মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সিলেটের পাথর কোয়ারী খুলে দিন

ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের অবরোধ-ধর্মঘটের হুমকি

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সিলেটে বন্ধ রাখা হয়েছে পাথর কোয়ারীগুলো। এর নেতিবাচক প্রভাবে পাথর সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক জনগোষ্ঠি কর্মহীন। ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটের মুখেও তারা। গ্রাস করেছে অভাবনীয় বেকারত্ম। এর নেপথ্যে রয়েছে দেশের স্বার্থ বিরোধী একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট। তারা উন্নতমানের পাথর রেখে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভের মুদ্রা অপচয় করে নিম্নমানের পাথর আমদানীর নামে মুদ্রা পাচারে লিপ্ত। এরাই সরকারকে ভুল বার্তা দিয়ে সিলেটের পাথর কোয়ারী বন্ধ রেখে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাকে মানবেতর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। 

গণবিরোধী এ অপতৎপরতা রুখে দিতে যে কোন ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গতকাল মঙ্গলবার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পাথর কোয়ারির সন্নিকটে মামার বাজারস্থ পিউলি মাঠে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনসভায় সিলেটের লাখো মানুষের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্র পাথর কোয়ারী সমূহে পরিবেশ সম্মত ভাবে পাথর আহরণের সুযোগ করে দেয়ার দাবিতে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ছাতকসহ এ অঞ্চলের ১০ লাখেরও বেশি জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকা রক্ষার দাবি জানানো হয়। সূত্র জানায়, সিলেটের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি পাথর আহরণ এবং বিপনন হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়ায় এক বছর ধরে সিলেটের উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠী অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টে নিপতিত হয়েছে। জাফলং, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, লোভা, উৎমা, শ্রীপুরসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার যুগ যুগ ধরে পাথর আহরণের মাধ্যমে লাখ মানুষের কর্মসংস্থান পাথর কোয়ারি বন্ধের ফলে সৃষ্ট হয়েছে ভয়াবহ সঙ্কট। অথচ সিলেটের পাথর কোয়ারিতে পাথর আহরণ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বংশ পরম্পরায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আহরিত এ পাথরের আয় বাবদ সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে আসছিল।
এছাড়া আহরিত এ পাথর বিপণনের সাথে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্টোন ক্রাশার, মিল মালিক, পাথর ব্যবসায়ী, ট্রাক-ট্রাক্টর শ্রমিক, বার্জ, কার্গো, নৌকা মালিক শ্রমিক, পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সিলেটের এ পাথরের গুণগত মান উন্নত হওয়ায় দেশের নির্মাণ শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল হিসেবে এ পাথর ব্যবহার হয়ে আসছিল। বুয়েট, শাহজালাল ইউনির্ভাসিটিসহ দেশের সকল প্রকৌশল সংস্থার মান বিবেচনায় এ পাথরের গুণগত মান এশিয়া মহাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ট মনোনীত হওয়ায় নির্মিত অবকাঠামোর মজবুত ও স্থায়ীত্ব সর্বজন স্বীকৃত।
খরস্রোতা প্রবাহিনীর ভাটি অঞ্চলে অবস্থিত এ অঞ্চলে প্রতিবছর উজান থেকে লাখ লাখ টন পাথর নেমে এসে কোয়ারী অঞ্চল পরিপূর্ণ হয় এবং এ পাথরই শ্রমিকেরা উত্তোলন করে দেশের নির্মাণ শিল্প যোগান দিয়ে সমৃদ্ধ করেছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পাথর কোয়ারী সমূহে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ পরিজন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কর্মহীন এ প্রান্তিক জনপদে আজ দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি। পাথর সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজ সর্বস্বান্ত। তারা ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজ দেউলিয়া। সিলেটের পাথর কোয়ারী বন্ধ করে দেয়ায় মানুষের জীবন জীবিকার উপর যে মারাত্মক দুর্বিসহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা বর্ণনাতীত।
একটি বৃহৎ অঞ্চলের ১০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাচীন এ জীবিকা বন্ধ হওয়ায় এর অর্থনৈতিক ক্ষতি হাজার হাজার কোটি টাকা। প্রান্তিক লাখো মানুষের জীবিকা বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি পাথর বিপননের সাথে সম্পৃক্ত ১০ সহস্রাধিক ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপী হয়ে দেনা শোধ করতে না পেরে পলাতক জীবন যাপন করছেন। পাথর পরিবহনে সম্পৃক্ত হাজার হাজার ট্রাক ও ট্রাক্টর মালিক, শ্রমিক রোজগার বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পাথরকে উপজীব্য করে গড়ে ওঠা স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজার ও বিপনী কেন্দ্রগুলোতে পণ্য কেনা-বেচা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজারো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা কঠিন ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন।
এমতাবস্থায় সিলেটের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে রক্ষা এবং এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার স্বার্থে ও দেশের নির্মাণশিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থে এখানকার পাথর কোয়ারী সমূহে পরিবেশ সম্মত ভাবে পাথর আহরণের সুযোগ প্রদান জরুরী। গতকাল অনুষ্ঠিত সভায় সিলেটের ১০ লাখের বেশি পাথর সংশ্লিষ্ট জীবিকা নির্বাহকারী ও তাদের পরিজনদের বাঁচাতে অবিলম্বে পাথর আহরণের সুযোগ প্রদানের দাবি জানানো হয়। ন্যায্য এ দাবি আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে সিলেটে অবরোধ-ধর্মঘটের মত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সভায় হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ সভায় সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে ও সাব্বির আহমদ ফয়েজ এবং গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট জীবিকা নির্বাহকারী ব্যবসায়ী শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. নুরুল আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
abu hasan ২৫ নভেম্বর, ২০২০, ৬:২৪ এএম says : 0
কিছুই বলবো না শুধু একটি কথাই জানা’র প্রয়োজন, সেটা হলো দেশের মুদ্রা পাচারের সাথে কি শুধু সরকারী কর্মচারীরা দায়ী নাকি যে সমস্ত ব্যাবসায়ীরা নিজের দেশের মানুষের অন্য/ভাত বন্ধ করে অন্য দেশের ব্যাবসায়ীদের পকেট ভরিতেছে তারাও মুদ্রা পাচারকারী? জানতে চায়।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন