মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রির্পোটার : | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

‘কিশোর গ্যাং’ কুষ্টিয়া শহরের এখন এক আতঙ্ক। একের পর এক শহরে নিজেদের দলের ক্ষমতা ও দাপট দেখাতে প্রায় মরিয়া হয়ে উঠছে তারা। এই সব কিশোর গ্যাংদের সাথে জড়িয়ে কিছু কিশোরীরাও বিপথগামী হচ্ছে। বর্তমানে সদস্যরা নিজেদের মধ্যে মোবাইল ফোন ও ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে। সেসঙ্গে স্মার্টফোনে গেমস এর মাধ্যমেও তারা গ্রুপিং সৃষ্টি করে দলীয় সদস্য বৃদ্ধি করছে। এতে তাদের ভবিষ্যত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। সেইসঙ্গে স¤প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এসব কিশোর গ্যাংগুলো কতটা বিস্তার লাভ করেছে।
কিশোর গ্যাং, নেশা এবং চুরি-ডাকাতি সব একই সূত্রে গাঁথা। সন্ধ্যার পর থেকে এসব অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। কুষ্টিয়ার শেখ রাসেল হরিপুর-কুষ্টিয়া সংযোগ সেতু, শহর তলীর বটতৈল বাইপাস, চৌড়হাসসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগম স্থানগুলোতে একাধিক কিশোর গ্যাং তাদের সদস্যদের নিয়ে বেপরোয়া মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে জানান দেয় নিজেদের। এভাবেই তারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এতে দিন দিন আতঙ্কিত হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি কুষ্টিয়া শহরে কিশোর গ্যাং এর মধ্যে আধিপত্ত্য বিস্তার ও ফেসবুকে কে কত শক্তিশালী এ নিয়ে কুষ্টিয়া কালেক্টর স্কুলের লাবিব আলমাস নামে ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে মারধর করে অপর গ্যাং এর সদস্যরা। মারধরের প্রমাণ এবং তাদের শক্তি জাহির করতে মারধরের ঘটনাটি ভিডিও করে ফেসবুক গ্রুপে ছেড়ে দেয়। ভিডিওতে তাদের কথপোকথনেও উঠে আসে কুষ্টিয়ার কিশোর গ্যাং দের বিচরণের দৃশ্য। চলতি মাসে কুষ্টিয়ার আলোচিত কিশোর গ্যাং এস কে সজিব, সিয়াম ও নিবিরদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে প্রকাশ্যে ইসলামীয়া কলেজ গেটে ছুরিকাঘাত করে কুষ্টিয়া মজমপুর এলাকার মোহাম্মদ শেখের ছেলে হৃদয় হোসেনকে। হৃদয় বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং ‘নিবির ও সিয়াম’ গ্রæপের সিয়াম (১৭), ইফতি (১৬) ও অভি (১৬) নামের তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শহরের ছাত্রাবাসে থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের মেসে চুরি এখন নিয়মিত ঘটনা, আমরা বাইরে থেকে পড়াশোনা করতে এসেছি চোর দেখতে পেলেও ভয়ে কিছু বলতে পারি না, কারণ ওরা বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
গোয়েন্দা শাখার একটি সূত্রমতে, কুষ্টিয়া শহর জুড়ে প্রায় ১১টি কিশোর গ্যাং রয়েছে। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। কুষ্টিয়ায় বর্তমানে ‘ব্যাড বয়েজ’, ‘০০৭’, ‘বিএসবি গ্রুপ’সহ বড় চারটি গ্রুপ রয়েছে, যাদের সদস্য সংখ্যা অর্ধশত। শহরের থানাপাড়া, কালিশংকরপুর, কোর্টপাড়া, কুঠিপাড়ায় বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং তাদের নানা অপকর্ম চালাচ্ছে। এগুলো বেশিরভাগই কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দাপটে চলে।
কুষ্টিয়ার হরিপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, কিশোর গ্যাং ইদানিং খুবই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তাদের ক্ষমতা ও লোকবল দেখাতে শেখ রাসেল হরিপুর-কুষ্টিয়া সংযোগ সেতুর উপরে দলে দলে মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। সেইসঙ্গে তারা নদীর ধারে বসায় মাদকের আসর। কুষ্টিয়ার শিশু অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বরত প্রবেশন অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিভাবকদের নজরদারির অভাবে অধিকাংশ কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কুষ্টিয়ায় বর্তমানে সংঘটিত অন্তত ৪০টি শিশু-কিশোর অপরাধের ঘটনায় জড়িত শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করছি।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতা কারশেদ আলম জানান, দিন দিন অভিভাবকদের দায়িত্বে অবহেলা ও ব্যস্ততার কারণে ঠিকমতো বাচ্চাদের সময় না দেওয়ার ফলে অধিকাংশ কিশোররা বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। আমাদের উচিত ছেলে মেয়েরা কখন, কোথায়, যাচ্ছে কাদের সঙ্গে মিশছে, কি করছে এগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখা। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে অনেকটা অভিভাবকদের উদাসিনতা দায়ী। পুলিশের কাজ অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা। কিন্তু কিশোরদের অপরাধী তৈরি হয়ে ওঠার আগেই পারিবারিকভাবে তা দমন করা যায়।
কিশোরদের প্রতি সবাইকে সহনশীল হতে হবে। শিশু-কিশোরদের প্রতি অভিভাবকদের দায়িত্ব বেশি। স্কুলগামী শিশু ও কিশোরদের দিকে অভিভাবকরা যথাযথ নজর দিলে কিশোর অপরাধ দমন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন