শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বনভূমি ও আবাদি জমি বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বন উজাড় ও বনভূমি দখল এদেশে নতুন ঘটনা নয়। নির্বাচারে বৃক্ষনিধন এবং চিহিৃত-অচিহিৃত বনভূমি দখল অনেকটাই যেন সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, গত ৭০ বছরে দেশের চার লাখ ৫৮ হাজারেরও বেশী বনভূমি উধাও হয়ে গেছে। সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেমন বনভূমি অধিগ্রহণ করেছে, তেমনি হাজার হাজার ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী বনভূমি দখল করে নিয়েছে। বনবিভাগের কর্মকর্তাদের হিসাবে, এক লাখ ৬০ হাজার একর বনভূমি সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি যেমন, রোড অ্যান্ড হাইওয়েজ, রেলওয়ে, সশস্ত্রবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ইত্যাদির প্রয়োজনে নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার বোর্ড থেকে ১১ হাজার একর বনভূমি লিজ দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন কাজে। আর এক লাখের ওপর ব্যক্তি ভূমি দখল করেছে দুই লাখ ৪৭ হাজার একর। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি ও প্রকল্পের জন্য বনভূমি অধিগ্রহণ মেনে নেওয়া গেলেও ব্যবসায়ীকদের দরকারে বনভূমির লিজ দেওয়ার বিষয়টি প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। এবং ভূমিখেকোদের ভূমিদখল একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুতই অবৈধ দখল থেকে ভূমি উদ্ধার করা প্রয়োজন। ধরে নেওয়াই স্বাভাবিক, উধাও হয়ে যাওয়া বনভূমিতে বৃক্ষ ছিল, যা নিধন করা হয়েছে। এতে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৃক্ষমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। একইসঙ্গে বনভূমির পরিধি ও পরিমান কমেছে। একটি দেশের কাম্য পরিবেশের জন্য ২৫ শতাংশে বন থাকা অপরিহার্য। আমাদের দেশে বনভূমি আছে ১০ শতাংশেরও কম। আমরা পরিবেশ বিপর্যয়ের কোন পর্যায়ে আছি, এ থেকে তা উপলব্ধি করা যায়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন অত্যাবশ্যক। বৃক্ষকে বলা হয় অক্সিজেনের কারখানা। বৃক্ষ অক্সিজেনই যোগান দেয়না, একইসঙ্গে বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান শোষণ করে পরিবেশগত ভারসাম্য সুরক্ষা করে। উত্তম আবহাওয়া, দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ ইত্যাদির জন্যই নয়, বৃষ্টিপাতের জন্যেও বৃক্ষ ও বনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ও ঝুঁকি মোকাবেলায় বৃক্ষ, বৃক্ষায়ন ও প্রয়োজনীয় পরিমান বনভূমির অপরিহার্যতা প্রশ্নাতিত।

এমনিতেই আমাদের বনভূমির পরিমান কম। এর ওপর প্রতিবছর যদি বৃক্ষ নিধনের এবং দখলের কারনে বনভূমি কমে যেতে থাকে তবে, এমন এক সময় আসতে পারে, যখন চিহিৃত-অচিহিৃত-সংরক্ষিত উন্মক্ত বনভূমি বলে আর কিছু থাকবে না। তখন পরিস্থিতি কী দাড়াবে, ভাবতেও শংকা জাগে। দেশে বনভূমি যেমন কমছে, তেমনি কৃষিজমি, পাহাড়িজমি ইত্যাদিও কমছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। জনসংখ্যাও বাড়ছে। এসবের কারনে ভূমি বা জমিতে টান পড়ছে। আবাদি জমি যে হারে কমছে তাতে একসময় খাদ্য উৎপাদানে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই আবাদি জমি অন্য কাজে ব্যবহার না করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। খাদ্যনিরাপত্তার স্বার্থেই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। ভূমিস্বল্পতা এবং ক্রমাগত তা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বনভূমি সংরক্ষণ ও বাড়ানো সহ আবাদযোগ্য জমি উদ্ধারের উপর বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। বিশ্ব ব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া মোকা বিলাই এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এদিকে অধিকতর নজর দেওয়া প্রয়োজন। গত শতকের ৬০ দশকে বন্যানিয়ন্ত্রণ ও নদীব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তাতে নদীশাসনের মাধ্যমে আবাদিজমি উদ্ধারের কথা ছিল। নদীর দু’তীরে রাস্তা নির্মাণ করে বৃক্ষরোপনের পরিকল্পনা ছিল। একইসঙ্গে নদীতীরবর্তী এলাকায় পরিকল্পিত বসতি গড়ে তোলার চিন্তাও ছিল। পরিকল্পনাটি যদি বাস্তবায়িত হতো, তবে আজকে দেশের অন্য রকম একটি চিত্র আমরা দেখতে পেতাম। এখনো এ কাজগুলো করা যায়। কিছুদিন আগে একজন মন্ত্রী নদীতীর সংরক্ষণ করার তাগিদ দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, নদীসংস্কার করে তার তীর সংরক্ষন করা গেলে নদী যেমন ভাঙ্গবেনা তেমনি দুইতীর ধরে রাস্তা নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণ করা সম্ভবপর হবে। আর নদী থেকে উদ্ধারকৃত জমি ব্যবহার করা যাবে কৃষি কাজে।

বনভ‚মি ও আবাদাযোগ্য জমি কীভাবে বাড়ানো যায়, কীভাবে সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, সেটা অত্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাবতে হবে। ভাবলেই হবেনা, যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তাবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। এটা অস্বীকার করা যাবেনা, জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির কারনে গৃহ ও আসবাবপত্র তৈরিতে কাঠের ব্যবহার বেড়েছে। ভবিষ্যতেও কাঠের ব্যবহার বাড়বে। সেক্ষেত্রে বৃক্ষায়ণ ও বনায়ন বাড়াতে হবে। পাহাড়ী এলাকা, উপকূলীয় এলাকা, নদী ও রাস্তার উভয় পাশে এবং অনাবাদি জমিতে বৃক্ষরোপন করতে হবে। সরকারি বনভূমি কঠোরভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বৃক্ষঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় বৃক্ষের সবুজ বেষ্টনী ঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে এবং ভূমিক্ষয় ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এ ধরনের সবুজ বৃক্ষবেষ্টনী আরো গড়ে তোলা সম্ভব। আবাদি জমি বাড়ানোর জন্য নদী-সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধারের পদক্ষেপ নিতে হবে। উপকূলসন্নিহিত সমুদ্রে যেসব চর ও দ্বীপ জেগে উঠেছে। তা উন্নয়ন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ দেশের সহযোগিতা নিতে হবে। এভাবে জমি উদ্ধার করা সম্ভব হলে জনবসতি ও আবাদের জন্য জমির অভাব হবে না। আমরা আশা করি, সরকার এদিকে যথোচিত গুরুত্ব ও দৃষ্টি দিবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন