দৈনিক ইনকিলাব-এ গত ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘বরিশাল বন্দরের নাব্য সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই’ শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ করেছে বিআইডবিøউটিএ। সংবাদটি প্রকাশের একমাস দু’দিন পরে কতৃপক্ষের পক্ষে জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত প্রতিবাদ পত্রে ‘প্রকাশিত সংবাদটিকে বাস্তবসম্মত ও তথ্য নির্ভর নয়’ বলে দাবি করে ‘প্রকৃত সত্য গোপন করে অসত্য তথ্য সম্বলিত ’বলে বলা হয়েছে।
বিআইডবিøউটিএ’র প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে ‘বরিশাল বন্দর এলাকায় নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ার সাথে সাথেই তা নিরসনের লক্ষেই গত ১ সেপ্টেম্বর ড্রেজার নিয়োগ করে জরুরি ড্রেজিং সম্পন্ন করে। ২৫-২-২০১৫ তারিখে অন্য ড্রেজার নিয়োজিত করে প্রয়োজন অনুযায়ী গত ১৫-১২-২০১৫তারিখে ড্রেজিং সমাপ্ত হয়। বর্তমানে বরিশাল বন্দর এলাকায় কোন প্রকার নাব্যতা সংকট নেই’।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
এক্ষেত্রে প্রতিবেদকের বক্তব্য হচ্ছে, কতৃপক্ষের প্রতিবাদপত্রে উল্লেখিত তারিখগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল, ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ বরিশাল বন্দরে পরিকল্পিতভাবে একটানা ড্রেজিং শেষ করতে পরেনি কতৃপক্ষ। তিন দফায় প্রায় সোয়া লাখ কিউবিক মিটার ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে বলে কতৃপক্ষ দাবি করলেও এখনো বন্দরের উত্তর ক‚ল ঘেষে ‘রসুলপুর চর’টি এবন্দরের নাব্যতার জন্য বড় সংকট হয়েই আছে। গত দেড় দশকে ঐ চরটি দক্ষিণে অন্তত ৪০মিটার ভাটিতে সরে এসে বন্দরের সামনের কির্তনখোলা নদীকে গ্রাস করেছে। এর ফলে বন্দরের অচলবস্থা আরো তড়ান্বিত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ঐ চরটির দক্ষিণ প্রান্তে যথাযথভাবে ড্রেজিং করা হয়নি বিগত দীর্ঘদিনেও’।
কতৃপক্ষও স্বীকার করে নিয়েছেন যে একাধারে বরিশাল বন্দরে ড্রেজিং সম্পন্ন হয়নি। আর প্রতিবেদনটিতে ‘বর্তমানে বন্দরের নাব্যতা সংকট’এর কথা বলা হয়নি। বন্দরের উত্তর প্রান্তের রসুলপুর চরটি ক্রমশ নাব্যতা সংকটের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে বলে বলা হয়েছে। চরটি গত দেড় দশকে অন্তত ৪০ মিটার দক্ষিণে সরে এসে বন্দরের সামনে কির্তনখোলা নদীর নাব্যতার জন্য সংকট সৃষ্টি করছে বলে বলা হয়েছে।
কতৃপক্ষের প্রতিবাদলিপিতে, ‘নাব্যতা সংকটে বরিশালÑচাঁদপুরÑঢাকা নৌপথের অবস্থাও যথেষ্ঠ ঝুঁকিপূর্ণ। এ নৌপথের বরিশালÑচাঁদপুর অংশের মিয়ার চরসহ বেশ কয়েকটি অংশে জরুরি ড্রেজিং প্রয়োজন হলেও বিআইডবিøউটি কতৃপক্ষ এখনো পরিস্থিতি উত্তরণে খুব একটা মনযোগী হতে পারেন নি বলে অভিযোগ রয়েছে’। বিষয়টির প্রতিবাদ করে বলা হয়েছে, ‘বিষয়টি যথার্থ নয়। কারণ বরিশালÑচাঁদপুরÑঢাকা নৌপথে মিয়ার চরে গত ১৪-১২-২০১৫ ড্রেজিং কাজ সমাপ্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখানে কোন প্রকার নাব্যতার সংকট নেই এবং নির্বিঘেœ নৌযানচলাচল করছে’ বলে প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে প্রতিবেদকের বক্তব্য হচ্ছে, রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে ২৩ ডিসেম্বর-১৫। ড্রেজিং শেষ হবার কথা দাবি করা হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু ড্রেজিং সম্পন্ন হবার পারেও দীর্ঘদিন ড্রেজিংকৃত এলাকায় নৌ-সংকেত ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় ঐ নৌপথে ঝুঁকিপূর্ণ অংশটি ব্যবহার করতে পারেনি নৌযানের চালকগণ। সংবাদটি প্রকাশের পরে বিষয়টি তদন্ত করে সেখানে নৌ-সংকেত ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরে নৌপথটি কিছুটা ঝুঁকিমূক্ত হয়েছে। তবে এর পরেও ঐ নৌপথ ব্যবহারকারী প্রায় সব নৌযানের চালকদেরই অভিযোগ ‘মিয়ার চরের নৌপথটি দিয়ে নির্বিঘেœ চলাচল এখনো যথেষ্ঠ ঝুকিপূর্ণ’।
প্রতিবাদলিপিতে ‘বাংলার সুয়েজ খাল’ খ্যাত গাবখান চ্যানেল’টির অবস্থাও ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে’ বলে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তাকে সম্পূর্ণ অসত্য বলে দাবি করে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ঝালকাঠী প্রান্তে নাব্যতা সংকট রয়েছে, তা নিরশনে বিআইডবিøউটিএ গত ১-১-২০১৬ তারিখে গাবখান চ্যানেলে খননকাজ শুরু হয়েছে এবং অদ্যাবধি ড্রেজিং কাজ চলছে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেদনটিকে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত বলে তা জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করায় বিঅইডবিøউটিএ দারুনভাবে ব্যথিত’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এক্ষত্রে প্রতিবেদকের বক্তব্য হচ্ছে, বিআইডবিøউটিএ’র মত কোন জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করা বা ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করা দৈনিক ইনকিলাব-এর উদ্দেশ্য নয়। ইনকিলাবসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিবদেক সব সময়ই দেশের নৌপথ-এর রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান-বিআইডবিøউটিএ’র কর্মকাÐের প্রতিশ্রদ্ধাশীল ও তাদের যেকোন ইতিবাচক কর্মকাÐকে জনসমক্ষে যথাযথভাবে প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু ডিসেম্বর-২০১৫ তারিখে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ একমাস দুই দিন পরে ২৫ জানুয়ারি ১৬ তারিখে প্রদানের বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ২৩ ডিসেম্বর। আর গাবখান চ্যানেলের ঝালকাঠী প্রান্তের নাব্যতা সংকট রয়েছে বলে স্বীকার করে সেখানে ড্রেজার নিয়োগ করা হয়েছে ১ জানুয়ারি বলে প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রকাশিত সংবাদটি ভ‚ল বা অসত্য বলে প্রমাণিত হয় কি? নাকি সংবাদটির সত্যতাসহ বাস্তবতাকে স্বীকার করেই প্রতিবেদনটি প্রকাশের ৮দিন পরে গাবখান চ্যানেলে ড্রেজিং শুরু করা হয়েছে। বিআইডবিøউটি কতৃপক্ষের সদয় অবগতির জন্য প্রতিবদেক আরো জানাচ্ছে যে, এখনো গাবখান চ্যানলের ঝালকাঠী প্রান্তের অদুরে বাংলাদেশÑচীন ৫ম মৈত্রী সেতুর পশ্চিম পাশে নাব্যতা সংকট প্রকট। এমনকি ভাটির সময় বড় এবং মাঝারী মাপের পন্য ও জ্বালানীবাহী নৌযানগুলো ঐ এলাকা অতিক্রম করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন