শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভোটের ফল উল্টে দিতে ট্রাম্প কি করতে পারেন?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেন জিতলেও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরোধীতা করে আসছেন। রোববারও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, নির্বাচনের ফলাফল তিনি মানেন না। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কীভাবে জো বাইডেন তার মন্ত্রীসভা গঠনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

নিজের ফেসবুক পাতায় এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জো বাইডেন কেন দ্রুত তার মন্ত্রীসভা গঠন শুরু করেছেন যখন আমার তদন্তকারীরা লাখ লাখ জাল ভেটের সন্ধান পেয়েছেন? এই জাল ভোট বাতিল হলে চারটি রাজ্যের ফল উল্টে যাবে, এবং নির্বাচনের ফলও উল্টে যাবে। আশা করি আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষায় আদালত এবং নির্বাচিত জন-প্রতিনিধিরা তাদের সাহস দেখাবেন। বিশ্ববাসী সব দেখছে!!!’
বাইডেনকে বিজয়ী হিসাবে ঘোষণার পর দু’সপ্তাহের বেশি সময় গেলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ফলাফল মেনে নেওয়ার কোনো লক্ষণই দেখাচ্ছেন না। কিন্তু ফলাফল কি তিনি উল্টে দিতে পারবেন? আসলেই কি তার হাতে অব্যর্থ কোনো কৌশল রয়েছে? অভূতপূর্ব সেই কান্ড যে তিনি ঘটাতে পারবেন তার কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত নেই। বরঞ্চ তার আইনজীবীরা যেসব অভিযোগ নিয়ে আদালতগুলোতে যাচ্ছেন, সেগুলো হালে তেমন পানি পাচ্ছে না। শনিবারও পেনসিলভানিয়ার একটি আদালত রাজ্যে কয়েক মিলিয়ন পোস্টাল ভোট জালিয়াতির এক মামলা যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে খারিজ করে দিয়েছে। বিচারক তার রায়ে যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া ঐ মামলা আনার জন্য মি ট্রাম্পর আইনজীবীদের তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেছেন। অন্যান্য জায়গাতেও এমন আরো ডজন ডজন মামলায় মি ট্রাম্পের আইনজীবীরা যথেষ্ট প্রমাণ হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার তার প্রধান আইনজীবী, নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি জানিয়ে দেন মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলা তারা প্রত্যাহার করছেন। মিশিগানে জো বাইডেন ১ লাখ ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে পুনরায় ভোট গণনার পরও জো বাইডেন ১২ হাজার ভোট বেশি পাওয়ার পর রাজ্যের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ ফলাফল সার্টিফাই বা প্রত্যয়ন করে দিয়েছেন।
আমেরিকা থেকে বিবিসির অ্যান্থনি জুরকার বলছেন, দেখেশুনে মনে হচ্ছে মি ট্রাম্প এখন আইনি লড়াইয়ের বদলে দীর্ঘমেয়াদী একটি রাজনৈতিক কৌশলের পথ নিচ্ছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প যা করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন: আইনের পথে বা রাজ্য পর্যায়ে রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচিত বা সমর্থক কর্মকর্তাদের দিয়ে ভোট সার্টিফিকেশন বা প্রত্যয়ন প্রক্রিয়া যতটা সম্ভব আটকানোর চেষ্টা করবেন। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত যেসব রাজ্যে জো বাইডেন অল্প ভোটে জিতেছেন ভোট জালিয়াতির যুক্তি তুলে ধরে সেসব রাজ্যের আইনসভাগুলোকে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করতে রাজী করাবেন। এর পর ঐ সব রাজ্যের আইনসভা ১৪ই ডিসেম্বর তাদের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটগুলো জো বাইডেনকে না দিয়ে মি ট্রাম্পকে দেবে। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত এই সব রাজ্যের আইনসভার মাধ্যমে (যেমন উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান) ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিয়ে ট্রাম্প তার বর্তমানের ২৩২টি ইলেকটোরাল ভোটকে টেনে ২৬৯টি ভোটে নিয়ে যাবেন যাতে জো বাইডেনের সাথে তার টাই হয়ে যায়। জো বাইডেনের ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা নামিয়ে টাই করতে পারলে, প্রতিনিধি পরিষদ অর্থাৎ মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্ন-কক্ষ ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে। যদিও প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু গোপন এবং রহস্যময় কিছু বিধির কারণে মি. ট্রাম্প সেখানে সুবিধা পেয়ে যেতেই পারেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাররা আসলে তাদের রাজ্যের জন্য নির্ধারিত সংখ্যক ইলেকটোরাল কলেজ প্রতিনিধি নির্বাচিত করতেই ভোট দেন। এই প্রতিনিধিরা আবার ১৪ই ডিসেম্বর ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। রাজ্যস্তরে নির্বাচিত এই প্রতিনিধিরা সাধারণত ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটান। যেমন মিশিগানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সবারই উচিৎ ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে জো বাইডেনকে ভোট দেওয়া কারণ তিনিই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট পেয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন চাপ দিয়ে এই প্রচলিত রীতি বদলে ফেলার চেষ্টা করছেন। রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলোতে তিনি যে এমন চাপ তৈরির চেষ্টা করছেন তার প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় যখন তিনি মিশিগানের সবচেয়ে বড় শহর ডেট্রয়েটের রিপাবলিকান দলের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের টেলিফোন করেন। মার্কিন একজন প্রেসিডেন্ট রাজ্য স্তরে নিম্ন পর্যায়ের দুই নির্বাচনী কর্মকর্তাকে ফোন করবেন - এমন নজির বিরল। স্মরণ করা যেতে পারে যে ঐ দুই কর্মকর্তা নির্বাচনের দিন ডেট্রয়েটে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত জানালেও পরে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিলেন। ইঙ্গিত আরো স্পষ্ট হয় যখন মিশিগান আইনসভার রিপাবলিকান নেতাদের শুক্রবার হোয়াইট হাউজে ডাকেন ট্রাম্প এবং তারা সেই আমন্ত্রণ গ্রহণও করেছেন। ভোটের ফলাফল পুনর্বিবেচনা এমনকি বদলে দেওয়ার জন্য রাজ্যস্তরে আইনসভাগুলোর রিপাবলিকান সদস্যদের ওপর চাপ তৈরি ছাড়াও অন্যান্য উপায়ও তিনি খতিয়ে দেখছেন বলে খবর বেরুচ্ছে। রাজ্য স্তরে দুই দল মিলে ভোটের ফলাফর প্রত্যয়ন করা আমেরিকার নির্বাচনে একটি নৈমিত্তিক ঘটনা, কিন্তু ক্ষমতা ধরে রাখতে ট্রাম্প এবার সেই রীতি বদলের চেষ্টা শুরু করেছেন।
তবে ট্রাম্পের জন্য বিষয়টি খুবই কঠিন হবে। তার আইনজীবীরা যেসব রাজ্য টার্গেট করেছেন - মিশিগান, উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া এবং নেভাদা - সেসব রাজ্যের গভর্নররা ডেমোক্র্যাট দলের। তারা চুপ করে বসে থাকবেন না। যেমন মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারের ক্ষমতা রয়েছে রাজ্যের নির্বাচনী বোর্ডে পরিবর্তন এনে এমন কাউকে আনা যিনি ফলাফল প্রত্যয়ন করতে ইচ্ছুক। তাছাড়া, আইনসভার রিপাবলিকান সদস্যরা ইলেকটোরাল কলেজে ভোট দেওয়ার জন্য যেসব প্রতিনিধি মনোনীত করবেন, গভর্নর তার ইচ্ছামত বাইডেন সমর্থক প্রতিনিধি মনোনীত করতে পারেন। সে অবস্থায় কারা বৈধ ইলেকটোরাল কলেজ প্রতিনিধি তা নির্ধারণের ভার পড়বে কংগ্রেসের ওপর। তবে তার মানে এই নয় জো বাইডেনের সমর্থকরা উদ্বিগ্ন নন। সেই বিরল সম্ভাবনার চিন্তাতেও অনেক ডেমোক্র্যাট সমর্থকের এই ঠান্ডাতেও ঘাম হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি নিউজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
রোদেলা ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:২৭ এএম says : 0
আল্লাহই ভালো জানেন।
Total Reply(0)
কামাল ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:২৮ এএম says : 0
যে পাগলের পাগল, যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারে
Total Reply(0)
Shaun Sumon ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৩৫ এএম says : 0
Army diye nirbachon kora
Total Reply(0)
Kamal Hossain ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৩৫ এএম says : 0
বাংলাদেশের ................দের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৮:১৩ এএম says : 0
একটা মেন্টাল আর কি করতে পারে???
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৮:১৩ এএম says : 0
লাফালাফি করে সব ঠিক হয়ে যাবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন