শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ রোধে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বায়ুতে থাকা অক্সিজেন মানুষসহ সব প্রাণীর বেঁচে থাকার মূল শক্তি। পরিবেশ ও বায়ু দূষণের ফলে বাতাসে ধুলিকণার হার বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে অক্সিজেনের গ্রহণযোগ্য মাত্রা কমে যায়। এর ফলে জনস্বাস্থ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে দেখা যায়। বর্তমানে দেশে কোটি কোটি মানুষের নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার পেছনে বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। চলমান করোনাভাইরাস মহামারিতে বায়ু দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। শীতের আগমনে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় পার্টিকেল মেটার বা সূ² ধুলিকণার হার অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়ে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপ ও অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ বায়ু দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের আদেশ দেন। একটি মানবাধিকার সংস্থার করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারি মাসে হাইকোর্ট এ সব নির্দেশনা জারি করেছিল। গত ১০ মাসেও নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্টরা তেমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এখন আগামী এক মাসের মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ফসিল জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে বনভূমি, জলাভূমি ও ফসলি জমি কমে যাওয়ায় সারাবিশ্বেই বায়ু দূষণসহ পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জলবায়ুর উষ্ণায়ন ও পরিবর্তনের ফলে কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসমস্যা ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুরু থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালনারেবল কান্ট্রির তালিকায় স্থান পাচ্ছে। একই সময়ে বাংলাদেশের বায়ুর মান ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ার বাস্তবতাও ধরা পড়ছে। বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা শহরের নাম প্রথম, দ্বিতীয় স্থানসহ শীর্ষ কয়েকটির মধ্যেই থাকছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের যে পাঁচটি দেশের শতভাগ মানুষ বায়ু দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘দ্য স্টেট অব গ্লােবাল এয়ার রিপোর্ট-২০১৯’র প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া যায়। বায়ু দূষণের কারণে মানুষের মৃত্যু হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম বলে জানা যায়। ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ বায়ু দূষণের কারণে মৃত্যু বরণ করেছে বলে জানা যায়।

বায়ু দূষেণের কারণে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সংক্রমণ, ক্যানসারসহ জটিল সব স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশে মেডিকেল ট্যুরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবে প্রতিবছর শত শত কোটি ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। বায়ু দূষণ দেশের জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি অর্থনীতিকেও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে হাইকোর্ট যে সব নির্দেশনা দিয়েছেন তা কোনো নতুন বিষয় নয়। পরিবেশ ও বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে নগরবিদ, নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবিদরা সব সময় এসব বিষয়ে নজর দেয়ার কথা বলে আসছেন। ঢাকাসহ শহরের উন্নয়ন কাজে মাটি, বালি ও বর্জ্য পরিবহনের গাড়ি ও ট্রাকগুলো যথাযথভাবে ঢেকে রাখা, নির্মাণাধীন ভবন বা উন্নয়ন প্রকল্পের মাটি, বালি, সিমেন্ট, পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা, সড়কে ধুলি উড়ানো বন্ধে নিয়মিত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা, রাস্তা, কালভার্ট ও নির্মাণ কাজে টেন্ডারের শর্ত যথাযথভাবে মেনে চলা, কালো ধোঁয়া নিঃস্বরণের জন্য দায়ী গাড়ি জব্দ করা, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি বন্ধ করা এবং পরিবেশগত ছাড়পত্র ও লাইসেন্স ছাড়া কলকারখানা বন্ধ করার মতো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব দায়িত্ব পালন করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দফতরের সাধারণ দায়িত্ব হলেও তারা তা পালন না করায় এখন আদালতকে নির্দেশনা জারি করতে হচ্ছে। কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য এবং করোনা মহামারির প্রকোপ লাঘবে বায়ু ও পরিবেশ দূষণ বন্ধে সরকারকে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামতসহ মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ সভা আহবান করে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন