শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এক লাখ লোকের বিদ্যুৎ-পানি-পয়ঃনিষ্কাশন প্রস্তুত

রোহিঙ্গাদের প্রথম দল ভাসান চরে যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন ভাসান চরে নেওয়ার পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত হয়েছে। সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা গতকাল সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে ভাসানচর পরিদর্শন করে এসেছি। আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি দলটি ভাসান চরে স্থানান্তরের যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান করছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার।
তবে সাগরের ভেতরে জনমানবহীন ওই চরে আশ্রয় নিতে রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে এতদিন তাদের সেখানে স্থানান্তর সম্ভব হয়নি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন বিদেশি কিছু এনজিও ও বিদেশি কিছু সংস্থার বাধার কারণে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিতে বিলম্ব হচ্ছে।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নৌকায় করে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে এরই মধ্যে ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে দেখার জন্য ভাসান চরে পাঠানো হয়। তারা ফেরার পর তাদের কথা শুনে রোহিঙ্গাদের একাংশ ভাসান চরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলে জানানো হয় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক, তাদের তালিকা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত প্রক্রিয়াসম্পন্ন করা হয়েছে। তবে প্রথম দফায় কতজন রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে স্থানান্তর করা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, ১৩ হাজার একর আয়তনের ভাসান চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ভাসান চরে এক লাখ রোহিঙ্গার থাকা আর রান্নার ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি আর পয়ঃনিষ্কাশন, খেলার মাঠ আর ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহের সুযোগও তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তি রয়েছে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরে। সাগরের মাঝে বিচ্ছিন্ন ওই দ্বীপে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে রোহিঙ্গারা কতটা নিরাপত্তা পাবে, তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ। তবে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক কমডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলছেন, গত ১৭৬ বছরের মধ্যে কোনো ঘূর্ণিঝড় এ দ্বীপের ওপর দিয়ে অতিক্রম করেনি। সবচেয়ে কাছে যেটি এসেছে, সেটাও আসলে ৩৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শরণার্থীদের তুলনামূলক ভালোভাবে থাকার জন্য যে সুযোগ-সুবিধাগুলো ভাসান চরে রাখা হয়েছে, সেগুলো কক্সবাজারের ক্যাম্পে নেই।
সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, কক্সবাজারের ওই ক্যাম্পগুলোতে মোটামুটি সাড়ে ছয় হাজার একর জমিতে এখন আট লাখ ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গার বসবাস। প্রতি বর্গকিলোমিটারে কোনো কোনো অংশে ৩০-৪০ হাজার মানুষকেও থাকতে হচ্ছে সেখানে। এ ঘনবসতির মধ্যে তাদের যেমন মানবেতন জীবনযাপন করতে হচ্ছে, তেমনি স্থানীয়ভাবে নানা সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে।
গত কয়েক দশকে মিয়ানমারে দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়ে ছিল কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনের গ্রামে গ্রামে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ শুরু করলে বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।
উল্লেখ শরণার্থীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হলেও এখনও তা শুরু হয়নি। মূলত মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে কিনা এ অনিশ্চয়তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন