শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

একডজন ভুয়া ডাক্তারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন সনদ গ্রহণ করার অভিযোগে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুদকের উপ-পরিচালক মোছা. সেলিনা আখতার মনি বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আসামিরা হলেন, (১) মোঃ ইমান আলী, থানা-বড়–রা, জেলা-কুমিল্লা। (২) সুদেব সেন, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা (৩)তন্ময় আহমেদ, থানা-কালিহাতী, জেলা-টাঙ্গাইল (৪) মো: মাহমুদুল হাসান, দৌলতখান পৌরসভা, জেলা- ভোলা। (৫) মো: মোক্তার হোসাইন, থানা-মতলব (উত্তর), জেলা-চাঁদপুর। (৬) মো: আসাদ উল্লাহ,সাভার, ঢাকা। (৭) মো: কাউসার, থানা-কালিয়াকৈর, জেলা-গাজীপুর (৮) রহমত আলী, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ। (৯) শেখ আতিয়ার রহমান, থানা-বাগেরহাট সদর, জেলা-বাগেরহাট। (১০) মোঃ সাইফুল ইসলাম, থানা-দাগনভুঁইয়া, জেলা- ফেনী। (১১) মো: আসলাম হোসেন, সদর থানা সিরাজগঞ্জ। (১২) মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, থানা-বড়–রা, জেলা-কুমিল্লা। (১৩) মোঃ জাহিদুল হক বসুনিয়া, রেজিস্ট্রার (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল ) এবং (১৪) মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল)।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা, জালজালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য প্রদান করে ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন সনদ গ্রহণ করে। এসব সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে দন্ডবিধির ৪২০/৪৬৫/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং ১৯৪৭ সনের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
মামলায় বলা হয়, কথিত ডাক্তার সুদেব সেন, মো: রহমত আলী ,তন্ময় আহমেদ, মোঃ মাহমুদুল হাসান, মোঃ মোক্তার হোসাইন, মোঃ আসাদ উল্লাহ, জনাব মো: কাউসার, মোঃ মাসুদ পারভেজ, জনাব শেখ আতিয়ার রহমান, মো: সাইফুল ইসলাম, মোঃ আসলাম হোসেন এবং মো: ইমান আলীসহ ১২ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন মর্মে জানান। তারা উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহার করে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের গৃহিত রেজিস্ট্রেশন কোয়ালিফাইয়িং এক্সামিনেশনে অংশ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ্রগ্রহণ করে ‘উত্তীর্ণ হয়েছেন’ মর্মে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর নেন। নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন অনুশীলন করেন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায়ও নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায় যে, তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া। সে মোতাবেক তাদের এমবিবিএস সনদের সঠিকতা যাচাই করার জন্য সনদপত্রগুলোর ছায়ালিপি দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাঈশান মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করে। এ প্রেক্ষিতে চীনের বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে উক্ত সনদপত্রগুলো যাচাইপূর্বক বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সেকশনে বিগত ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকে রেকর্ডপত্র পাঠায়। রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন তাঈশান মেডিকেল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের মতে উল্লিখিত ১২ জন কথিত এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর এমবিবিএস সনদ ভুয়া। এছাড়া সনদগুলোর স্বাক্ষরের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য হস্তলেখা বিশারদের মতামত নেয়া হয়। তাতেও দেখা যায় যে সনদের স্বাক্ষরগুলিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। উক্ত ১২ জন ভুয়া এমবিবিএস সনদধারী কখনও চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। কেউ কেউ কেবলমাত্র ট্যুরিস্ট ভিসায় চীন গিয়েছিলেন। সে দেশে থাকার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং তাদের এমবিবিএস ডিগ্রির সনদগুলো ভুয়া। তাঈশান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এহেন জাল-জালিয়াতির বিষয়টি নিন্দা জানায়। দোষীদের শাস্তি দাবি করে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনপ্রকার সতর্কতা বা নিয়ম-নীতির প্রতিপালন করেনি। বিএমএন্ডডিসি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা রমাঃ বোরহান উদ্দিন কর্তৃক প্রার্থীরা যখন তাদের উপরোক্ত ভুয়া কাগজপত্র জমা দেন সেগুলো যাচাই করার কথা। তিনি প্রথমে সঠিকতা যাচাই করে রেজিস্ট্রার এর নিকট মূলসনদ ও তার ছায়ালিপি উপস্থাপন করেন। তখন রেজিস্ট্রার মো: জাহিদুল হক বসুনিয়া মূল রেকর্ডপত্র দেখে আবার ছায়ালিপিগুলি সত্যায়িত করেন। সে কারণে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ডকুমেন্টসগুলো সম্পর্কে তারা জ্ঞাত ছিলেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। এভাবে তারা পরষ্পর যোগসাজশ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভুয়া চিকিৎসকদের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের গৃহিত রেজিস্ট্রেশন কোয়ালিফাইয়িং এক্সামিনেশনে অংশ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। পরবর্তীতে এমবিবিএস চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর প্রদান এর মাধ্যমে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন