শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চাল নিয়ে চিন্তিত কৃষক

পর্যায়ক্রমে ৩ লাখ মেট্রিক টন আমদানির সিদ্ধান্ত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

আইনী বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও চাল সরবরাহে স্থানীয় মিলারদের অব্যাহত চাল সরবরাহ করতে প্রত্যাখ্যান করায় সরকার চাল আমদানী শুরু করেছে। যখন দেশে আমন ধান কাটার সময় হয়ে আসছে, কৃষকরা তা ঘরে তুলতে প্রস্তুত এবং তারা অভিযোগ করে আসছেন ধানের দাম কম, এমনকি তাদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছে না। তখন এই ডিসেম্বরে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের দরিদ্র কৃষকরা যখন খাদ্য সরবরাহ চেইন, দুনীতি এবং দুর্বল ক্রয় প্রক্রিয়ার কারণে তাদের বিনিয়োগ হারাচ্ছে তখন চাল আমদানি করার কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না অর্থনীতিবদরাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেসর রাশেদ আল মাহমুদ তীতুমির বলেন, যদিও সরকারি খাদ্য মজুদ হ্রাস না করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারপরও কৃষকরা আমন ধানের কম মূল্য পেতে পারে। সরকারের এই পদক্ষেপটি কেবল ত্রুটিপূর্ণই নয়, এই সিদ্ধান্তের ফলে একটি বিশেষ মহলই কেবল উপকৃত হবে। একই রকম কথা বলেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রাক্তন প্রফেসর আবদুল বায়েস। তিনি বলেন, একদিকে সরকারের আন্তর্জাতিক বাজারকে প্রাধান্য দেয়া অন্যদিকে মিলারা যথাযথ্য মূল্য না দেয়ায় কৃষকদেরকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, দেশীয় মিলারা চাইছে সরকার এখন বিদেশ থেকে চাল আমদানি করুক। এতে করে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম মূলে ধান কিনতে পারবে এবং একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিমাণ তারা স্টক করতে পারে।

গত সেপ্টেম্বরে বোরো উৎপাদনের সময় যখন দেশে ২০ মিলিয়ন টনের বাম্বার ফল হয়েছিল তখন সরকার মাত্র ১ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন টন ধান কিনতে ব্যর্থ হয়েছিল। এটিকে কাজে লাগিয়েছিল মিল মালিকরা। একই কাজ এবারও তারা করতে যাচ্ছে। সরকার মাত্র দশমিক ৯৪ মিলিয়ন টন বোরো ধান কিনতে সক্ষম হয়েছিল। আর বেশিরভাগ বোরো ধান মজুদ করেছিল মিলাররা।

বোরা চাল ক্রয় এবং সরবরাহে প্রত্যাখানের পর মিলারদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সরকার।
সরকার মিলারদের কাছ থেকে ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬ দশমিক ৫ লাখ টন আমন ধান কেনার পরিকল্পনা করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে অল্প কিছু সংখ্যক মিলার সম্মতি জানিয়ে মাত্র ৭২ হাজার টন চাল সরবরাহের কথা জানিয়েছে। তারা ৪১ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহের কথা জানিয়েছে। সরকার আমন চালের এই মূল্য এক মাস আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছিল। এবছর বন্যাসহ নানা কারণে সরকারের প্রত্যাশা গতবছরের তুলনায় এবার ১০ ভাগ কম অর্থ্যাৎ ১৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন টন ধান উৎপদান হবে।

যদিও বাংলাদেশ অটো মেজর এন্ড হাস্কিং মিল মালিক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম লিয়াকত আলী মনে করেন সরকার চাল আমদানী করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক। তিনি বলেন, মিলাররা সরকারকে তাদের ক্রয় টার্গেটের ২০ শতাংশ সরবরাহ করবে। তিনি সকলকে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

কিন্তু কৃষকদের অর্ধেকই দরিদ্র। তাদের বেশিরভাগেরই স্বল্প সংখ্যক জমি এবং অনেকেরই উৎপাদনের পর উৎপাদিত ধান মজুদ করার জায়গা নেই।ধান কাটার এক মাসের মধ্যেই এসব কৃষক তাদের ৬০ ভাগ শষ্য বিক্রি করতে বাধ্য। এছাড়া অর্থনৈতিক কারণেও অনেকেই দ্রæততম সময়ে তাদের শস্য বিক্রি করে দেবেন। কারণ এবছর একাধিকবার বন্যা, মার্চ থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কৃষকরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক চাপে ও সঙ্কটে রয়েছে। এজন্য তারা ধান উৎপাদানের পর তা মজুদ করার চেয়ে তা দ্রæততম সময়ে বাজারে বিক্রি করে দিতে বাধ্য থাকবেন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে কৃষকরা বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের, যেমন : কুড়িগ্রামের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান আনুমানিক ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবে।

কৃষি বিভাগের হিসেব অনুযায়ি এবছর কৃষকদের ধান উৎপাদনের প্রতি কেজিতে ২৭ টাকারও বেশি উৎপাদন খরচ হয়েছে। কারণ এবছর বন্যা কৃষকদের ধান চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি অর্থনীতিবিদ আবদুর রউফ সরকার বলেন, চাল আমদানীর কারণে এবার মার্কেট প্রাইস ২ টাকা ৫০ পয়সা প্রতি কেজিতে কমে যাবে। একারণে সরকারের উচিত কৃষকের কাছ থেকে আরও বেশি পরিমাণে ধান কেনা। তিনি বলেন, ১ লাখ টনের বেশি চাল আমদানী করা সরকারের উচিত হবে না। যদিও খাদ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী জানুয়ারির মধ্যে ৩ লাখ টন চাল আমদানী করার। খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ক্রয় কমিটির কাছে ৫০ হাজার টন চাল আমদানী করতে আন্তর্জাতিক বিডার নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছি। তিনি বলেন, তারা প্রতি টন চাল আমদানীর ক্ষেত্রে ৪১৭ ডলার প্রস্তাব করেছি। এতে প্রতি কেজি চালের মূল্য পড়বে ৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। প্রতি টন সিদ্ধ চালের বাজার দর হচ্ছে ভারত থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে ৩৬৮ ডলার এবং ৪৮৫ ডলারের মধ্যে। তবে কুড়িগ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান ধানের দাম কমার খবরে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, যদি প্রতি মন ধান ৯৬০ টাকার কমে বিক্রি করতে হয় তাহলে আমরা বাঁচবো কিভাবে। এর কমে বিক্রি করতে হলে তো আমাদের উৎপাদন খরই উঠবে না।

এদিকে কৃষি অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন যে, সরকার যেনো সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে তাদের উৎপাদিত ধান ক্রয় করে। কিন্তু প্রতিবারই সরকার এই পরামর্শ উপেক্ষা করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার পরিবর্তে মিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করে।

চাল আমদানির খবরে কৃষক দুশ্চিন্তায়
যশোর ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা জানান, চাল আমদানির খবরে যশোর ও খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে। মঙ্গলবার গ্রাম মাঠে কর্মরত কয়েকজন কৃষক বললেন, চাল আমদানি হলে বর্তমানে আমন ধানের যে দাম পাচ্ছি, তা কমে যাবে। যশোরের ডাকাতিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নানের কথা, বহুবছর পর এবার প্রতিমণ মোটা ধান ১০৫০ টাকা ও চিকন ধান ১২৩০টাকা বিক্রি করতে পেরেছি। এখন শুনছি চাল আমদানি হবে, স্বাভাবিকভাবেই দাম কমে যাবে। তাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

যশোর বড় বাজারের চাল বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বললেন, এই সময় চাল আমদানি হলে কৃষকরা দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলার অতিরিক্ত পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা জানান, বাম্পার ফলনের কারণে এই অঞ্চলে প্রায় ১৪লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হচ্ছে। খাদ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, চাল ক্রয়ের চুক্তি আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত চলবে, আশা করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান ও চাল ক্রয় হবে। খাদ্য গুদামগুলোতেও পর্যাপ্ত চাল মজুত আছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে, এই মুহূর্তে চাল আমদানি হবে অযৌক্তিক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (17)
Yeasin Ahmed ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৭ এএম says : 0
It's a wrong decision
Total Reply(0)
নজরুল ইসলাম ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৮ এএম says : 0
কৃষকদের বিষয়টি সরকারের মাথায় রাখা খুবই জরুরি
Total Reply(0)
কৌশিক সরকার ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
চাল আমদানির সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী
Total Reply(0)
সাদ্দাম ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
ধানের উৎপাদন খরচের সাথে সঙ্গতি রেখে মিলারদের কাছ থেকে যথযথ মূল্য পাচ্ছে না কৃষক। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের কৃষকরা এহেন বাস্তবতার মুখোমুখী। ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি ফোটে না। ক্রমাগত লোকসান দিতে দিতে অনেক কৃষক ধানচাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এটা অনেক বড় হুমকি।
Total Reply(0)
তুষার ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
যেখানে শিল্পখাতের বিভিন্ন সেক্টরে রফতানি খাতে সরকার শত শত কোটি টাকা প্রণোদনা দিচ্ছে, সেখানে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার অগ্রসৈনিক কৃষকরা লোকসান দিতে দিতে নি:স্ব হয়ে গেলেও ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না।
Total Reply(0)
টুটুল ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
মধ্যস্বত্বভোগীদের সুবিধা করে দিতে ভরা মওসুমে চাল আমদানির সুযোগ অবারিত রেখে ধানের মূল্যে ধস নামিয়ে কৃষকদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
Total Reply(0)
অমিত ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৩ এএম says : 0
মিলারদের কাছ থেকে নয়, ধান কিনতে হবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে।
Total Reply(0)
জসিম ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৩ এএম says : 0
আমদানিকারক, মিলার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থে নয়, দেশের কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থেই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
Total Reply(0)
তাজউদ্দীন আহমদ ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৩ এএম says : 0
সরকারি ধান-চাল ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
Total Reply(0)
Robel Sarker ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৮:১৫ এএম says : 0
সরকার কৃষকের কথা চিন্তা করে চাউল আমদানি বন্ধ করুক। আমি একজন মিলার এখন চাউল বেচাকেনা খুব কম।চাউল আমদানি হলে কৃষকের অনেক লোকসান হবে।।।।।
Total Reply(0)
Robel Sarker ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৮:১৬ এএম says : 0
সরকার কৃষকের কথা চিন্তা করে চাউল আমদানি বন্ধ করুক। আমি একজন মিলার এখন চাউল বেচাকেনা খুব কম।চাউল আমদানি হলে কৃষকের অনেক লোকসান হবে।।।।।
Total Reply(0)
dulal mia ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:৫৬ এএম says : 0
সরকার কৃষকের কথা চিন্তা করে চাউল আমদানি বন্ধ করুক।
Total Reply(0)
dulal mia ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:৫৭ এএম says : 0
সরকার কৃষকের কথা চিন্তা করে চাউল আমদানি বন্ধ করুক।
Total Reply(0)
Jack Ali ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:২৯ পিএম says : 0
government is inhuman they don't have have any humanity as such they are oppressing us in every sphere in our life. After liberation if our country ruled by the Law of Allah then our country would more developed than China..
Total Reply(0)
Koushik mondal ৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:২৪ পিএম says : 0
সরকারের উচিত সকল ধান বিক্রয় এর বাজারমূল্য তদারকি করা,প্রতেক বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃষকদের ঠকাছে।
Total Reply(0)
সুজিত ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:৩৭ পিএম says : 0
এই সমায় যদি চাউলের দাম কমে যায়, তাহলে আমরা আমন চষিরা, ধান চাষ করবার খরচটাই উটবে না।আমি আকুল আবেদন জানাই চালের দাম না কমানর।
Total Reply(0)
সুজিত ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:৩৭ পিএম says : 0
এই সমায় যদি চাউলের দাম কমে যায়, তাহলে আমরা আমন চষিরা, ধান চাষ করবার খরচটাই উটবে না।আমি আকুল আবেদন জানাই চালের দাম না কমানর।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন