শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শাহজালালে মশার উপদ্রব

প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

উমর ফারুক আলহাদী : নামেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কিন্ত নোংরা ময়লা আবর্জনার পরিবেশ দেখলে বিদেশী যাত্রীরা চমকে ওঠেন। শান্তিতে বসার কোনো উপায় নেই। মশা আর মশা। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ যাত্রী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই। রাতে কিংবা দিনে নয়, ২৪ ঘণ্টাই মশার উপদ্রব। মশার কামড়ে শিশুসহ অনেকেই অসুস্থ হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এ অভিযোগ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারকারী আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রীদের। তারা বলছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে ভিআইপি ওয়েটিং রুমসহ সর্বত্রই মশার উৎপাত। বিমানে ওঠার আগে বিশ্রামের স্থানে বসতে গিয়ে পোহাতে হয় মশার কামড়ের জ্বালা-যন্ত্রণা। বর্ডিং পাস কাউন্টার, ইমিগ্রেশন, বিশ্রামাগার, টয়লেটরুম Ñ কোথাও বসার উপায় নেই।
সরেজমিন বিমানবন্দর পরিদর্শন করে দেখা গেছে যাত্রীদের এসব দুর্দশা। যেসব যাত্রী শেষরাতের দিকে বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তাদের অবস্থা হয় শোচনীয়। ভোর হওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দরে বসে বসে মশার কামড় খাওয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না। অবশ্য মশা-মাছির যন্ত্রণা বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সহ্য করতে হয়। এ ব্যাপারে আলাপকালে কয়েকজন কর্মচারী জানান, তারা তাদের বসকে বিষয়টি অনেকবার জানিয়েছেন। বসরাও ওপরের মহলে জানিয়েছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। এখানে প্রতিবছরই বিমানবন্দরের আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার, মশা-মাছি নিধন এবং বিমানবন্দরের অভ্যন্তরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে বড় অঙ্কের বাজেট হয়। বিমানবন্দর মুক্তার মতো ঝকঝকে রাখতে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়। মাঝে মধ্যে ঝুড়ি, স্যানিটারি কিট নিয়ে ইউনিফর্ম পরা লোকদের দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়। কিন্তু সবই লোকদেখানো। কাউন্টারে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীদের টিকিট চেক করার সময় এক হাত ব্যস্ত রাখতে হয় মশার পেছনে।
এ ব্যাপারে সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্তাদের বক্তব্য, বিমানবন্দরের অবস্থা যতটা খারাপ বলা হচ্ছে ততটা খারাপ নয়। মশার জন্য নিয়মিত কীটনাশক দেয়া হচ্ছে, বাথরুম পরিষ্কার-পরিচছন্ন রাখতে সবাই সচেষ্ট। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। মাছির জন্যও স্প্রে করা হচ্ছে। তাদের মতে বিমানবন্দরের অবস্থা আগে আরও খারাপ ছিল। এখন অনেক উন্নত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর বিশ্বের একটি জরিপ সংস্থার প্রতিবেদনে নিকৃষ্টতম বিমানবন্দরের তালিকায় নবম স্থানে উঠে আসে শাহজালাল বিমানবন্দর। এরপর এটা নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়। বিদেশেও দেশের ভাবমর্যাদা প্রশ্নের মুখে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে বিমানবন্দরের পরিবেশ উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তবে বছর ঘুরলেও বদলায়নি বিমানবন্দরের চিরাচরিত রূপ। দেশের নানা অর্জনের মধ্যেও এক নোংরা পরিবেশের বাংলাদেশকে উপস্থাপন করছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করছে। এ বিমানবন্দর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে খারাপ ধারনার সৃষ্টি হচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হয় সংশ্লিষ্টদের এ নিয়ে যেন মাথাব্যথাই নেই। মশা-মাছি দূর করতে প্রতিবছর বাজেট হলেও সেই টাকা কোথায় খরচ হয় তা শুধু কাগজ-পত্রের হিসেবেই আছে, বাস্তবে নেই। এখন পুরো বিমানবন্দরই মশার নিয়ন্ত্রণে। ইমিগ্রেশন, কনভেয়ার বেল্ট, কাস্টমস হল, গ্রিন চ্যানেল কোথায় নেই মশার উৎপাত। কাস্টমস হলের নিজ নিজ রুমে যিনি বসে থাকেন তারও নিস্তার নেই। যাত্রীরা বসে বসে মশা মারার কাজেই ব্যস্ত থাকেন।
এছাড়া বিমানবন্দরের কনকর্ড হল, ওয়েটিং রুম সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় বড় বড় বিড়াল। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিড়াল একেবারেই কালো যা দেখে অনেক সময় শিশু যাত্রীরা ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। রাতে উন্মুক্ত ফ্লোরের ওপর দিয়েই এক পাশ থেকে অন্যপাশে দৌড়ে পাড়ি দিতে দেখা যায় বিভিন্ন আকারের ইঁদুর। নিচতলার এপিবিএন অফিসে কিছুক্ষণ বসলেও চোখে পড়ে ইঁদুর-চিকার ম্যারাথন দৌড়। অনেক সময় তারা স্বল্প সময়ের মধ্যেই অপেক্ষমান যাত্রীর লাগেজে ছিদ্র করে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। এছাড়া ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়েও লাগেজ না পাওয়ার পুরনো সমস্যা তো আছেই। বিষয়গুলো নিয়ে বিমানবন্দরে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ জমা পড়লেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন।
গত কয়দিন আগে সিলেটের লন্ডন প্রবাসী হারুন অর রশিদের সাথে কথা হয় শাহজালাল বিমানবন্দরে। তিনি জানান, বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন দুই মাস আগে। তিনি স্ত্রী-পুত্র পরিজন নিয়ে লন্ডন থাকেন। শাহজালাল বিমানবন্দরে আসার পর বিমানে উঠার আগে সেখানে বড় বড় মশার উপদ্রবে নাজেহাল হন তিনি এবং তার পরিবার। এমনকি তার ছোট ছেলে মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত দেশী-বিদেশী অনেক লোকজন যাতায়াত করে থাকে। এখানকার অব্যবস্থাপনার কারনে ময়লা ও নোংরা পরিবেশ তৈরী হয়েছে। এখানে এত লোক সমাগম তারপরেও মশা নিধনের কোনো উদ্যেগ নেই। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বড় বড় সোনার চালান ধরা পড়লেও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে মশা, মাছি, তেলাপোকা, ইঁদুর, চিকা ও বিড়াল। বিড়াল থাকলে ইঁদুর সবসময় সেই এলাকা এড়িয়ে চলে। কিন্তু হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন। এখানে ইঁদুর-বিড়ালের সহাবস্থান যেন সবাইকে বিস্মিত করে! শুধু তাই নয়, মশা-মাছিরও নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে এ বিমানবন্দরটি। এখানে এসে মশার কামড় বা মাছির ভনভনানির অভিজ্ঞতা না নিয়ে ফিরেছেন এমন যাত্রীর দেখা মেলা ভার। বিষয়টা দেশের মানুষের কাছে গা সওয়া হয়ে গেলেও বিদেশিরা এসে হতবাক হচ্ছেন। বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন, কক্সবাজার, কুয়াকাটা, জাফলং ঘুরে বাংলাদেশের মাটি ছাড়ার আগে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বিমানে চড়ছেন।
বিমানবন্দরে কর্মরত একটি সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, মশার কামড় খায়নি, মাছির ভনভনানি শোনেনি এমন যাত্রীর দেখা মেলা ভার। আর কালো বেড়ালের দাপট দেখে শিউরে ওঠে শিশুরা। বড়দের প্রতিক্রিয়া Ñ কালো বেড়াল বিরক্তিকর।
জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের একজন নিরাপত্তা সুপারভাইজার বলেন,মশার জন্য কীটনাশক দেয়া হচ্ছে,বাথরুম পরিষ্কার-পরিচছন্ন রাখতে সবাই সচেষ্ট। তবে এখন মশা কিছুটা বেশি। তবুও চেষ্টার ত্রুটি নেই। আশপাশের ঝোপঝাড়, বন-জঙ্গল, নর্দমা ও জলাশয় পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ক্লিনার সেকশনে নিজস্ব কর্মচারী রয়েছে। ক্লিনিং সেকশনের কাজ বিমানবন্দরের আনাচে-কানাচের সব জঞ্জাল দূর করা । কিন্ত ২০০৫ সালে বিমানবন্দরের ক্লিনিং সেকশনের সব কাজ দেয়া হয় এ কে ট্রেডার্স নামের একটি বেসরকারী কোম্পানিকে। এতে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। প্রথম প্রথম কিছুদিন ভাল ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সুখকর নয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে এখনও লেগে আছে ময়লার দাগ। বাথরুমে নোংরা দুর্গন্ধ। ব্যবহারের টিস্যু থাকে না প্রায়ই। দরজা ভাঙা। যেগুলো আছে তাতে লেখা সব অশ্লীল কথাবার্তা, আপত্তিকর অঙ্কন।
বুধবার দুপুরে দুবাই থেকে আসা যাত্রী রাসেল জানান, তিনি আধা ঘণ্টা ধরে কনভেয়ার বেল্টে দাঁড়ানো। লাগেজ ততক্ষণেও আসেনি। বাধ্য হয়েই ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বসতে হলো কাস্টমস লাগোয়া পাশে সারিবদ্ধ চেয়ারে। মিনিট কয়েক থাকার পরই শুরু হলো মশার কামড়। হাতে পায়ের কয়েক স্থানে মশার কামড়ে লাল হয়ে যায়। শরু হয় জ্বালা যন্ত্রণা। তিনি জানান,শুধু চেয়ারে বসেই নয়, দাঁড়িয়ে থাকলেও রেহাই নেই। মুহূর্তেই ভন ভন করে মশা হানা দেবে যাকে সামনে পাবে তাকেই। সেটা সাধারণ যাত্রীই হোক কিংবা কোটিপতিই হোক। ইমিগ্রেশন, কনভেয়ার বেল্ট, গ্রীন চ্যানেল, কাস্টমস হল কোথায় নেই মশার উৎপাত! কাস্টমস হলের নিজ নিজ রুমে যিনি বসে থাকেন তারও নিস্তার নেই।
গতকাল ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো যাত্রী শাহা জামাল জানান,কাউন্টারের বেল্টে যখন ইঁদুর শিকারের নেশায় কালো বেড়াল দৌড়াদৌড়ি করে তখন মনে হয় না আমি কোনো এয়ারপোর্টে দাঁড়ানো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
David chakraborty USA ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৭ এএম says : 0
Airport is the best place for .....................
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন