মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এন্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার বন্ধের তাগিদ

নিরাপদ বিশ্ব গড়তে মানুষ ও পশুপাখিতে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৫৮ পিএম

# অনিবন্ধিত পোল্ট্রি খামার, হ্যাচারি ও ফিড মিল বন্ধের আহ্বান বিপিআইসিসি

মানুষ ও পশুপাখিতে এন্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাঁরা বলছেন, আর দেরি না করে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। ‘বিশ্ব এন্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ-২০২০’ উদযাপন উপলক্ষ্যে সোমবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বাংলাদেশ এ এম আর রেসপন্স অ্যালায়েন্স (বিএআরএ) এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার অনিন্দ রহমান এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (প্রশিক্ষণ) ড. পল্লব কুমার দত্ত বলেন, ইতোমধ্যে অনেকগুলো এন্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে গেছে। রিজার্ভড এন্টিবায়োটিকগুলোও সহজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নতুন কোন কার্যকর এন্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করা না গেলে সংকট ঘনিভূত হবে। তাই জীবন রক্ষাকারি রিজার্ভড এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (ডব্লিউএইচও), বাংলাদেশ অফিসের এসেনসিয়াল ড্রাগস এন্ড আদার মেডিসিন -এর টেকনিক্যাল অফিসার মোহাম্মদ রামজি ইসমাইল বলেন, পশুপাখি, মানুষ আমরা সকলেই একই পরিবেশ, মাটি ও পানি ব্যবহার করছি। কাজেই একের অপরিনামদর্শী পদক্ষেপ অন্যের বড় ধরনের ক্ষতির কারন হতে পারে। ইসমাইল বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন মানুষ। ‘ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’-এ তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আশাকরছি আগামীতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে অর্থবহ কিছু করে দেখাবে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, হাত বাড়ালেই যেখানে এন্টিবায়োটিক পাওয়া যায় সেখানে আমদানি কিংবা উৎপাদনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। তিনি বলেন, এন্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম ও গোশত উৎপাদনে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য খামারে জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, খামার ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে এবং সকল অনিবন্ধিত পিএস ফার্ম, হ্যাচারি, ফিড মিলগুলোকে অবশ্যই সরকারি নীতিমালার আওতায় আনতে হবে নতুবা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে আরও কঠোর হতে হবে এবং সরকারি সংস্থা, বেসরকারি উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন সহযোগিদের যৌথ উদ্যোগে অচিরেই একটি এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে কাজে নামতে হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন), ডা. শেখ আজিজুর রহমান বলেন, আমরা সামনের দিকে এগুতে চাই, সুস্থ-সবল জাতি গড়তে চাই। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সরকার, বেসরকারি উদ্যোক্তা, উন্নয়ন সহযোগীসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ মাসেই এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় কোভিড মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের নগদ সহায়তা দেয়া শুরু হচ্ছে বলে জানান ডা. আজিজ। সরকারের এ উদ্যোগ তৃণমূল খামারিদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’র কর্মকর্তা ডা. কামরুন নাহার বলেন, কৃষির উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং গবাদি পশুপাখির রোগবালাই প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ, এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ও এ বিষয়ে দক্ষ জনবল তৈরিতে কাজ করছে এফএও। ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, মানুষ ও পোল্ট্রিতে এন্টিবায়োটিকে ব্যবহার নিয়ে এফএও এবং বিএআরএ গাইডলাইন তৈরি করেছে। শিগগিরই মৎস্য খাতের জন্যও অনুরূপ একটি গাইডলাইন তৈরি করা হবে।

বিপিআইসিসি’র সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। তাঁর মতে দেশে উৎপাদিত মৎস্য ও পশুখাদ্যে এখন প্রোবায়োটিক, প্রিবায়োটিক এবং এন্টিবায়োটিক-অলটারনেটিভ ফিড এডিটিভস এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্যানারির বর্জ্য কিংবা হেভিমেটাল নিয়ে যে সমস্যাগুলো ছিল তা অনেকটাই কমে এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পোল্ট্রি ফিড ভারত ও নেপালে রপ্তানী হচ্ছে। ডিম, একদিন-বয়সী মুরগির বাচ্চা এবং পোল্ট্রির গোশত ও গোশতজাত প্রোডাক্ট রফতানীরও চেষ্টা চলছে। খালেদ বলেন, রাতারাতি কোন পরিবর্তন সম্ভব নয়। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে অনেক কাজ করতে হবে। তবে তাঁর মতে এ মুহুর্তে সবকিছু ছাড়িয়ে খামারিদের অস্তিত্ব রক্ষা নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে- কারন খামারিরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেন না। খালেদ বলেন, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে কোভিড মহামারির সময় ফেসবুকে প্রচারিত গুজবের কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম একেবারেই কমে গিয়েছিল কিন্তু ভারত সরকারের কিছু ইতিবাচক উদ্যোগের কারনে বিগত দুই মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সে দেশের পোল্ট্রি খাত। আমাদের দেশের সরকারও সে ধরনের উদ্যোগ নিলে তৃণমূল খামারিরা রক্ষা পাবে।

ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখার সভাপতি আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান (শাহরিয়ার) বলেন, দেশে অনেক অনিবন্ধিত ফিড মিল আছে এছাড়াও টোল ম্যানুফ্যাকচারিং হচ্ছে- যেখানে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে কীনা কিংবা কি হারে হচ্ছে সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। এগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সবার আগে বাস্তব পরিস্থিতি জানতে হবে। কিভাবে, কোথায় এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে জেনে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। শাহরিয়ারের মতে, সারাদেশে কিছু মডেল ফার্ম বা প্রদর্শনী খামার তৈরি করতে হবে এবং এন্টিবায়োটিক ছাড়াও যে মুরগি পালন করা যায় এবং তাতে যে লাভ বেশি হয়, সে কথাটি খামারিদের বোঝাতে হবে। ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সাধারন সম্পাদক আলী ইমাম বলেন, ওষুধ সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করছে; তবে অসাধু ব্যবসায়িদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

বিপিআইসিসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়- পোল্ট্রি সেক্টরে প্যারাডাইম শিফট শুরু হয়েছে। সরকার আইন করে পশুখাদ্যে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধ করেছে।

আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (খামার) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান এবং এফএও কর্মকর্তা রাহাত আরা করিম। অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন সিলেটের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজী আশরাফুল ইসলাম, ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতিকুর রহমান, এসিআই এর বিজনেস ডিরেক্টর, মো. শাহীন শাহ, প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন