মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে

কৃষি গবেষনা ইনস্টিউট উদ্ভাবিত বীজ ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি কাজে লাগানোর তাগিদ

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:০১ এএম

কৃষি গবেষনা ইনস্টিউট উদ্ভাবিত বীজ ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি কাজে লাগানোর তাগিদ

সাত লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত ‘বাংলার শষ্য ভান্ডার’ খ্যাত বৃহত্বর বরিশালে কৃষি ব্যবস্থা সহ ফসল আবাদ ও উৎপাদনে নানা বৈচিত্র কৃষকদের সাথে এ অঞ্চলের আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থায়ও ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। অতীতের বৃহত্বর বরিশালের ৬ জেলা, যা এখন দক্ষিণাঞ্চল হিসেবে পরিচিত, সেখানে কৃষি ব্যবস্থা বলতে শুধু ধান’ই বোঝাত। ‘বরিশালের বালাম চাল’এর খ্যাতী এ উপমহাদেশ যুড়েই ছিল অনেকের মুখে। শিল্পীর গানেও এ কথা উঠে এসেছে বার বার।
সেই বৃহত্বর বরিশালের কৃষি ব্যবস্থায় নানা ফল ও ফসল উৎপাদনেও বৈচিত্র এসেছে। ইতোমধ্যে ‘মাচান পদ্ধতি’, ‘সারজন পদ্ধতি’ সহ নানা আধুনিক ও লাগসই প্রযুক্তিতে দক্ষিণাঞ্চলে শাক-সবজি সহ ধানের চারা বীজ পর্যন্ত উৎপাদিত হতে শুরু করেছে।
সারা দেশে উৎপাদিত মিষ্টি আলুর প্রায় ৬০ ভাগই আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। মুগ ডালেরও সিংহভাগই এ অঞ্চলে আবাদ হচ্ছে। এমনকি গম আবাদেও দক্ষিণাঞ্চল ক্রমে সৃমদ্ধ হচ্ছে। তবে সম্প্রতিককালে তরমুজ আবাদে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৩ লাখ টনের মত তরমুজ উৎপাদনের লক্ষে মাঠে নেমেছে এ অঞ্চলের কৃষকগন। ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’র উদ্ভাবিত ‘বারি আমÑ১১’ নামের বারমাসী নুতন জাতের আম-এর আবাদ ক্রমশ বাড়ছে দক্ষিণাঞ্চলে। পিরোজপুর ও ঝালকাঠীর আটঘরÑকুড়িআনা সহ ভিমরুলী এলাকার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর অন্তত ২৫Ñ৩০ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হচ্ছে। এসব পেয়ারা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে পাশর্^বর্তি দেশের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতেও চালান হচ্ছে। এ অঞ্চলের অমড়া’র সুখ্যাতীও দীর্ঘদিনের। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও ‘বরিশালের আমড়া’ বাজার করে নিয়েছে।
সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সুমিষ্ট মাল্টার চাষ ও উৎপাদন হতে শুরু করেছে। যার চারা-কলম সরবারহ হচ্ছে বরিশালের বানরীপাড়া ও পিরোজপুরের নেসারাবাদ থেকে। এমনকি সম্প্রতিককালে দক্ষিণাঞ্চলে সিমিতাকারে স্ট্রবরি’রও সফল আবাদ হতে শুরু করেছে।
চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর জমিতে ডাল, তেলবীজ ও মসলা জাতীয় ফসল সহ বিভিন্ন ধরনের রবি ফসল আবাদের লক্ষ্যে কাজ শুরু করছে কৃষি যোদ্ধাগন। সোয়া ৬ লাখ টন চাল উৎপদনের লক্ষ্য নিয়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৪ হেক্টরে বোরো আবাদের বীজতলা তৈরীর কাজও শুরু হয়েছে। বিদায়ী ‘খরিপ-২’ মৌসুমে এ অঞ্চলে আবাদকৃত প্রায় ৭ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের মাধ্যমে ১৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের আশায় বুক বেধে আছে কৃষকগন। ইতোমধ্যে সে সোনালী আমন ধান কৃষকের চোখ যুড়াচ্ছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে ‘অগ্রহায়নের সাত সকালে ফসল কাটার ধুম’ লেগে যাবে।
এছাড়াও প্রায় ৫২ হাজার হেক্টরে শীতকালীন শাক-সবজী, ৩৫ হাজার হেক্টরে তরমুজ, ৭ হাজার হেক্টরে গম, ১৩ হাজার ৫১ হেক্টরে মিষ্টি আলু, ৯ হাজার ৫১ হেক্টরে গোল আলু, ১০ হাজার হেক্টরে ভুট্টা, আড়াই হাাজার হেক্টরে আখ, ৬,১২৯ হেক্টরে শসা, ক্ষিরা ও মর্মা ছাড়াও প্রায় দেড় হাজার হেক্টরে ফুট আবাদের লক্ষ্য অর্র্জনে কাজ শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন।
এমনকি তেলবীজ আবাদ ও উৎপাদনেও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের অবদান যথেষ্ঠ। এবার প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টরে চিনা বাদাম, সরিষা, তিল, সয়াবিন ও তিষি জাতীয় তেল বীজ আবাদের লক্ষ নির্ধারন করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে ৭০ হাজার টন। এরমধ্যে প্রায় ৫ হাজার হেক্টরে সূর্যমুখি ও ২৪ হাজার হেক্টরে সয়াবিনের আবাদ হচ্ছে। দক্সিণাঞ্চলে উৎপাদিতসসাবিন তেলবীজ দেশের পোল্ট্রী ফিড উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখছে।
এছাড়াও প্রায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টরে বিভিন্ন ধরনের ডাল জাতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। দক্ষিণাঞ্চলে এবার ২ লাখ ১ হাজার হেক্টর মুগডাল আবাদ হচ্ছে। যা দেশে মোট মুগ আবাদের প্রায় ৬০ ভাগ। এছাড়া ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টরে খেশারী, ২৩ হাজার হেক্টরে ফেলন, প্রায় ৪ হাজার হেক্টরে মুশুর, ১ হাজার হেক্টরে ছোলা ও প্রায় ৫০ হেক্টরে মাসকালাই ও মটর ডালের আবাদ হচ্ছে।
এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে এবার প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টরে মসলা জাতীয় ফসলেরও আবাদ হচ্ছে। যার মধ্যে মরিচই আবাদ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টরে। এছাড়াও সাড়ে ৬ হাজার হেক্টরেরও বেশী জমিতে পেয়াঁজ ও রসুন ছাড়াও ধনিয়া,আদা,কালোজিরা ও হলুদের আবাদ হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে পেয়াজ ও রসুন-এর আবাদ সম্প্রসারনের সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে সব ধরনের কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগকেও কাজে লাগানোর পরামর্র্শ দিয়েছেন কৃষিবীদগন। এ লক্ষে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র জেলা থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন কৃষিবীদগন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন