বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

তারের জঞ্জাল সরাতে আর সময়ক্ষেপণ কাম্য নয়

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৮ এএম

ঢাকা শহরের রাজপথে-ফুটপাতে ঝুলে থাকা তারের জঞ্জাল একদিকে নগরীর স্বাভাবিক সৌন্দর্য ব্যহত করছে, অন্যদিকে মাথার উপর কাকের বাসার মত তারের স্তূপে জমে থাকা ধুলো-ময়লা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির মওসুমে রাস্তার উপর তারের বোঝা আছড়ে পড়ে পথচারিদের চলাচলে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এটি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতালব্ধ বাস্তবতা। নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশবান্ধব তিলোত্তমা ঢাকা নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি সব রাজনৈতিক দলের সরকারই দিয়েছে। সেই সাথে ঢাকার পরিবেশ উন্নয়ন ও সড়ক নিরাপত্তার ইস্যুগুলোর মধ্যে রাস্তায় মাথার উপর থেকে অস্বাভাবিক তারের জঞ্জাল সরানোর প্রতিশ্রুতিও দীর্ঘদিনের। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে রাজধানী ঢাকার তারের জঞ্জাল মাটির নিচে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। এ লক্ষ্যে প্রথমে দুটি পরবর্তীতে আরো চারটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বিটিআরসির চুক্তি হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রায় এক যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরও চুক্তিবদ্ধ সে সব প্রতিষ্ঠান কাজের এক শতাংশ অগ্রগতিও নিশ্চিত করতে পারেনি। ঢাকা শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত করা, যানজট নিরসন, পরিবেশ উন্নয়ন, নদী ও খাল পুনরুদ্ধারসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পকে একইভাবে অচলাবস্থার শিকার হতে দেখা যাচ্ছে।

ঢাকা উত্তরের(ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আনিসুল হক তেজগাঁ অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদসহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগে নিজের কঠোর অবস্থান বজায় রাখার মধ্য দিয়ে সফলতার কাছাকাছি পৌছেছিলেন। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনও গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের মত দূরূহ ও সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে তারা কেউই তারের জঞ্জাল সরাতে স্বার্থান্বেষী চক্রের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পারেননি। দক্ষিণের নবনির্বাচিত মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে এসব বিষয়ে আপসহীন ও সাহসী বক্তব্য দিতে দেখা গেলেও এখন দেখা যাচ্ছে, তিনিও অবশেষে চিহ্নিত স্বার্থান্বেষী চক্রের সাথে আপস করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিটিআরসি ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তারের জঞ্জাল সরাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে কয়েক হাজার সংযোগ অপসারণ করার পর দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নির্দেশনা অমান্য করা বেপরোয়া আইএসপি এবং ডিসলাইন অপারেটররা আবারো আন্দোলন, সময়ক্ষেপণ ও আলটিমেটামের মাধ্যমে দায় এড়ানোর পুরনো কৌশল গ্রহণ করে। তার অপসারণের প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে, ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে তারা মূলত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ে সাধারণ ইন্টারনেট গ্রাহকদের জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করছে।

বেশ জোরের সাথে তার অপসারণের কাজ শুরু হলেও অবশেষে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের হুমকি ও অবস্থানের সাথেই যেন আপস করছে সংশ্লিষ্টরা। অক্টোবরে আইএসপিএবি এবং কেবল অপারেটার্স এসোসিয়েশন (কোয়াব) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের যৌথ সভায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে কেবল কেটে অপসারণের তৎপরতা বন্ধ রাখার শর্তে আইএসপিএবি ও কোয়াব নিজেরাই নভেম্বরের মধ্যে নিজস্ব প্রযুক্তিতে মাটির নিচে কেবল স্থাপনের কাজ শেষ করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেয়। ইতিমধ্যে নভেম্বর মাস শেষ হয়ে গেলেও ঝুলন্ত তার অপসারণের কাজের অগ্রগতি কোথাও দৃশ্যমান হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আরো একমাস সময় বাড়ানোর কথা বলা হলেও তারের জঞ্জাল অপসারণে কোয়াব এবং আইএসপিএবি আরো দুই বছর সময় লাগবে বলে দাবি করছে। কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হলে প্রয়োজনে আরো কয়েকমাস সময় বাড়ানো যেতে পারে। তবে বছরের পর বছর সময়ক্ষেপণের আর কোনো সুযোগ দেয়া সমীচীন হবে না। বিশ্বের কোনো আধুনিক নগরীতে এমন ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল এখন আর দেখা যায় না। এমনকি আমাদের দেশেও সিলেটের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কঠোর পদক্ষেপে তারের জঞ্জাল অপসারণ করে মাটির তলায় স্থাপনের অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। আইএসপি এবং কোয়াবের হুমকি, ধর্মঘট বা সাধারণ গ্রাহকদের জিম্মি করে স্বার্থ হাসিলের পন্থা গ্রহণীয় ও বাঞ্ছিত নয়। আমরা আশা করবো, তারের জঞ্জাল অপসারণে দুই সিটি কর্পোরেশন পদক্ষেপ নেবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন