শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সৃষ্টিকে ভালোবাসার শিক্ষা দেয় ইসলাম

জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, নিরাপত্তা ও স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার ইসলাম নিশ্চিত করেছে। ইসলামে সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ নেই। সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসতে শিক্ষা দেয় ইসলাম। চরমপন্থা অবলম্বন ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে গতকাল খুৎবা-পূর্ব বয়ানে সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবন বিধান। ইসলাম কখনো সন্ত্রাস উগ্রবাদ ও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। ইসলামের মূল শিক্ষাই হলো ত্রাশ ভয়-ভীতি জুলুম ও অন্যায় অবিচারের অপনোদন করা। মানুষকে জ্ঞান প্রজ্ঞা সংযমের শিক্ষা ও আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে পরিপূর্ণ মানুষ তথা আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) আনুগত্যে আত্মসমর্পণকারী প্রকৃত মুসলিমে পরিণত করা। সেই সাথে অন্যান্য জাতি, ধর্ম ও বোধবিশ্বাসের মানুষের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, নিরাপত্তা ও স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার ইসলাম নিশ্চিত করেছে।

পেশ ইমাম বলেন, ইসলামে সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ নেই। সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসতে শিক্ষা দেয় ইসলাম। চরমপন্থা অবলম্বন ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার সম্পর্ণ বিরোধী। ইমাম বলেন, ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। এজন্য বিশ্ব নবী (সা.) মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ‘তোমরা সরল পন্থা অবলম্বন করো, চরমপন্থা বর্জন করো, সুসংবাদ দাও এবং ঘৃণা সৃষ্টি করো না’ (বুখারী)। প্রিয়নবী (সা.) আরো বলছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার কথা বার্তা ও কার্য কলাপে অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকেন’ (আবু দাউদ)। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আহলে কিতাব! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ সম্পর্কে নিতান্ত সত্যি ছাড়া ভিন্ন কিছু বলো না। ‘মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা অনুযায়ী জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন!

মিরপুর বাউনিয়াবাদ ই-ব্লক বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, ইসলামী শরিয়তে মূর্তি বা প্রাণীর ভাস্কর্যের মাঝে বিধানগত কোন পার্থক্য নেই। শরীয়তে প্রাণীর মূর্তি কিংবা ভাস্কর্য নির্মাণ কবিরা গুনাহ ও হারাম। সূরা হজ্জের ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মূর্তি ও ভাস্কর্যকে নোংরা ও অপবিত্র ঘোষণা করে তা পরিত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপ সূরা নূহের ২৩ নং আয়াতে ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগুস ও নাসর নামক ভাস্কর্য প্রীতিকে কাফিরদের বৈশিষ্ট্য বলেও তিনি অভিহিত করেছেন।

সহিহ বুখারীর ৭৫৫৭ নং হাদিসে রাসুল (সা.) ভাস্কর্য নির্মাণকারীকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে উল্লেখ করে উহা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং কোন মুসলমান মূর্তি বা কোন প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ কিংবা উহাকে সমর্থন করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, প্রাণীর ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয় বলে কতিপয় নাস্তিক ও ইসলাম সম্পর্কে অনভিজ্ঞ কিছু ব্যক্তি ইসলামের শাশ্বত বিধান উপেক্ষা করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। তাই তিনি সকলকে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য উদাত্ত আহবান জানান।

রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সত্যবাদী ব্যবসায়ী ব্যতীত অধিকাংশ ব্যবসায়ীকে কিয়ামতের দিন গুনাগার অবস্থায় উঠানো হবে (তিরমিজি শরীফ)।
তিনি আরো বলেন, মনে রাখবেন মিথ্যা সবসময় মিথ্যাই। মিথ্যা সবসময় গুনাহ ও পাপের কাজ। কাজেই ব্যবসায়ী ভাইদের উচিত নিজেদের মুখে লাগাম লাগানো। যদি তারা এক আল্লাহর ওপর ভরসা করে সততা ও দ্বীনদারীর সাথে রোজগার করেন তাহলে দুনিয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে অগণিত বরকত দান করবেন এবং পরকালেও তাদের হাশর করাবেন নবী-রাসুলগণ, সত্যবাদী ও শাহাদত বরণকারী বান্দাদের সঙ্গে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে মিথ্যা পরিহার করে সত্যের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করার তৌফিক দান করুন। আমিন!
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন, সফল হয় সেই ব্যক্তি, যে তার নফসকে পরিশুদ্ধ করে এবং ব্যর্থ হয় সেই ব্যক্তি যে তার নফসকে কলুষিত করে। (সুরা আশ-শামস ৯-১০) তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন শায়েখ মুহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)। গতকাল ছিল তাঁর ওফাত দিবস। এ দিনকে বলা হয় ফাতেহায়ে ইয়াজদহম। এ দিনটি মুসলমানদের কাছে খুবই স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) জীবনাদর্শ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ।

ঢাকার চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার খুৎবাপূর্ব বক্তব্যে বলেছন, পবিত্র কুরআনের সূরা হুদের ১১৩ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন ‘তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকবে না, নতুবা অগ্নি তোমাদেরকেও স্পর্শ করবে। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই, অতএব তোমরা কোথাও সাহায্য পাবে না’। এ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা যারা অমান্য করবে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘য়ালা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন যে, তাহলে তাদের আগুন তোমাদেরকেও স্পর্শ করবে এবং সে আগুনে তোমরাও পুড়ে মরবে। হযরত ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেছেন, ‘জালেমদের প্রতি ঝুঁকবে না’ -এর অর্থ হলো তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে না এবং তাদের কথামতো চলবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন