শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ফল উৎপাদনে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

দেশে ফলের চাহিদা বাড়ছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এর একটা কারণ হতে পারে। সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ফল খাওয়ার কথা বলেন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানীরা। স্স্থু-সবল দেহের জন্য প্রতিদিন অত্যন্ত ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। আমাদের দেশে মাথাপিছু ফল খাওয়ার যে তথ্য রয়েছে, তা হতাশাজনক-মাত্র ৭৫ গ্রাম। দিনে দিনে অবশ্য ফল খাওয়ার অভ্যাস বাড়ছে। এই সুবাধে ফলের চাহিদাও বাড়ছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন যথেষ্ট নয়। বর্তমানে মোট চাহিদার মাত্র ৩০/৩৫ শতাংশ ফল উৎপাদিত হয়। অবশিষ্ট ফলের জন্য আমদানির ওপর নির্র্ভর করতে হয়। প্রতি বছরের মত এ বছরও ফলের আমদানি বেড়েছে। বেড়েছে অন্তত ১৮ শতাংশ। ফলের মধ্যে প্রধানত আপেল, কমলা, আঙুর, মাল্টা আমদানি হয়ে থাকে। চলতি বছরের ১১ মাসে এসব ফল আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৮২৮ কোটি ৮০ লাখ ৮৭ হাজার টাকার। করোনাকারণে ফলের আমদানি বেড়েছে বলে অনেকের ধারণা। আমাদের দেশে অন্তত শতেক রকম ফল উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, কলা, খেজুর, আনারস ও বিভিন্ন রকমের লেবুর কথা উল্লেখ করা যায়। এছাড়া বিলুপ্ত প্রায় কিছু ফল যেমন কদবেল, সফেদা, আতা, শরিফা ইত্যাদির উৎপাদনও আগের তুলনায় বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিদেশী ফল বলে পরিচিত আপেল, কমলা, আঙুর, মাল্টা, নাশপাতি, এমন কি ড্রাগন, রাম্বুটান, স্ট্রবেরি, মরুর খেজুর ইত্যাদি উৎপাদিত হচ্ছে। এসব ফলের মান কোনো দেশের চেয়েই ন্যুন নয়।

আমাদের দেশে মাটির বৈচিত্র্য যেমন আছে তেমনি তার উৎপাদিকা শক্তিও অফুরান। বিশ্বে এমন কোনো শস্যদানা নেই, এমন কোনো তেলবীজ নেই, এমন কোনো ফল বা ফুল নেই, যা এখানে হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সব ধরনের ফল উৎপাদনে এখানে রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা। দেশী ফল যা আছে, তাতো আছেই, এমন কি বিদেশী ফল উৎপাদনেরও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আপেল, কমলা, আঙুর, মাল্টার উৎপাদনে যে সাফল্য দেখা গেছে, তাতে পাহাড়ী এলাকা তো বটেই, চাই কি সমতল এলাকাতেও এ সবের আবাদ- উৎপাদন হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় কমপক্ষে ৫০ রকমের ফল উৎপাদিত হয়। সেখানে আপেল, কমলা, মাল্টার উৎপাদন ও হচ্ছে, পরীক্ষামূলক নয় বাণিজ্যেক ভিত্তিতে এবং উৎপাদন অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। পঞ্চগড়-দিনাজপুর এলাকায় এসব ফলের পরীক্ষামূলক উৎপাদন সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। দেশী-বিদেশী ফল উৎপাদনের বিদ্যমান সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে ফলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণই সম্ভবপর হবে না, প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ ফল রফতানিও করা যাবে। আমরা পাকিস্তান, ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ থেকে ফল আমদানি করে থাকি। এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও তার বৈচিত্র্যে মিল রয়েছে। ওই সব দেশ যদি তাদের নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে ফল রফতানি করে বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। তবে আমরা পারবো না কেন? পাকিস্তানে অন্যান্য ফলের সঙ্গে আমের রফতানি বেড়েছে। ভারতে অন্যান্য ফলের সঙ্গে কাঁঠালের রফতানি বেড়েছে। আম আমাদের দেশে প্রায় সব জায়গায়ই হয়, আর কাঁঠাল তো আমাদের জাতীয় ফলই। বিশ্বে দুটি ফলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সুযোগ আমরাও নিতে পারি। মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডে উৎপাদিত ফলের বেশ কিছু আমাদের দেশে উৎপাদিত হচ্ছে এবং এসব ফলের বিভিন্ন দেশে যথেষ্ট চাহিদা আছে। উদ্যোগী হলে এ ক্ষেত্রেও আমরা ভাগ বসাতে পারি।

অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, আমরা এক সময় ভারত, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ থেকে ফুল আমদানি করতাম। এখন করতে হয় না। যশোর, মানিকগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে পরিকল্পিত ফুল চাষের ফলে আমাদের ফুলের চাহিদা আমরাই পূরণ করতে পারছি। শুধু তাই নয়, ফুল রফতানিও করছি। সবচেয়ে বড় কথা, ফুল আমদানিতে যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হতো, তা হচ্ছে না। ফুলের মতোই আমরা ফলের ক্ষেত্রে খুব সহজেই রফতানিকারক দেশে পরিণত হতে পারি। সেক্ষেত্রে আমাদের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব হবে। এজন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। ফলের আবাদ-উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই আবাদী জমি পরিহার করতে হবে। অনাবাদী বিশেষত: পাহাড়ী এলাকার জমি ব্যবহার করতে হবে। উচু-নিচু-ঢালু পাহাড়ী জমি ফল উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। কৃষিবিজ্ঞানী ড. মো. মেহেদী মাসুদের মতে, পাহাড়ী এলাকার সাড়ে ৮ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে মাত্র ৯৫ হাজার হেক্টরের কিছু বেশি জমি ফল চাষের আওতায় এসেছে। এই পুরো জমিটাই ফল চাষের আওতায় আনা যায়। বলা বাহুল্য, সেটা আনা গেলে ফল চাষে রীতিমত বিপ্লব ঘটে যাবে। দেশের অন্যান্য এলাকাতেও পতিত বা অনাবাদী জমি কম নেই। সে জমিও ফল চাষের আওতায় আনা যেতে পারে। তাছাড়া গ্রামে-গঞ্জে-শহরে বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার দু’ ধারে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রোপন করা যেতে পারে। এতে বাড়তি ফলই পাওয়া যাবে না, কাঠও পাওয়া যাবে এবং অক্সিজেন প্রাপ্তি সহজতর হবে। আমাদের জমি আছে, লোক আছে, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিজ্ঞানী ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এই জমি ও লোকবল ব্যবহার করতে হবে। কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা নিতে হবে। এভাবেই আমরা ফল উৎপাদনে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করতে পারি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন