বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর আদায়ে আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি

গত অর্থ বছরে সোয়া ৫শ কোটি টাকার কর আদায়

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:০৪ পিএম

করোনা সংকটের মধ্যেও দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় সোয়া ৫শ কোটি টাকারও বেশী আয়কর আদায় হয়েছে। যা পূর্ববর্তী ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা বেশী। চলতি অর্থ বছরে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৬৯৫ কোটি টাকা। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পৌনে ২শ কোটি টাকার মত কর আদায় হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া নতুন অর্থ বছরে সরকার ঘোষিত অপদ্রর্শিত অর্থ, বাড়ী ও সম্পদের ওপর ১০% কর প্রদান পূর্বক বৈধ করার সুযোগ গ্রহন করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১শ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছ থেকেও প্রায় ৩ কোটি টাকার কর আদায় সম্ভব হয়েছে।

আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পরা এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি ব্যবস্থা। সেখান থেকে সামাজিক ব্যবসা সহ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ক্রমে সচল হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি। তবে করোনা মহামারীতে গত অর্থ বছরের শেষ ৩টি মাস সব ধরনের ব্যবসা-বানিজ্যে স্থবিরতা দক্ষিণাঞ্চালের আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থায় চরম বিরূপ প্রভাব ফেলে। যা এখনো অনেক ক্ষেত্রে অব্যাহত রয়েছে। বাংলা নববর্ষ কেন্দ্রীক বকেয়া আদায় ছাড়াও দুটি ঈদে এ অঞ্চলের বানিজ্যিক কর্মকান্ড ছিল শূণ্যের কোঠায়। শারদীয়া দূর্র্গা পুজাতেও বানিজ্যক কর্র্মকান্ড ছিল অনেকটাই স্থবির। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র ও কয়েকটি মাঝারী শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক ও নৌ পরিবহন ব্যবসায়ও ধশ নেমেছে।

এরপরেও গত অথর্ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর রিটার্ন দাখিল, নতুন করদাতা তালিকাভ’ক্ত সহ কর আদায়ে প্রবৃদ্ধিকে আশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেছেন দায়িত্বশীল সূত্র। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ রিটার্ন দাখিল করেছেন। এসব রিটার্নের সাথে প্রায় ২১.২৫ কোটি টাকা কর জমা হয়েছে সরকারী কোষাগারে। তবে এখনো দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব মাঝারী ও বৃহত শিল্প প্রতিষ্ঠান সহ বড় মাপের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়কর রিটার্ন ঢাকাতেই জমা হওয়ায় এ অঞ্চলের কর আদায়ে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না।

২০০১-২০০২ অর্থবছরে বরিশাল কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মাত্র কুড়ি হাজার করদাতার কাছ থেকে আয়কর আদায়ের পরিমান ছিল ২৩ কোটি টাকার কিছু বেশী। সেখান থেকে গত অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় করদাতার সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। গত অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে কর আদায় হয়েছে ৫২৫ কোটি টাকার কিছু বেশী। যা এর আগের বছরে ছিল ৪৮০ কোটি। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে টিআইএন গ্রহনকারীর সংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়িয়েছে। গত অর্থ বছরে রিটার্ন দাখিল করেছেন ৫০ হাজারের কাছাকাছি। করোনা সংকটের মধ্যেও এসবকেই অশাব্যঞ্জক ও ইতিবাচক বলে দাবী করেছেন বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার মোঃ মোস্তফা। তার মতে নতুন অর্থ বছরে রিটার্ন দাখিল ও কর প্রদানকারীর সংখ্যায় আরো প্রবৃদ্ধি আসবে। বাড়বে কর আদায়ও।

তবে দক্ষিণাঞ্চলে কর প্রশাসন এখনো চলছে জনবল সংকট সহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে। বরিশাল কর অঞ্চলের ২২টি সার্কেলে মঞ্জুরীকৃত প্রায় ২৬৫ জনবলের মধ্যে প্রায় ৫০টি পদই শূণ্য পড়ে আছে। ফলে একজন কর্মকর্তাকে একাধীক সার্কেলের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। উপ-কর কমিশনার থেকে যুগ্ম কর কমিশনার সব পদেই জনবল সংকট। পরিদর্শকের বিপুল সংখ্যক পদও শূণ্য। দ্বীপজেলা ভোলার ৭টি উপজেলার জন্য মাত্র ১জন ইনেসপেক্টর কর্মরত আছে।
এদিকে বরিশালে কর কমিশনারেট-এর জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মানের বিষয়টি গত প্রায় এক যুগ ধরে অনুমোদনের অপেক্ষায় এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ঘুরছে। প্রায় ৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ঐ ভবন নির্মান প্রকল্পটি এখনো পরিকল্পনা কমিশনের প্রাথমিক অনুমোদনও লাভ করেনি। ফলে বরিশাল মহানগরীর একাধীক বাড়ীতে ছড়িয়ে ছিটেয়ে আছে কর কমিশনারের অফিসগুলো।

এদিকে করদাতাদের সাথে আরো সৌজন্যমূলক আচরন সহ কর প্রশাসনকে পরিপূর্ণ হয়রানী বিহীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিনত করার তাগিদ দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক করদাতা। পাশাপাশি যেকোন অসত উদ্যেশ্যে করদাতাদের ওপর নুন্যতম বাড়তি চাপ প্রয়োগের বিষয়টির প্রতিও বিশেষ নজরদারীর আহবান জানান হয়েছে। করদাতাদের সামাজিক ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতিও গুরুত্ব প্রদানের আহবান জানিয়েছেন একাধীক করদাতা।
তবে কর বিভাগের দায়িত্বশীল মহল যেকোন হয়রানী সহ অনৈতিক কর্মকান্ড কঠোরভাবে দমনের প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে আয়করের প্রতি সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের ভীতি দুর করা সহ কর প্রদানে সাচ্ছন্দ আগের চেয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। এমনকি কর প্রদানে নৈতিক দায়িত্বের বিষয়টি ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর আহরন ক্রমে বাড়ছে বলেও মনে করছেন কর বিভাগের দায়িত্বশীল মহল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন