শীতকাল হোক কিংবা গরমকাল সব কালেই রাস্তায় আখের রস দেখতে পাওয়াই যায়। এক গ্লাস আখের রস খেলেই যেন ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাই আখের রসকে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিঙ্ক বলা হয়। তবে শুধুমাত্র ক্লান্তি দূর করতেই নয়, ত্বক এবং শরীরের জন্যও যথেষ্ট উপকারি হল আখের রস।
জানেন কি, নাছোড় ব্রণের হাত থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে আখের রস? মুলতানি মাটি আর আখের রসের প্যাক তৈরি করে সপ্তাহে তিনবার মুখে লাগাতে পারলে তৈলাক্ত ত্বক ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে উঠবে। যেহেতু আখে প্রচুর ক্যালশিয়াম থাকে, তাই নিয়মিত তা সেবন করলে দাঁত, নখ আর হাড়ের স্বাস্থ্যও খুব ভালো থাকবে। আখ যদি চিবিয়ে খাওয়া যায়, তা হলে আপনার মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, দাঁতের ক্ষয় রোধ হবে, মুখের দুর্গন্ধও কমে যাবে। দেখে নিন উপকারিতা-
ডায়াবেটিস দূরে থাকে : খেতে মিষ্টি হলেও এটি ডায়াবেটিসের পক্ষে খুবই কার্যকরি। এতে জিআই-এর পরিমাণ খুব কম থাকে। যার জন্য ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত এ আখ খেতেই পারেন। গøাইসেমিক ইনডেক্সে একেবারে তলার দিকে থাকার কারণে আখের রস খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না। বরং এ প্রকৃতিক উপাদানটি গ্রহণ করলে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই তো ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ম করে আখের রস খাওয়া পরামর্শ দেয়া হয়। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আখের রস খাওয়া উচিত। কারণ জেনে নেয়া উচিত এ রসটি খেলে তাদের শরীরে আর কোনও সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে কিনা!
হৃদরোগ উপশম : একাধিক গবষণায় দেখা গেছে, রোজের ডায়েটে আখের রসকে জায়গা করে দিলে একাধিক রোগ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। কারণ আজকের ডেটে যে যে ডিজিজ আমাদের ঘিরে ধরেছে, তার প্রায় সবকটির প্রকোপ কমাতেই আখের রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এ প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম এবং আরো সব উপকারি উপাদান নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে এই রস। হার্ট অ্যাটাক রুখতেও সাহায্য করে এ রস। এমনকি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের নিঃসরণ কমাতেও সাহায্য করে।
ওজন কমাতে : আখের রস মিষ্টি হলেও এ রস ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এমনকি কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
ত্বকের পক্ষে উপকারি : আখের রস ত্বকের পক্ষে খুবই উপকারি। এতে আলফা হাআইড্রক্সি অ্যাসিড থাকে। যা ব্রণ, বলিরেখা দূর করে ত্বককে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। এমনকি না খেয়ে আখের রস যদি মুখে মাস্ক হিসেবে লাগিয়ে রাখা যায় তাহলে ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ করে তুলতে সাহায্য করে।
হজমশক্তি বাড়ায় : এতে পটাসিয়ামের পরিমাণ খুব ভালো থাকে। এমনকি ফাইবারও যথেষ্ট বেশি পরিমাণে থাকে। যার জন্য আখের রস খেলে কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা দূর করে হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি গরমকালে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা যায়, আখের রস ডিহাইড্রেশন দূর করতে সক্ষম। পেটের ইনফেকশন রুখতেও কার্যকরি ভ‚মিকা পালন করে এ রস।
তবে কয়েকটি সতর্কতা : বাজারে আখের রস তৈরির মেশিনগুলো সচল রাখার জন্য নিয়মিত তেল দেয়া হয়, সেটা আপনার ফলের রসে মিশে মারাত্মক বিপদ ঘটাতে পারে। তার চেয়ে আখের খোসাটা ছিলে বাড়িতে আনুন। খুব ভালো করে ধুয়ে শুকনো করে ফ্রিজে রেখে দিন। রস খাওয়ার আগে ছোট ছোট করে কেটে বেøন্ডারে পিষে নিন সামান্য আদাসহ। তার পর ছোবড়া হাত দিয়ে চেপে চেপে রস নিংড়ে বের করে নিতে হবে। সামান্য বিট লবণ আর লেবুর রস যোগ করে পান করুন। অন্য কোনো ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে সুস্বাদু ককটেলও তৈরি করে নিতে পারেন।
আখের রস সদ্য তৈরি করে নিতে হবে। ফ্রিজে রাখলে ঘণ্টা দু’য়েক পরও খাওয়া চলে, কিন্তু তারপর একেবারেই চলবে না। কারণ ফলের রসে তার মধ্যেই রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
যাঁরা প্রতিদিন আখের রস খান, তারা দিনে দু’ গ্লাসের উপরে উঠবেন না। একমাত্র জন্ডিস রোগী ছাড়া কারোই দিনে দু’ গ্লাসের বেশি আখের রসের প্রয়োজন হয় না। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন