শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

তুরস্ক-ইরানকে কোণঠাসা করে সউদীর আধিপত্যের চেষ্টা

রেড সি ডায়নামিক্স- শেষ উপক‚লরেখার কেন্দ্রে ঘাঁটি গেড়েছে নতুন পরাশক্তি চীন

দ্য আফ্রিকা রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

লোহিত সাগরে শত্রু এবং মিত্রদের একটি জটিল নেটওয়ার্কে হর্নের কিছু দেশ উপসাগরীয়দের সম্পদের দিকে নজর রাখছে এবং টিকে থাকার জন্য সেই সম্পদ অর্জনের উদ্দেশ্যে উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে অন্য দেশগুলোর বিদ্যমান প্রতিদ্ব›িদ্বতাকে ব্যবহার করেছে। কাতারের বিরুদ্ধে সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসরের চলমান জিসিসি সঙ্কট এর অন্যতম উদাহরণ। এ কৌশল হর্নের কিছু দেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মন্দার হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছে। তবে একটি সুসংহত আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির প্রচেষ্টাকে রোধ করে দেয়ার বিনিময়ে, যা হর্নকে সমান শর্তে উপসাগরের সাথে আলোচনায় সক্ষম হিসাবে দাঁড় করাতে পারতো। অধিকন্তু, হর্নের দেশগুলির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় প্রতিদ্ব›িদ্বতা বেড়েছে এবং অস্থিতিশীলতার চক্রটি চলমান রয়েছে।

ইথিওপিয়া নীল নদের ওপর রেনেসাঁ বাঁধ প্রকল্পের মাধ্যমে মিসর ও সুদানকে নাকে দড়ি দিয়ে নাচাচ্ছে। বাঁধটি হর্নে ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন ঘটাকে পারে। এই বাঁধ তৈরির মাধ্যমে নীল নদের নীচের দিকে থাকা ইথিওপিয়ার প্রতিবেশি দেশগুলিতে উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো নীতিনির্ধারকদের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলির অস্ত্র এবং অন্যান্য কৌশলগত সম্পদ সরবরাহ করার যে সম্পর্ক, হর্ন গাল্ফের সাথে সে ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। ক্ষমতার সমীকরণ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে উহ্য রাখা খেলোয়াড় হ’ল ইসরাইল। উপসাগর এবং হর্নের জন্য ইসরাইল এমন এক শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে, যাকে অবজ্ঞা করা যায় না, তবে স্বাগতও করা হয় না। তবে, এ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পর থেকেই এ অঞ্চলের ভ‚-রাজনৈতিক কৌশল বদলাতে শুরু করেছে। সুদান ইউএইকে অনুসরণ করেছে এবং এ তালিকাটি এখানেই শেষ হওয়ার কোনও কারণ নেই।

এ অঞ্চলের কৌশলগত নীতিনির্ধারণের আরেক নিয়ামক হ’ল ইয়েমেন। ইয়েমেনে সংঘটিত বিপর্যয় হর্ন-গাল্ফ সম্পর্কের নীরব প্রভাবকের ইরানে দিকে মনোযোগ আকৃষ্ট করে। বিগত কয়েক বছর ধরে সউদী আরবের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে ইরানকে হর্ন থেকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। তবে, পাল্টা জবাবে তেহরান সোমালিয়াকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছে এবং ইয়েমেনের হুথি আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয়ই বিষয়টিকে প্রত্যক্ষ হুমকি হিসাবে দেখছে এবং লোহিত সাগরের পশ্চিম উপক‚লে ইরানকে এক ইঞ্চিও আধিপত্য বিস্তার করতে দিতে চায় না। লোহিত সাগরের ক্ষমতার আধিপত্যে সাধারণ সন্দেহভাজনদের পাশাপাশি একটি নতুন পরাশক্তি উপকূলরেখার কেন্দ্রস্থলে অবস্থান নিয়েছে। সে হ’ল চীন। চীন ২০১৭ সালে জিবুতিতে তার প্রথম বিদেশী নৌ ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করে এবং এরপর লোহিত সাগরে অবস্থান জোরদার করে। সমুদ্রটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিটিভের একটি অংশ এবং আজ অবধি, জিবুতিতে বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় অংশটি চীনরে কাছ তেকে এসেছে। চীন জিবুতিতে আফ্রিকার বৃহত্তম ফ্রি ট্রেড জোন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং নতুন আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথটি নির্মাণে অর্থায়ন করেছে। উভয় উদ্যোগই এঅঞ্চলের বিষয়ে চীনের দৃষ্টিভঙ্গির গুরুতর উদাহরণ।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে জিবুতি, মিশর, ইরিত্রিয়া, সউদী আরব, সোমালিয়া, সুদান, জর্ডান এবং ইয়েমেনের প্রতিনিধিরা লোহিত সাগর ও আদেন উপসাগরের আরব ও আফ্রিকান প্রতিবেশি দেশগুলির নতুন কাউন্সিলের উদ্বোধনের জন্য রিয়াদে জড়ো হয়েছিল। সউদী নেতৃত্বাধীন কাউন্সিলের লক্ষ্য ছিল লোহিত সাগরে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা, তবে দেশগুলির তালিকা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, এঅঞ্চলের সব রাষ্ট্র বা প্রাসঙ্গিক অংশীদারদের আমন্ত্রণ করা হয়নি। ফলে এটি অনুমান করা যায় যে, উপসাগরীয় অঞ্চলে তুরস্ক এবং ইরানকে কোনঠাসা করে এবং সউদী আরবকে নেতৃত্বে রাখার জন্য কাউন্সিলের অপ্রকাশিত এজেন্ডা ভিত্তিহীন নয়।

দুর্বল ও আদর্শবাদী হলেও আশাবাদ এই যে, উদ্যোগটি আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বহুপক্ষীয়তার পথ প্রশস্ত করতে পারে। হর্ন এবং উপসাগরীয়দের বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার বিকল্প রয়েছে যা এখন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যকার শুল্ক যুদ্ধে প্রশস্ত হয়েছে। এ থেকে অবশ্য লোহিত সাগরকে সমন্বিতভাবে পরিচালনার দাবি উঠবে। তবে, অস্থিতিশীলতা রোধে হর্ন শক্তিদের একসাথে কাজ করতে হবেসত্যিকারের সহযোগিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিকাঠামোর দিকে দৃষ্টিপাত করবে, যেখানে হর্ন শক্তিদের একসাথে কাজ করতে হবে। (সমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
ইকবাল শেখ ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১১ এএম says : 0
তুরস্ক-ইরানকে কোণঠাসা করে সউদীর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা কখনও সম্ভব হবে না
Total Reply(0)
পাবেল ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১২ এএম says : 0
আগামী বিশ্বের নেতৃত্ব দিবে এরদোগান
Total Reply(0)
রিপন ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১২ এএম says : 0
খুব শিগ্রই বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হবে তুরস্ক ও ইরান
Total Reply(0)
জাহিদ ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৩ এএম says : 0
সউদী যদি মুসলমানদের পক্ষে থাকতো তাহলে সম্ভব ছিলো
Total Reply(0)
আনোয়ার ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৪ এএম says : 0
এই চেষ্টা কখনও সফল হবে না
Total Reply(0)
Israt Munna ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৮:১৭ এএম says : 0
সৌদি আরব ভুল পথে হাটছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন