শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

আহলে কোরআন : স্বরূপ ও তার জবাব

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

হাদিস না মানলে কোরআন মানা হবে না: রাসুল (সা.)-এর অনুসরণই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে কোরআনের অনুসরণ। কেননা তিনি কোরআনকে কিভাবে অনুসরণ করতে হবে, তা নিজের জীবনে যেমন বাস্তবায়ন করেছেন, অনুরূপ তার যথাযথ শিক্ষা সাহাবায়ে কেরামকেও দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে-‘যে রাসুলের অনুসরণ করবে, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই অনুসরণ করবে।’ (সুরা নিসা : ৮০)। আর তাঁর সুন্নত বা জীবনীর অনুসরণ না করলে কোরআনের অনুসরণ সম্ভব নয়। যদি কোরআনের অনুসরণই যথেষ্ট হতো, তাহলে আলাদাভাবে রাসুল (সা.)-এর অনুসরণের প্রতি তাগিদ দেওয়া হতো না। বরং আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাইলে তাঁর মাগফিরাত কামনা করলে রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ ছাড়া বিকল্প পথ নেই। এরশাদ হচ্ছে-‘বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো, তবে আমার অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের সমুদয় পাপ মার্জনা করবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।’ (সুরা আলে ইমরান : ৩১)। আলাদাভাবে রাসুল (সা.)-এর অনুসরণের দরকার না থাকলে এখানে ‘ইয়া’ (আমার) সর্বনাম দ্বারা বাক্যটিকে উল্লেখ করার দরকার ছিলো না। অতএব কোরআন অনুসরণ করতে চাইলে রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ দরকার। অন্য কথায়- রাসুল (সা.)-এর তথা তাঁর হাদিসের অনুসরণ না করলে আল্লাহর কোরআনের অনুসরণ হবে না, তাঁর ভালোবাসা পাওয়া যাবে না এবং তাঁর মাগফিরাতও লাভ করা যাবে না।
কোরআন থাকতে রাসুল (সা.) কেনো আদেশ-নিষেধ করবেন? তাঁর অনুসরণই বা কেনো করবো? তাহলে কি কোরআন পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ নয়:
কেনো রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ করতে হবে? এর জবাব পূর্বের আয়াতগুলো থেকেই বোঝা যাচ্ছে। বাকি থাকলো কোরআন থাকতে কেনো তিনি আদেশ-নিষেধ করবেন? এর জবাব হচ্ছে, ইসলামকে পরিপূর্ণ করার দায়িত্ব আল্লাহর এবং তিনি তা করেছেনও। তিনি ইসলামের সবকিছু বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আর তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর রাসুল (সা.)-কে। তিনি বলেন-‘হে রাসুল, আপনার কাছে যা নাজিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দিন।’ (সুরা মায়িদা : ৬৭)। সঙ্গে সঙ্গে এই পৌঁছে দেওয়ার সময় যেনো বিশদভাবে তা ব্যাখ্যা করে দেন। তাই আল্লাহতায়ালা বলেন-‘নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে জিকির (কোরআন) নাজিল করেছি, যেনো আপনি বিশদভাবে মানুষের কাছে বর্ণনা করে দেন, যা তাদের কাছে নাজিল করা হয়েছে।’ (সুরা নাহল : ৪৪)। তাঁর এই বর্ণনা দুটি পদ্ধতিতে হয়েছে- একটি মানুষকে সরাসরি কোরআন পাঠ করে শুনিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। যে কোরআন আল্লাহ হজরত জিবরাইল (আ.) কর্তৃক সরাসরি নাজিল করেছেন। এটাকে বলা হয় অহিয়ে মাতলু বা পাঠ্য প্রত্যাদেশ। অর্থাৎ এর ভাব ও ভাষা উভয়টি আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি এসেছে। আরেকটি পদ্ধতি হলো, কোরআনের ব্যাখ্যার মাধ্যমে; অর্থাৎ শব্দ বা বাক্যের ব্যাখ্যা উম্মতকে জানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। যা তিনি পরোক্ষ অহির মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করেছেন। অর্থাৎ কোরআনের সংক্ষেপ ও সাধারণ আয়াতসমূহকে বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণ আয়াতকে সীমাবদ্ধ করেছেন, আবার শর্তযুক্ত আয়াতকে সাধারণ করেছেন, ব্যাপক অর্থবোধক আয়াতকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেছেন, ইত্যাদি। আর তা হয়েছে তাঁর কথা, কাজ ও সমর্থনের মাধ্যমে। যার অপর নাম হাদিস।
রাসুল (সা.) এসব করার অধিকার কিভাবে পেলেন: এই অধিকার আল্লাহতায়ালাই তাঁকে দান করেছেন। যেমনটি সুরা নাহলের ৪৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে তিনি নিজের পক্ষ থেকেও এটা করেননি; পরোক্ষভাবে আল্লাহর কাছে অহি বা নির্দেশনা লাভ করেই তিনি করেছেন। যেমন আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন-‘তিনি নিজের পক্ষ থেকে প্রবৃত্তি তাড়িত হয়ে কোনো কথা বলেন না; যা বলেন, তা অহি; যা তাঁর কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।’ (সুরা নাজম : ৩-৪)। এখানে অহি বলতে যেমন কোরআন উদ্দেশ্য, তেমনি কোরআন বোঝানোর জন্য রাসুল (সা.)-এর ব্যাখ্যাও উদ্দেশ্য।
অহির নিয়ম: আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন-‘কোনো মানুষের জন্য সমীচীন নয়, আল্লাহ তার সঙ্গে কথা বলবেন; কিন্তু (১) অহির মাধ্যমে অথবা (২) পর্দার অন্তরাল থেকে অথবা (৩) তিনি কোনো দূত প্রেরণ করবেন। অতঃপর আল্লাহ যা চান, সে তা তাঁর অনুমতিক্রমে পৌঁছে দেবে।’ (সুরা শুরা : ৫১)। অর্থাৎ আল্লাহ নিজেই অহি করেন। মোটকথা, আল্লাহতায়ালা তিনভাবে নবী-রাসুলদের প্রতি অহি করেন- (১) ইলহাম : রাসুল (সা.)-এর অন্তরে যে বিষয় জাগ্রত হতো, সেটাই ইলহাম। সেটাই পরোক্ষ অহি তথা অহিয়ে গায়রে মাতলু বা অপাঠ্য প্রত্যাদেশ। এটা কোনো ফেরেশতার মাধ্যমে ছিলো না। বিষয়টি যেমন জাগ্রত অবস্থায় হতো, তেমনি স্বপ্নযোগেও হতো। এমতাবস্থায় সাধারণত আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে শব্দ বা বাক্য অবতীর্ণ হয় না, কেবল বিষয়বস্তু অন্তরে জাগ্রত হয়; যা পয়গম্বরগণ নিজের ভাষায় ব্যক্ত করেন। সেটাই হচ্ছে মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় হাদিস বা সুন্নাহ।
(২) পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথা বলা : আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে তুর পাহাড়ে পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথা বলেছেন। আর আমাদের রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে মেরাজের রাতে আরশে আজিমে তাঁর কথোপকথন হয়েছে। আল্লাহতায়ালা দর্শন না দিয়ে পর্দার অন্তরাল থেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং অহি করেছেন। সে সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন