অবশেষে আন্দোলনরত মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সচিবালয়ের কর্মচারীদের মতো বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের আন্দোলনরত কর্মচারীদেরও পদ-পদবি পরিবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে মাঠ প্রশাসনের ১১ থেকে ১৬ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে গত সোমবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপিত এ প্রস্তাব তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে কর্মরত ১১ থেকে ১৬ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান পদবি পরিবর্তন করে সচিবালয়ের মতো পদ-পদবি করার জন্য আন্দোলন করে আসছেন। দীর্ঘদিনে তাদের এই দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন জানিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়- কর্মচারীরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করায় মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমসহ জনসেবা ব্যাপকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এ বিষয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।
এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর এই অনুশাসন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানানোর জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। বছরের পর বছর চাকরি করেও মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীরা পদোন্নতি ও বেতন গ্রেড পরিবর্তন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন।
জানা গেছে, সারাদেশের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (ডিসি) অফিস, ইউএনও অফিস এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে কর্মরত ১১ থেকে ১৬ (দ্বিতীয় ও তৃতীয়) গ্রেডের কর্মচারীর পদ-পদবি সচিবালয়ের আদলে পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিনের। একইসঙ্গে বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন। বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস) ব্যানারে ২০০১ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয় নিয়ে একাধিক বার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির মাধ্যমে আশ্বাস দিলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। তাদের মতে, পদ-পদবি ও বেতন স্কেল সমন্বয় সংক্রান্ত প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের ১৯ জুন অনুমোদন দেন। এরপর তা বাস্তবায়নের জন্য ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। একই বছরের ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসিদের মুক্ত আলোচনায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে ২০১৪ সালের ১৭ জুন চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২০১৮ সালে ২৩ এপ্রিল প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
একই বছরে ডিসি সম্মেলনের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন গ্রেড অনুযায়ী প্রতিটি পদের নাম পরিবর্তন, অথবা মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ৩য় শ্রেণির কর্মচারীদেরকে সচিবালয়ের কর্মচারীদের ন্যায় পদোন্নতির বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কার্যবিবরণীতে স্বল্পমেয়াদি ১নং ক্রমিকে ও মধ্যমেয়াদি ১নং ক্রমিকে লিপিবদ্ধ করা হয়, যা বাস্তবায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. আকবর হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সচিবালয়সহ অন্যান্য দফতর ও অধিদফতরে কর্মচারীরা পদোন্নতি পেলেও মাঠ প্রশাসনে কর্মরত অধিকাংশ কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে চলে যাচ্ছেন। দাবি তুলে ধরে তারা দীর্ঘদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আবেদন করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর কর্মবিরতি পালনের পর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী তাদের ৫ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করার কথা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন