ভালবাসার শক্তি অপরিসীম। জোর করে বা চাপিয়ে দিয়ে যে কাজ আদায় করা যায় না সে কাজ ভালবাসার শক্তি ব্যবহার করে অতি সহজে আদায় করা যায়। যাকে মানুষ ভালবাসে তার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়। তাই ইসলাম ভালবাসার শক্তিকে উজ্জীবিত করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, বলে দাও, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জেহাদ করার চেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের পরিবার-পরিজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য-যার মন্দায় পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের বাড়িঘর, যা তোমরা পছন্দ করো, তাহলে অপেক্ষা করো আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সঠিক পথের দিশা দেন না। (সূরা তাওবা, আয়াত ২৪) এখানে সবার চেয়ে এবং সবকিছু থেকে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহর রাস্তাকে বেশি প্রিয় করে নেয়ার সবক দিচ্ছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা ছাড়া মুমিনও হওয়া যায় না। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে অধিক ভালবাসতে হবে।
হযরত আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সা. এরশাদ করেন ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা ও সন্তান থেকে অধিক প্রিয় না হবো। (বুখারী হা/১৩)
শুধু বাবা-মা সন্তান থেকে নয় নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসতে হবে মুহাম্মাদ সা.কে। একদিন হযরত উমর রা. রাসূল সা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সা.নিঃসন্দেহে আপনি আমার কাছে আমার প্রাণ ব্যতীত সবচেয়ে বেশি প্রিয়। তখন রাসূল সা. বললেন, ঐ সত্তার নামে শপথ করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ (তুমি পরিপূর্ণ ঈমানদার নও) যতক্ষণ না তোমার কাছে আমি তোমার প্রাণের চেয়ে বেশি প্রিয় হই। হযরত উমর রা. বললেন, আল্লাহর নামে শপথ! এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয়। অতঃপর রাসূল সা. বললেন, হে উমর! এখন তোমার ঈমান পূর্নতা লাভ করলো। (বুখারী)
তাহলে হাদীসে থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে অবশ্যই দুনিয়ার সকল কিছু এবনকি প্রত্যেক মুসলিম তার প্রাণের চেয়েও রাসূল সা. কে বেশি ভালবাসতে হবে। আসুন আমরা রাসূল সা.কে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। তবে আমরা যখন রাসূল সা. কে সবচেয়ে বেশি ভালবাসবো তবে আমরা কী পাবো? তার পুরস্কার কী রাসূল সা. বলেছেন। প্রথমত খাঁটি মুমিন হবো দ্বিতীয়ত রাসল সা. এর সাথে বেহেশতে থাকতে পারবো। যেমন রাসূল সা. বলেন, যে রাসূল সা. কে ভালবাসবে সে রাসূল সা. এর সাথে থাকবে।
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত একদা (যুল খোয়াইসিয়াহ রা. নামক) এক ব্যক্তি হুযুর সা. এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূল সা. কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে। রাসূল সা. রেগে গিয়ে বললেন, কিয়ামতের জন্য তুমি কিয়ামতের জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ। উত্তরে তিনি বললেন আল্লাহ আর রাসূল সা. কে ভালবাসা ছাড়া আমি আর কিছুই প্রস্তুত করতে পারিনি। হুযুর সা. বললেন তুমি যাকে ভালবাস তার সাথেই তুমি থাকবে। হযরত আনাস রা. বলেন, মুসলমানরা এ কথা শুনে যে খুশি হয়েছে ইসলাম গ্রহণের পর এরকম খুশি হতে আমি তাদেরকে আর কখনো দেখিনি। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৬)
শেষ জামানার মুসলিম মুহাম্মাদ সা. কে অধিক ভালবাসবে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের কিছু লোক যারা আমার পরে দুনিয়ায় আসবে তারাও আমাকে অধিক ভালবাসবে। তাদের অনেকে আশা করবে, হায় পরিবার পরিজন এবং ধন সম্পদ বিসর্জন দিয়ে হলেও যদি তারা আমাকে দেখতে পারতো। (মুসলিম, মেশকাত হা/৫৮৩)
ভালবাসা প্রকাশের মাধ্যম একজন মুসলিমের আবেগ উচ্ছাস ও ভালবাসা অবশ্যই রাসূল সা. এর জন্যই থাকবে। তবে এ ভালবাসা প্রকাশের মাধ্যম কী হবে? তা রাসূল সা. নিজেই বলছেন যে, হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা হুযুর সা. আমাকে বললেন হে বৎস! তোমার অন্তরে কারো সম্পর্কে হিংসা বিদ্বেষ বিহীন অবস্থায় যদি তুমি সকাল-সন্ধ্যা কাটাতে পারো, তবে তুমি তা কর। অতঃপর রাসূল সা. বললেন হে বৎস এটা আমার সুন্নাত। আর যে আমার সুন্নাতকে ভালবাসল নিঃসন্দেহে সে আমাকে ভালবাসলো। আর যে আমাকে ভালবাসলো সে বেহেশতে আমার সাথেই থাকবে। (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০)
এখন আমদের কাছে স্পষ্ট হলো যে, প্রথমত আমাদেরকে মুমিন হতে হলে রাসূল সা. সকলের চেয়ে বেশি ভালবাসতে হবে। দ্বিতীয়ত রাসূল সা. ভালবাসলে আমরা তাঁর সাথে থাকতে পারবো। তৃতীয়ত এ ভালবাসা প্রকাশের মাধ্যম হলো আমাদের প্রতিটি কাজে রাসূল সা.এর রেখে যাওয়া সুন্নত পালন করবো। যখন রাসূল সা. এর সকল সুন্নাত পালন করবো এতেই আমাদের প্রমাণ হবে যে, আমরা রাসূল সা. কে ভালবাসি।
লেখক : পরিচালক ইসলাহ বাংলদেশ, আশরাফাবাদ, ঢাকা-১২১১
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন