বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

হাটহাজারীতে প্রকাশ্যে চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটার মহোউৎসব

ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ: প্রশাসন নির্বিকার

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:০১ এএম

হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটার ধুম পড়েছে। সরকার প্রদত্ত নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্য চলছে পাহাড় কাটার মহাৎসব। এতে করে একদিকে পরিবেশ হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণীকূল হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল। তবে এ ব্যাপারে কোন প্রকার কার্যকারী পদক্ষেপ চোখে পড়ছেনা বলে সংশি¬ষ্ট প্রশাসন নির্বিকার বলে দাবী করছেন স্থানীয় জনসাধারণ। গত মঙ্গলবার উপজেলার সরকারহাট এলাকার পশ্চিমে মনসুরাবাদ এলাকায় পাহাড় কাটার খবর পেয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ রুহুল আমিন দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড়ি মাটি সহ একটি ট্রাক জব্দ করেছেন। জব্দকৃত গাড়ির নং রাজশাহী ট-৩৫২০, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতি টের পেয়ে পাহাড় কর্তন কারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

উপজেলার ও পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় জনসাধারণের সাথে আলাপকালে পাহাড় কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন যুবক এ প্রতিবেদককে জানান, বিগত কয়েকমাস যাবৎ এলাকার বেশ কিছু প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে পাহাড় কাটার একটি সিন্ডিকেট চক্র স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে বিভিন্ন এলাকার ছোট বড় পাহাড় ও টিলা কাঠা। তবে এ বিষয়ে সংশি¬ষ্ট প্রসাশন নির্বিকার বলে চক্রটি পরিবেশ বিরোধী এমন একটি ধ্বংসাত্মক কাজ প্রকাশ্য করতে পারছে।
অনুসন্ধানে আরো জানান, প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অন্তত ১৫-২০টি ট্রলি গাড়িতে করে কর্তনকৃত পাহাড়ের মাটি বিক্রি করছে সিন্ডিকেট চক্রটি। প্রায় ৪৫ ফুট ধারণকৃত প্রতি ট্রলি পাহাড়ি মাটি ৮০০-১০০০ টাকা হারে বিক্রি করে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে চক্রটি। এ চক্রটি এ পর্যন্ত ৪-৫টি ৬০-৭০ ফুট উঁচু পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে। এবং পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেঠে সমতল করে অন্যায় ভাবে ছোট ছোট ফ্লট তৈরি করে বিক্রয় করছে। এতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় প্রবল বর্ষনে পাহাড় গুলো ধসে যে কোন মুর্হুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
নন্দির হাট এলাকার পশ্চিমে বসবাসরত কয়েক জন প্রবীন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এক সময় সিটি কর্পোরেশনের ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় পাহাড়ের অন্যতম সৌন্দর্য ছিল হরিণ, বাঘ, বালুক সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। চট্টগ্রামের শহরের লাগোয়া হওয়ার কারণে অনেকেই এ পাহাড় বেষ্টিত এলাকাটিকে বনভোজনের উপযুক্ত স্থান হিসেবে ব্যবহার করত। কিন্তু অবৈধভাবে দেদারসে পাহাড় কাটার ফলে ওই এলাকার পরিবেশ হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। এছাড়া পাহাড় উজাড় হওয়া কারণে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণীকূল হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল। এতে করে পাহাড়ের অন্যতম সৌন্দর্য বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীগুলোকে এখন আর দেখা যায় না বলে স্পটটি হারাতে বসেছে তার অতীত ঐতিহ্য।

ফতেয়াবাদের পশ্চিমে, চবি ১নং ও ২নং এলাকার পশ্চিমে, পৌরসভার হাটহাজারী বাসষ্টেশন ও সদরের পশ্চিমে সন্দিপ পাড়া, মেখল ঘোনাসহ বিভিন্ন এলাকায়, মীরের হাটের পশ্চিমে আদর্শ গ্রাম, চন্দ্রপুর, আলমপুরমহ কয়েকটি স্থানে, চারিয়ার পশ্চিমে, সরকারহাট এর পশ্চিমে, ধলই, মনিয়াপুকর পাড়, কাঠিরহাট, ফরহাদাবাদ, নাজিরহাটসহ এসব এলাকার পশ্চিমে পাহাড়ি এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে পাহাড় কাঠার মহাউৎসব। এই পাহাড় কেঠে পাহাড়ের মাঠি দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভরাট করা হচ্ছে ছোট বড় পুকুর ও জলাশয়। পাহাড় কাঠার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন একেবারে নির্বিকার বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের এক কর্মকর্তা জানান তিনি এ প্রতিবেদকে জানান, পাহাড় কর্তনের কোন অভিযোগ আমরা এখনও পায়নি। কোন অভিযোগ পেলে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে এই পাহাড় কেঠে ফ্লট তৈরির বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, পাহাড় কাঠা একটি দন্ডনীয় অপরাধ এ ব্যপারে কেউ অভিযোগ না করলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব কারা কোন জায়গায় পাহাড় কাঠছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack Ali ৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:০৮ এএম says : 0
If our country ruled by the Law of Allah then wouldn't dare to destroy ecology. This government have destroyed everything's including morality of the general people.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন