শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

অনাকাঙ্খিত ও অপ্রয়োজনীয় শর্তে আটকে গেছে বরিশাল পর্যটন মোটেল ও টুরিজম ট্রেনিং সেন্টার

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০১ পিএম

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর রহস্যের জালে আটকে আছে ‘বরিশাল পর্যটন মোটেল ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট এন্ড টুরিজম ট্রেনিং সেন্টার’ প্রকল্পটি। অথচ ১৫৩ কোটি টাকা ব্যায়সাপেক্ষ এ প্রকল্পের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে লীজকৃত ১ একর জমি হস্তান্তর হয়েছে আরো প্রায় ৪৭ মাস আগে। এসংক্রান্ত ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ পর্যটন মন্ত্রনালয় থেকে প্রায় একবছর আগে পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল হয়েছে। কিন্তু এ লক্ষে প্রস্তুতকৃত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনের ‘প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি-পিইসি’র সভায় উপস্থাপনের পরেই এক অনাকাঙ্খিত ও অপ্রয়োজনীয় শর্ত আরোপ করে তা অর্থ মন্ত্রনালয়ে প্রেরনের পরে প্রকল্পটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বরিশাল মহনগরীর পাশে প্রবাহমান কির্তনখোলা নদী তীরে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিত্যক্ত মেরিন ওয়ার্কসপের এক একর জমি ২০১৭-এর ১ জানুয়ারী ৩০ বছরের জন্য ইজারা গ্রহনের পরে পর্যটন করপোরেশন নিজস্ব তহবিল থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে লীজমানিও পরিশোধ করছে। পর্যটন করপোরেশনের মোটেল নির্মানের জন্য জমি ইজারা প্রদানের বিষয়টি খোদ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও দিক নির্দেশনাতেই সম্পন্ন হয়। ডিপিপি অনুযায়ী বরিশালে মোটেল ও টুরিজম ট্রেনিং সেন্টারটির কাজ গত জানুয়ারী থেকে শুরু হয়ে ২০২২-এর জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু গত ২০ জানুয়ারী পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি’র সভায় প্রকল্প-প্রস্তাবনাটি একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদনে প্রেরন-পূর্ব মূল্যায়ন সভায় ‘অর্থ মন্ত্রনালয় প্রকল্পটির জন্য তহবিল সংস্থানে সম্মত আছে’ মর্মে সম্মতি পত্র প্রদানের শর্ত আরোপ করা হয়। দেশে প্রতিবছর যে বিপুল সংখ্যক প্রকল্প অনুমোদিত হচ্ছে সেখানে এধরনের শর্ত খুবই বিরল বরে জানা গেছে। গত ফেব্রুয়ারীর প্রথমভাগে পরিকল্পনা কমিশন থেকে ডিপিপি’টি অর্থ মন্ত্রনালয়ে প্রেরনের পরে বিষয়টি নিয়ে আর কোন অগ্রগতি হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে অর্থ মন্ত্রনালয়ের মতামতের জন্য ডিপিপি’টি অর্থ মন্ত্রনালয়ে প্রেরনেরও প্রায় দু মাস পরে দেশে করেনা সংকট শুরু হয়। কিন্তু প্রথম দিকে প্রকল্প-প্রস্তাবটি নিয়ে অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে কোন ধরনের পদক্ষেপ না থাকলেও পরবর্তিকালে করোনা মহামারীর অজুহাতে আর বিষয়টি নিয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে না। এব্যাপারে পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারারম্যান রাম চন্দ্র দাশ-এর সাথে টেলিফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমরা বরিশালের মোটেল ও ট্রেনিং সেন্টার প্রকল্পটি অনুমোদনের ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি। করোনা সংকটের কারনে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে জানিয়ে এ সংক্রান্ত ডিপিপি অনুমোদনের ব্যপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে নাম প্রকাশনা না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রনালয়ের একাধীক সূত্রের মতে ‘কোন প্রকল্পে তহবিল সংস্থানে অর্থ মন্ত্রনালয়ের প্রাক-অনুমদনের খুব একটা নজির নেই। আর যেখানে সরকারী একটি সংস্থার জমি লীজ নিয়ে আরেকটি সংস্থা প্রকল্প বাস্তবান করবে, সে ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন তড়ান্বিত করাই উচিত ছিল’ বলেও মনে করছে দায়িত্বশীল মহল।
বরিশালই একমাত্র বিভাগীয় সদর যেখানে এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যটন প্রতিষ্ঠানের কোন আবাসন সুবিধা নেই। নতুন এসব অবকাঠামো নির্মিত হলে শুধু বরিশাল মহানগরী নয় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন সুবিধাই সম্প্রসারিত হবে। এমনকি প্রস্তাবিত এ পর্যটন মোটেল কুয়াকাটা সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ভ্রমনে আসা পর্যটকদের জন্য একটি ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ হিসেবেও ব্যবহ্রত হবে বলে মনে করছেন পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বশীল মহল। একই সাথে ঢাকার বাইরে বরিশালে একাটি ‘হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম ট্রেনিং সেন্টার’ স্থাপিত হলে দেশÑবিদেশে বিপুল চাহিদার এ ধরনের দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা সম্ভব হবে। উপকৃত হবে দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষিত বেকার তরুন সমাজ। কারন এ অঞ্চলের তরুনদের অনেকের পক্ষেই ঢাকায় গিয়ে প্রশিক্ষন গ্রহনের সামর্থ নেই। পাশাপাশি ঢাকায় একটিমাত্র ট্রেনিং সেন্টার থাকায় সেখানে ভর্তি হওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার।
তবে বিআইডব্লিুটিএ’র সাথে জমি লীজ চূক্তি সম্পাদনের প্রায় ৪ বছর পরেও পর্যটন মন্ত্রনালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খুব বেশীদুর এগুতে না পাড়ায় লোকাশানের বোঝা ভারী হচ্ছে। প্রস্তাবিত ৮তলা মোটেল ভবনটিতে ৮০টি কক্ষ থাকবে। একাধীক লিফট সম্বলিত এ মোটেলে দুটি এক্সিকিউটিভ স্যুট, ৩৮টি দৈত শয্যার কক্ষ ও ৪০টি তিন শয্যার কক্ষ থাকবে। এছাড়াও অত্যাধুনিক মানসম্মত রেষ্ট্রুরেন্ট, পুল ক্যাফে, সুইমিং পুল, জিম ও স্পা সুবিধা থাকবে এ মোটেলটিতে। ভবিষ্যতে এখানে রিভার ক্রুজ-এর ব্যবস্থা সম্বলিত আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এখান থেকে পর্যটকগন মোটেলটির পার্শ্ববর্তি কীর্তনখোলা নদীতে নৌ-বিহারও করতে পারবেন। পাশাপাশি এ মোটেলকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটা সহ দক্ষিণাঞ্চলে প্যাকেজ টুরেরও ব্যবস্থা করা হবে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে বলেও মনে করছেন টুরিজম অপারেটরগন।
বরিশালের এ পর্যটন মোটেলে সংযূক্ত ট্রেনিং সেন্টারটিতে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন করে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম-এর ওপর প্রশিক্ষন গ্রহন করতে পারবেন। সাড়ে ৩ মাসের এ প্রশিক্ষন শেষে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সার্টিফেকেট প্রদান করার কথা রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন