শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নিষ্ক্রিয়তার আবর্তে বিএনপি

মিথ্যা তথ্যে আস্থা হারাচ্ছেন নেতারা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সক্রিয় অংশগ্রহণ, আন্দোলন-সংগ্রামের কারণেই ৯০’র দশকে এরশাদ সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক ধারার সূচনা হয়েছিল। পরবর্তীতে যেকোন জাতীয় ইস্যুতে তিনি ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। তার নেতৃত্বাধীন দল বিএনপিও ছিল রাজপথে। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে বরাবরই বিএনপি প্রধান ছিলেন আপোষহীন নেত্রী। দেশের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী ধারার রাজনীতির প্রধান নেতৃত্বও হয়ে উঠেন তিনি। অথচ বেগম জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই বদলে গেছে বিএনপি। জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ডানপন্থী এই দলটি এখন চলছে বামপন্থী ধারায়। নেতৃত্বও দিচ্ছেন সেই আদর্শে বিশ্বাসী নেতারা। একইভাবে রাজপথের এই দলটি এখন নিষ্ক্রিয় মাঠের রাজনীতিতে। নাম মাত্র কিছু সভা-সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে দায় সারছেন নেতারা। স্বচ্ছন্দ্যবোধ করছেন ভার্চুয়াল কার্যক্রমেই।

খালেদা জিয়াবিহীন নেতাদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দেখা দেয় তিনি কারাবন্দী হওয়ার পরে। কিন্তু দলীয় প্রধান কারাগারে গেলেও তার মুক্তির জন্য কার্যকর কোন আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারেননি তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বরং দলটির নেতাকর্মীদের মিথ্যা তথ্য-আশ্বাস দিয়ে বার বারই ধোঁকা (নেতাকর্মীদের মতে) দিয়েছেন। বেগম জিয়ার মুক্তির আশ্বাস দিয়ে বৈঠক করেছেন গণভবনে, দলকে নিয়েছেন নির্বাচন ও সংসদে। কিন্তু দলের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত মুক্ত হননি বেগম খালেদা জিয়া। বরং সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে এবং পরিবারের সদস্যদের তৎপরতায় এখন তিনি শর্তসাপেক্ষে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় রয়েছেন। এজন্য এক প্রকার রাজনীতি থেকে নির্বাসনেই দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই নেতা। এসব বিষয় নিয়ে এখনো তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, কারাবন্দী অবস্থায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কর্মকান্ডে চরম ক্ষুব্ধ বেগম খালেদা জিয়া। বিশেষ করে তার মুক্তির ইস্যুতে কোন আন্দোলন করতে না পারা, নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সংসদে যোগদানের বিষয়ে তাকে অন্ধকারে রেখে কয়েকজন শীর্ষ নেতার তৎপরতা তিনি ভালোভাবে নেননি।

রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয়: চেয়ারপারসন কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই কিছু সভা-সমাবেশ করে বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী এক বছর এই ধারা অব্যাহত ছিল। এরপর করোনাভাইরাস মহামারী মানুষের জন্য মহাসঙ্কট হিসেবে দেখা দিলেও আশির্বাদ হিসেবে পেয়েছেন বিএনপি নেতারা। দলটির কর্মীদের মতে, বিএনপি নেতাদের নামে একটি পুরনো প্রদান রয়েছে, আন্দোলন শুরু হলে তারা ঘরে বসে খিচুরি খান। করোনাভাইরাস তাদের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে। করোনা শুরু হয়ে এখন স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। বিএনপিও কয়েকটি নির্বাচন, প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে মাঠে নেমে সংঘর্ষেও লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু করোনার অজুহাত দিয়ে নীতিনির্ধারণী নেতারা হয়ে পড়েছেন ‘ঘরকুনো’। ভার্চুয়াল সভার নামে ঘরে বসেই বক্তৃতা, হুমকী-ধামকী দিচ্ছেন তারা।

সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির এক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা নির্বাচন করতে পারি, প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারি, তখন করোনা থাকে না। কিন্তু আন্দোলন-কর্মসূচির কথা আসলেই করোনার অজুহাত দেয়া হয়। সম্প্রতি সাবেক হওয়া বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা সংশয় প্রকাশ করে বলেন, দলের শীর্ষ নেতাদের কর্মকান্ডে সন্দেহ হয় তারা আদৌও আন্দোলন করতে চান কিনা? নাকী তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সরকারকে সহযোগিতা করা সেটিই সত্য কিনা?

এদিকে বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর যেসব নেতা রাজপথে মিছিল-মিটিং করতেন, বক্তব্য-বিবৃতিতে সক্রিয় ছিলেন তাদেরকে কোনঠাসা করার অভিযোগ ওঠেছে। দলটির একাধিক নেতা জানান, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ আন্দোলনমুখী নেতাকর্মীদের কমিটিসহ নানা মাধ্যমে কোনঠাসা করে নিষ্ক্রিয়তার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

আস্থা হারাচ্ছেন নেতারা: জাতীয় নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে সক্রিয়-উজ্জীবিত হয়ে উঠেন তৃণমূলে নেতাকর্মীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যের কারণে নিজেরাই আস্থা হারাচ্ছেন তাদের। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেগম জিয়াকে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে পরবর্তীতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সংসদে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে সংসদে যাওয়া এবং অতি সম্প্রতিক সময়ে ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের পরিবর্তন হবে জানিয়ে একাধিক নেতা প্রকাশে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু সে অর্থে কোন দৃশ্যমান কিছু না হওয়ায় এসব নেতাদেরকে নিয়ে প্রায় সময় হাস্যরসে মেতে উঠেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে। বেগম জিয়ার মতো রাজনৈতিক নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা, দুরদর্শী অন্যরা নয়। স্বাভাবিকভাবেই তাদের নেতৃত্বে যেভাবে দল গতিশীল থাকতো এখন সেটা হচ্ছে না। একারণে নিষ্ক্রিয় মনে হচ্ছে। তবে রাজপথের কর্মসূচি যেগুলোকে বলা হয় মানববন্ধন, র‌্যালি এসব করছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ধর্ষণের প্রতিবাদে কথা বলছে। অন্যদিকে রাজপথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই তো নাই, আছে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি-গোয়েন্দা। তাদের নামিয়ে দিয়ে গ্রেফতার-হামলা-মামলা করা হচ্ছে। দাবি আদায়ে বিএনপি কার্যকর আন্দোলন বা কর্মসূচি পালন করতে পেরেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন দাবি একটাই নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন। এর সাথে সবকিছু জড়িত। তবে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছি, এটা সঠিক।

বিএনপি ভার্চুয়ালে চলে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, করোনার কারণে অনেক কর্মসূচি পালন করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি আরও কিছুটা স্বাভাবিক হলে হয়তো শুরু হবে।
বিএনপির এক ভাইস-চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতারা শুধু নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় আছে বললে ভুল হবে। বরং তারা বিএনপিকে নিষ্ক্রিয় রাখছেন, আর সরকারকে সবরকম সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কোন নির্বাচনে বৈধতা লাগবে তা দিচ্ছে, কোনখানে ভোটে অংশ নিতে হবে নিচ্ছে, কোনখানে সরকারকে বৈধতা দিতে হবে তা দিচ্ছে। কোন ইস্যুতে নিশ্চুপ থেকে সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতা করতে হবে তা করে দিচ্ছে। এককথায় সরকারকে নির্ভার রেখে শাসন পরিচালনা করতে সার্বিক সহযোগিতার দায়িত্ব নিয়েছেন শীর্ষ কয়েকজন নেতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিবর্তে ঘরোয়া খেলায় ব্যস্ত। নিজেদের মধ্যে বিভেদ, একজন আরেকজনের পেছনে লেগে থাকছে। দলেরই লোকজন একজন আরেকজনকে খাটো করছে, একজন আরেকজনকে ব্যর্থ করতে কাজ করছে। এ কারণে গত ১২ বছরেও বিএনপির আন্দোলন সফল হয়নি।

তিনি বলেন, বিএনপি এখন মানসিকভাবে খন্ড-বিখন্ড, সাংগঠনিকভাবে খন্ড-বিখন্ড। দল আছে, কারও সাথে কারও মিল নাই। কারও সাথে কারও যদি মিল না হয়, তাহলে কর্মফল আদায় করা যায় না। যদি যেতে তাহলে আমরা ১২ বছর রাস্তায় থাকি না। ১২ বছর লাগার কথা না। সবার মতামত নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দল ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করার পরামর্শ দেন তিনি।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
আজিজ ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০০ এএম says : 0
বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিবর্তে ঘরোয়া খেলায় ব্যস্ত। নিজেদের মধ্যে বিভেদ, একজন আরেকজনের পেছনে লেগে থাকছে।
Total Reply(0)
নাজিম ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০১ এএম says : 0
বিএনপিকে দেখে মনে হচ্ছে তারা রাজনীতি ভুলে গেছে
Total Reply(0)
কিরন ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০১ এএম says : 0
একদম সত্য কথা বলেছেন
Total Reply(0)
তুষার ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
বিএনপির শুধু এখন নামটাই আছে। আর আছে সংবাদ সম্মেলন, আর প্রেসক্লাবের সামনে ভাষণ
Total Reply(0)
হেদায়েতুর রহমান ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৩ এএম says : 0
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, করোনার কারণে অনেক কর্মসূচি পালন করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি আরও কিছুটা স্বাভাবিক হলে হয়তো শুরু হবে। ------------ আগে ছিলো ঈদ, এখন হলো করোনা ?
Total Reply(0)
মোঃ দুলাল মিয়া ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১২ এএম says : 0
আমি মনে করি তারেক জিয়া কে নিয়ে সংগ্রাম আরম্ভ করতে হবে তাই তারেক জিয়া আসা জরুরি ভয় করে লাভ নাই। সে যদি জেলে থাকে তবুও সব কিছু বাস্তবায়ন করা যাবে।
Total Reply(0)
mohammad rahman ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:১৮ এএম says : 0
অবৈ্ধ্য সন্তান আর বৈধ্য সন্তান কি এক ???????
Total Reply(0)
mohammad rahman ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:২৮ এএম says : 0
হায়রে ... ইনকিলাব সমাজের/ জাতীর ভাইরাস ??? ...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন