্ষমতা ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন পুতিন। রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভ্যালেরি সলোভেইয়ের দেওয়া তথ্যের খবর দিয়েছে দ্য সান।
তিনি আরো বলেছেন, দ্বিতীয় ডায়াগনোসিসে তার পারকিনসন ধরা পড়ায় তা শারীরিক অবস্থার জন্য ভয়াবহ নয়। এর ফলে মানুষের জনসমক্ষে আসা সীমিত হতে পারে। কিন্তু আরেকটি ভয়াবহ রোগ ধরা হয়েছে তার, সেটি হলো ক্যান্সার।
সলোভেই বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের বয়স এখন ৬৮ বছর। এ বয়সে তার দু’রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা দেখা দিয়েছে। একটি হলো, সাইকো-নিউরোলজিক্যাল প্রকৃতির অর্থাৎ পারকিনসন। অন্যটি হলো ক্যান্সার। তিনি আরো বলেছেন, দ্বিতীয় ডায়াগনোসিস বা রোগের পরীক্ষা প্রথম পরীক্ষার চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক। কারণ, প্রথম ডায়াগনোসিসে তার পারকিনসন ধরা পড়েছে। ততে তা শারীরিক অবস্থার জন্য ততেটাটা ভয়াবহ নয়। এর ফলে একজন মানুষের জনসমক্ষে আসা সীমিত হতে পারে। কিন্তু ভয়াবহ রোগটি ধরা পড়েছে সেটি হলো ক্যান্সার।
উল্লেখ্য, ভ্যালেরি সলোভেই হলেন রাশিয়ান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। ইতিহাসবিদ এবং পাবলিক রিলেশন্স ডিপার্টমেন্ট মস্কো স্টেট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের সাবেক প্রধান। এছাড়া তিনি রাশিয়ার অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে অভিজাতদের একজন। গত বছর তিনি পদ ছেড়েছেন। বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিযেছেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে মস্কোতে সরকার বিরোধী এক বিক্ষোভ হয়। তাতে অংশ নেয় বিরোধী দলের একজন সদস্য সের্গেই ফারগাল এবং তখনকার খাবারোভস্ক ক্রাই অঞ্চলের গভর্নর। ওই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন ভ্যালেরি সলোভেই। সের্গেইট ফারগালসহ তাকেও তখন আটক করা হয়েছিল। আটক করা হয়েছিল আরো কয়েক ডজন মানুষকে।
এখন প্রশ্ন হলো পুতিন যদি নতুন বছরেই ক্ষমতা থেকে সরে যান তাহলে কে হবেন তার উত্তরসূরি। এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ভ্যালেরি সলোভেই। তিনি বলেছেন, এ জন্য আগে থেকেই মেয়ে ক্যাটেরিনা টিকোনোভা’কে (৩৪) গড়ে তুলছেন পুতিন। রাশিয়ার সাবেক হাই-কিকিং ড্যান্সার ক্যাটেরিনা টিকোনোভা। বর্তমানে নতুন একটি কৃত্রিম গোয়েন্দা পদক্ষেপে সামনে থেকে কাজ করছেন। একই সঙ্গে রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে যে, তারা করোনা ভাইরাসের টিকা ‘স্পুটনিক ৫’ অনুমোদন দিয়েছে সবার আগে। আর সেই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে পুতিনের কন্যা ক্যাটেরিনা টিকোনোভা’র ওপর। তবে এক্ষেত্রে বিকল্পও ভাবা হচ্ছে। আলোচনা চলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্ষমতা থেকে সরে গেলে এ পদের ফ্রন্টরানার হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে আরো দু’জনের। এর মধ্যে একজন হলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট দমিত্রি মেদভেদেভ (৫৫) ও কৃষিমন্ত্রী দমিত্রি পাত্রুসেভ (৪৩)।
সম্প্রতি ক্রেমলিনের পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের যেসব ফুটেজ দেখা গেছে তাতে মনে হয়েছে তার পারকিনসন রোগের লক্ষণ থাকতে পারে। এর পরই তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর এলো। তবে, সম্প্রতি টেলিভিশনে প্রচারিত একটি মিটিংয়ে পুতিনকে কাশতে দেখা যায়। এরপর এ সপ্তাহের শুরুর দিকে তার কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা নেই বলে জানিয়ে দেয় ক্রেমলিন। ওই বৈঠকে করোনা ভাইরাস সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক ইস্যুতে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে বক্তব্য রাখছিলেন পুতিন। কিন্তু তার কাশি আসায় বাক্য শেষ করতে পারছিলেন না। অনেক কষ্ট করতে হয় তাকে বাক্য শেষ করতে। পরে ওই ফুটেজ এডিট করা হয়েছে। তাতে পুতিনের কাশিকে স্বল্প মাত্রায় দেখানো হয়েছে। ওদিকে শুক্রবার রাতে বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন, সাবেক জিমন্যাস্ট গ্লামারাস বান্ধবী অ্যালিনা কাবায়েভা (৩৭) পুতিনকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুনয় করছেন।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাম্প্রতিক ফুটেজ নিয়ে পর্যালোচনা বা গবেষণা করেছেন যেসব পর্যবেক্ষক তারা বলেছেন, তার পা অব্যাহতভাবে কাঁপতে দেখা গেছে। তিনি একটি আর্মচেয়ারে বসে যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তখন তিনি খুব ব্যথা বোধ করছেন বলে মনে হয়েছে। তিনি যখন কলম ধরছিলেন, তখন আঙ্গুল কাঁপতে দেখা গেছে। এ সময় তিনি একটি কাপ হাতে নেন। ধারণা করা হয় তাতে বেদনানাশক ককটেল ছিল।
পুতিন যে তার ২০ বছরের ক্ষমতার ইতি ঘটাবেন তা আন্দাজ করা যায় আরো একটি ঘটনায়। আইন করে তাকে আজীবন সিনেটর বানানোর খসড়া করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, তিনি ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও সিনিটর হিসেবে থেকে যাবেন। এর ফলে তিনি মারা না যাওয়া পর্যন্ত আইনগতভাবে দায়মুক্ত থাকবেন। তার বিরুদ্ধে কোনো বিচার হবে না। ফলে আগে থেকেই তিনি নিজে থেকে দ্রুততার সঙ্গে ওই আইনটি পার্লামেন্টে ঠেলে দিয়েছেন।
শিক্ষাবিদ ভ্যালেরি সলোভেই বলেছেন, পুতিনের অঘোষিত পার্টনার অ্যালিনা কাবায়েভা, তার মেয়ে মারিয়া ভোরোনস্টোভা (৩৫) ও ক্যাটেরিনা টিকোনোভাও তাকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাই তিনি যে পরিবারে আছেন সেখানকার বড় একটি প্রভাব পড়বে তার ওপর। ফলে তিনি আগামী জানুয়ারিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করে থাকতে পারেন। তিনি আরো বলেন, এমনটা করার আগে পুতিন দ্রুততার সঙ্গে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারেন, যাকে তিনি নিজের মতো করে উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।
এদিকে তাকে আজীবন সিনেটর বানানোর উদ্যোগ সম্পর্কে মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এই প্রক্রিয়া চালু আছে। তবে আন্তর্জাতিক চর্চার অংশ হিসেবে এটা করা হয়নি। পুতিনের পারকিনসন রোগ আছে, এ দাবি জোর দিয়ে অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন। মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন চমৎকার সুস্থ আছেন। তার পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে পুতিনের ক্যান্সার ও জরুরি অপারেশনের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়নি। সূত্র : দ্য সান

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন