শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬ মাসে অর্ধশতাধিক খুন

পারিবারিক কলহ, আধিপত্য বিস্তার-সংঘর্ষ

খ,আ,ম রশিদুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

পারিবারিক কলহ, আধিপত্য বিস্তার এবং একাধিক সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ৬ মাসে অর্ধশতাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। কখনো নিজ বাড়ির খাটের নিচ থেকে গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আবার কখনো প্রতিপক্ষের লোকজনকে বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে দলবেঁধে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যাসহ বিভিন্ন কায়দায় হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। কোন কোন সময় সড়ক-মহাসড়ক ও জলাশয়ে মিলছে লাশ। চলতি বছররে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত অর্ধশত হত্যাকন্ডে সংগঠিত হয়। এসকল হত্যাকান্ডের ঘটনায় পৃথক পৃথক ভাবে মামলা হলেও অনেক আসামি এখনো রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের গড়িমসি এবং খুনের ঘটনায় সমাজপতিদের হস্তক্ষেপে আপসের মত অপসংস্কৃতির কারণেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। তাই বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা।

জানা যায়, আলোচিত এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর লামা বায়েক গ্রামের জোড়া খুন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাওনা টাকা নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হয় ইশান ও মনির নামের দুই যুবক। গেল দেড় মাসে মাসে এই হত্যা মামলায় মাত্র ২ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য আসামিরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নিহত ইশানের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান হারিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ মা আকলিমা আক্তার ও বাবা মিজানুর রহমান। তারা কিছুতেই তাদের সন্তানের এই নির্মম হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারছেন না। পুত্র শোকে কাতর হয়ে বার বার মূর্ছা যান নিহত ইশানের মা আকলিমা আক্তার।

নিহত ইশানের বাবা মিজানুর রহমান জানান, হত্যাকান্ডের এতদিন পার হলেও আসামিদের ধরা হচ্ছে না। আসামিরা প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকী দিচ্ছে। কখন কি ঘটে তা বলতে পারি না। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর, সরাইলসহ জেলার ৯টি উপজেলাতেই এসব হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২টি জোড়া খুন, ব্যাংক ডাকাতি চেষ্টায় খুনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলাও হয়েছে। এতে অন্তত শতাধিক জনকে আসামি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ সকল মামলার সাথে জড়িত অনেক হোতাকে আইনের আওতায় আনলেও মামলার অধিকাংশ আসামিরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

জেলার প্রবীন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, একটি খুনেরও সঠিক বিচার হয় না। কোন খুনের ঘটনা বিচারের প্রক্রিয়ায় গেলেই এক শ্রেণির সমাজপতিরা বা গোষ্ঠীর নেতারা শান্তি রক্ষার নামে হত্যার মত ঘৃণ্য ঘটনার আপস করার অপসংস্কৃতির কারণে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, কোন খুনের আপস নয়, বরং খুনের সাথে যারা জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শফিউল আলম লিটন বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপড়তা আরো গতিশীল করতে হবে। কারণ একটা অপরাধ সংঘটিত হবার সাথে সাথে তা দমন করা গলে কেউ অপর একটি অপরাধ করতে সাহস পাবে না। আপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা গেলেই অপরাধীরা অপরাধ থেকে দূরে থাকবে।

পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বলেন, প্রত্যেকটি হত্যাকন্ডের ঘটনাকে গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। হত্যাকন্ডেগুলো পারিবারিক কলহ, দলীয় কিংবা গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণে ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ দ্রুত তদন্ত, সাক্ষ্যগ্রহণসহ হত্যাকান্ডের বেশিরভাগ রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় এনেছে। এছাড়াও সামাজিক অপরাধ রোধে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন