সুশাসন ঃ সুশাসন খাতে গৃহীত কৌশলের উদ্দেশ্য হলো একটি কার্যকর সংসদীয় ব্যবস্থা, উপযুক্ত আইন ও শৃংখলা, গণমুখী ও দক্ষ সরকারি সেবা বিতরণ, স্বাধীন, মুক্ত, স্বচ্ছ, ও জবাবদিহিতা মূলক আইন ও বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালী স্থানীয় সরকার এবং সার্বিকভাবে সামাজিক ন্যায়বিচারসহ একটি দূর্নীতিমুক্ত সমাজ নিশ্চিত করা। কৌশলপত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বৃদ্ধি, আর্থিক খাত পরিবীক্ষন সংষ্কার, দূর্নীতি দমন, পরিকল্পনা ও বাজেটিং এর দক্ষতা বৃদ্ধি, আর্থিক খাত পরিবীক্ষ ইশাসনের প্রবর্তন, তথ্যে অ্যাকসেস নিশ্চিতকরণ এবং সমাজে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা পুনঃপ্রচলনের ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।
জেন্ডার ঃ জেন্ডারের বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে নারীদের অগ্রগতি ও অধিকার বিষয়ে এই রিপোর্টের সামাজিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা অংশে প্রাথমিভাবে অঙ্গীভূত হয়েছে।
অতএব, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র ২০১০-২০২১ এর বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করলে টেকসই উন্নয়নের যেসব মৌলিক দিক ফুটে ওঠে তা হলো: ক. মৌলিক অধিকার; খ. পরিবেশ সুরকষা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার; গ. শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ঘ. বৈষম্য দূরীকরণ ঙ. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চ. অংশীদারিত্বমুলক উন্নয়ন; ছ. মানবসম্পদ উন্নয়ন।
ইসলামের দৃষ্টিতে টেকসই উন্নয়ন ঃ ইসলাম মানুষের সব ধরণের চাহিদার ব্যাপারে সার্বিক বা পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করে। ফলে ইসলাম টেকসই উন্নয়নকে ও তার দৃষ্টি সীমার বাইরে স্থান দেয়নি। ইসলামের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্ব জগতেমানুষের অবস্থান, এ পৃথিবীতে মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য এবং দুনিয়ার সুযোগ সুবিধা বা নেয়ামত ভোগ সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্ভূত। ইসলামী নীতিমালায় সরকার ও সমাজের অথ্যনৈতিক আচরণ বা তৎপরতা এবং সামাজিক পরিবেশকে এমন ভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে যে, এর ফলে টেকসই ও কাঙ্কিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জিত হয়। ইমলামী সমাজে অর্থনৈতিক তৎপরতায় মানবীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ বা বিধানগুলোর ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে ইসলামী সমাজে অর্থনৈতিক তৎপরতাগুলো সুস্থ পরিবেশে এবং সঠিক নীতিমালা বা বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
এম খালফান টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে যেয়ে বলেন: Sustainable development from Islamic perspective seeks to establish a balance between the environment, economic and social dimensions. It means the balance of consumer welfare, economic efficiency, achievement of ecological balance in the framework of evolutionary knowledge based, and socially interactive model defining the social justice, charity and zakat are two mechanisms to reduce poverty.
টেকসই উন্নয়নকে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করলে আমরা বুঝতে পারি, ইসলাম পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সামাজিক গতিবিধির মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, ভোক্তার কল্যাণ অর্থনৈতিক পর্যাপ্ততা এবং অভিব্যক্তিমূলক জ্ঞান ও সামাজিক মিথস্ত্রিয়ার বিভিন্ন মডেল তথা সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দারিদ্র হ্রাসকারী দুটি বিশেষ কৌশল তথা বদান্যতা ও যাকাত ভিত্তিক পরিকাঠামোতে পরিবেশগত ভারসাম্য অর্জন। উন্নয়নের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। মানুষ যেসব সম্পদ ভোগ করে, ইসলামের দৃষ্টিতে তার প্রকৃত মালিক হলেন মহান আল্লাহ। তিনি মানুষকে অন্য সব সৃষ্টির চেয়ে বেশি মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছেন এবং পৃথিবীর সব কিছু মানুষের আওতাধীন করেছেন, যাতে মানুষ তার প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারে।এরই আলোকে ও পরকালে মানুষের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার আচরণের প্রকৃতির ওপর। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: আমরা আদম সন্তানদের মর্যাদা দিয়েছি,ভূভাগে ও সাগরে তাঁদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেছি এবং তাদেরকে পবিত্র জীবিকাসমূহ দিয়েছি এবং আমি অন্য যতকিছু সৃষ্টি করেছি তার অধিকাংশের ওপরই আমি তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।
পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে দুনিয়ার নেয়ামতসমূহের মানুষের প্রতি মহান আলস্নাহর অনুগ্রহ মাত্র, যাতে মানুষ একদিকে তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে ও এভাবে নিজেকে উন্নত করার সুযোগ পেতে পারে এবং অন্যদিকে তাকওয়া বা খোদাভীরুতা অবলম্বনের মাধ্যমে কু প্রবৃতিগুলো দমন করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন: হে মানবজাতি! জমিনে যা কিছু আছে তা থেকে বৈধ ও পবিত্র খাদ্য গ্রহন কর এবং শয়তানের পদক্ষেপের অনুসরণ করো না, কারণ সে অবশ্যই তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন