বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

উলিপুরে খাদ্যাভাবে ১৫ মাসের শিশু কন্যাকে দত্তক দিলেন মা

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৩:১৮ পিএম

কুড়িগ্রামের উলিপুরে নেশাক্ত স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের হিংস্রতা ও শ্বশুর বাড়ীর লোক জনের নির্যাতনের শিকার হয়ে শেফালী বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধু দু’কন্যা সন্তান নিয়ে প্রায় দু’বছর থেকে বিধবা মায়ের অশ্রয়ে পিত্রালয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন। নিজের ও সন্তানের ভরন-পোষন না পাওয়ায় করোনা কালে খাদ্য সংকটে পরে নিরুপায় অসহায় মা তার ১৫ মাসের শিশুকে অন্যের নিকট দত্তক দিয়েছেন। এমনি এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে উপজেলার উত্তর দলদলিয়া করতোয়ার পাড়া গ্রামে। এ ব্যাপারে ওই গৃহবধু দাম্পত্য পূনোরুদ্ধারসহ ভরন-পোষনের দাবী তুলে আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানাগেছে, ওই গ্রামের দরিদ্র পিতা মৃত- গফ্ফার আলীর এতিম কন্যা শেফালীর গত ২৭ মার্চ/২০১১ পাশ্ববর্তি থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামে মৃত সৈয়দ আলীর পুত্র আনিছুর রহমান আনিছের সহিত পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ে হয়। তখন থেকে প্রায় ৮ বছর সুখ-শান্তির সংসার জীবনে তাদের ঔরশে ২’টি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ১ম কন্যা আখি আক্তার মীমের বয়স ৮ বছর ও ২য় কন্যা আশরাফি আক্তার অনন্যার বয়স মাত্র ১৫ মাস। অভাবী সংসারে আয় উপার্জনের কোন উপায় না থাকায় নিজে অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ ও স্বামী রাজমিস্ত্রিতে শ্রম দিয়ে যা পেতো তাতেই তাদের সংসার চলতো। দীর্ঘ ৮ বছরের সুখি সংসার জীবনে শেফালী হঠাৎ দেখেন তার স্বামী প্রতিদিনই নেশাক্ত হয়ে বাড়ীতে ফিরে তার সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। শেফালী স্বামীকে নেশা করতে মানা করলে এনিয়ে তাদের দুই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় দ্বন্দ্ব-মারামারি লেগেই থাকতো। এমতাবস্থায় গত রমজান মাসের ৮ তারিখে রাতে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আনিছুর রহমান শেফালীকে বেধরক পিটিয়ে রক্তাক্ত ও ঘারে-মাথায় প্রচন্ড আঘাত করলে সে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং তার একটি হাত বিকল হয়ে পরে। এ অবস্থায় রুগ্ন স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যাকে চতুর স্বামী আনিছুর তার হত-দরিদ্র বিধবা শ্বাশুরির বাড়িতে রেখে পার্শ্ববর্তি আপুয়ারখাতা গ্রামে গোপনে ২য় বিয়ে করা স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায়।
একদিকে করোনা কালে দেশে লকডাইন পরিস্থিতির মধ্যে শেফালীর বৃদ্ধা মা রমিছা খাতুন বাড়িতে খাদ্য সংকটে ভোগছিল। অন্যদিকে রুগ্নকন্যা ও তার দু’শিশু সন্তানের চিকিৎসা এবং ভরন-পোষন চালিয়ে আসা তার পক্ষ্যে কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছিল। তবুও অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে মেয়েকে সুস্থ্য করে জামাইয়ের বাড়িতে নিয়ে গেলেও স্বামীর বাড়িতে আর ঠাই হয়নি শেফালীর। ফলে নিরুপায় হয়ে ফিরে এসে বৃদ্ধা মায়ের অভাবী সংসারে বোঝা হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছে সে। পক্ষান্তরে করোনালকডাউন পরিস্থিতি, অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদী বন্যায় ঝিয়ের কাজে কর্মহীন হয়ে পরা বৃদ্ধা রমিছার সংসারে নীদারুন খাদ্য সংকট চলছিল।
এমতাবস্থায় খাদ্যাভাবে প্রাণ বাঁচাতে রমিছা খাতুন শেফালীর ১৫ মাসের কোলের শিশু কন্যাকে পালিত হিসাবে অন্যের কাছে দিয়ে দেন। এদিকে দু’বছর থেকে স্বামীর কোনো ধরনের যোগাযোগ ও ভরন-পোষন না পাওয়ায় প্রতিকার চেয়ে শেফালী স্বামী আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে স্থানীয় আসক’র সহায়তায় গত ১৫ নভেম্বর/২০ তারিখে নিগাল এইডস্ এ আবেদন করেছে। এ ব্যাপারে ঢাকায় কর্মরত অভিযুক্ত আনিছুর রহমানের সাথে ফোনে কথা হলে কর্ম ব্যস্থতার কারণে বাড়িতে আসতে না পারায় বিষয়টির সুরাহা হয়নি। তবে আগামী ১০ ডিসেম্বর বাড়িতে এসে আমার প্রথম স্ত্রীর সংক্রান্ত পারিবারিক সমস্যাটি সমাধান করবে বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন