শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

থামেনি ভৈরবের কান্না

২৭২ কোটি টাকার খনন কাজ নিয়ে প্রশ্ন প্রশাসনের গড়িমসিতে হয়নি দখলমুক্ত উচ্ছেদ নোটিশ ইস্যু আর মিটিংএ সীমাবদ্ধ

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

যশোর শহরের ফুসফুস ভৈরব নদ। বহু লেখালেখির পর অবশেষে ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। খননও হয় বিভিন্ন পয়েন্টে। কিন্তু শহরাংশে খনন পুরাপুরি হয়নি। কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও শহরাংশে খনন আটকে আছে দখলমুক্তের অভাবে। নদের প্লাবন অনুযায়ী উচ্ছেদ হলে দড়াটানা ব্রিজের দুইপাশে বহু অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গা পড়বে। ভৈরবের দুইপাড়ে ব্রিজের দুইদিকে অন্তত ৩ কিলোমিটার জুড়ে বিশাল বিশাল বিল্ডিং, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট পড়ে উঠেছে। শুধুমাত্র গরীবশাহ সড়কে কালেক্টরেটের বিপরীতে বেশকিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় ইতিপূর্বে। তাছাড়া কোন বিল্ডিংএ হাত পড়েনি লম্বাহাতওয়ালা প্রভাবশালীদের কারণে।
অতিসম্প্রতি ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন সমান্বয় কমিটির ব্যানারে দড়াটানা ব্রিজের উপর মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, যশোরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ খননে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত ও বিচারসহ নদী আইনে তটরেখা সীমানা আইন অনুযায়ি অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে হবে অবিলম্বে। বলা হয়, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালের যে বড় ড্রেনটি ভৈরব নদে মিশেছে আর তার উপর গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও মার্কেট ভৈরবের সীমানার মধ্যে রয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।
ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতা ইকবাল কবীর জাহিদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের খনন স্বচ্ছতা ািনয়ে নদ অববাহিকার জনগণের প্রশ্ন রয়েছে। ডিজাইন ও মাপ অনুযায়ী খনন হয়নি। মানা হয়নি নদী রক্ষা আইন। খননের মাটি নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা খননের সমীক্ষা ও তদন্ত চাই। তিনি বললেন, শহরাংশে খনন প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতা পরিকল্পিত। প্রশাসন উচ্ছেদের ব্যাপারে গড়িমসি করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বুধবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, প্রকল্পের খনন কাজ স্বচ্ছতার সাথেই হচ্ছে। যদিও তিনি স্বীকার করলেন, শহরাংশের খনন বিলম্ব হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরের মধ্যেই খনন দৃশ্যমান হবে। উচ্ছেদের ব্যাপারে তিনি বললেন, একথা ঠিক প্লাবন অনুযায়ী হয়নি তবে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী উচ্ছেদ হয়েছে। তাছাড়া দড়াটানা ব্রিজের দুইপাশে কাদা ময়লা আবর্জনার কারণে খনন দেরি হচ্ছে। বড় বড় স্থাপনাও উচ্ছেদ হবে।
উল্লেখ্য, ঐহিত্যবাহী ভৈরব নদটি গঙ্গা থেকে বের হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ভেতর দিয়ে সীমান্ত জেলা মেহেরপুরে ঢুকেছে। মেহেরপুরের সুবলপুর পয়েন্টে মিশেছে মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে। ভৈরব নদ আর মাথাভাঙ্গা নদী অভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্ট থেকে দর্শনা ও জীবননগর হয়ে ভৈরব নদ এসে মিশেছে চৌগাছার তাহেরপুরে কপোতাক্ষের সাথে। সেখান থেকে ভৈরব নদ যশোর ও শিল্পশহর নওয়াপাড়া হয়ে শিল্পনগরী খুলনা ছুঁয়ে সুন্দরবনের পশুরনদীতে গিয়ে মিশেছে। ভৈরব নদকে ঘিরেই মূলত যশোর, নওয়াপাড়া ও খুলনায় নগর, শহর ও শিল্প গড়ে ওঠে। ব্যবসা-বাণিজ্যও হয় স¤প্রসারিত। ভৈরব নদে একসময় বড় বড় জাহাজ ভিড়তো। মূলতঃ ‘৮০এর দশক থেকে যশোর ও নওয়াপাড়ায় নদের দুইপাড় দখল হয়। সেই থেকে ভৈরবের কান্না চলছে। থামছে না কান্না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন