কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পৈতৃক সম্মত্তি নিয়ে দুই সংসারের (স্ত্রীদ্বয়ের সন্তানদের মাঝে) বিরোধের জেরে পিতার লাশ দাপন করা হচ্ছে না। মৃত্যুর প্রায় ২০ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও বিবাধমান বিষয়টি নিয়ে কোনো সমাধান না হওয়ায় মৃত পিতার লাশ এখনো পড়ে আছে নিজগৃহে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের কবরুয়া গ্রামে। নিহতের নাম মো: নুরুল হক ভূঁইয়া (৭৮)। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে বলে জানা যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) ভোরে নুরুল হক ভূঁইয়া তার নিজ ঘরে ব্রেইন স্ট্রোক করলে পরিবারের লোকজন তাকে প্রথমে কুমিল্লা মুন হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে রোগির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল নয়টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। পরে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসলে তার দুই পরিবারের সন্তানদের পূর্ব বিরোধের জেরে লাশ দাপনে জটিলতা তৈরি হয়। নিহতের পরিবার সূত্রে আরো জানা গেছে, মো: নুরুল হক ভূঁইয়া ৫০ বছর পূর্বে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের কাগাইশ মজুমদার বাড়ীর আয়েশাকে ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক বিবাহ করেন। নুরুল হক-আয়েশা দম্পতির সংসারে ছয় কন্যা সন্তান রয়েছে। নুরুল হক চট্টগ্রাম স্টীলমিলে চাকুরীর সুবাধে সুরমা আক্তার নামে সন্দীপের আরেক নারীকে বিয়ে করেন। নুরুল হকের দ্বিতীয় সংসারে দুই ছেলে দুই মেয়ে আছে। নতুন বাড়ি করে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বসবাস করতে থাকেন তিনি। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে নুরুল হক তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি অবহেলা করতে থাকেন। এরই সুবাধে দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানরা মিলে নুরুল হককে ফুসলিয়ে ১৪০ শতক জমি তাদের নামে কবলা নিয়ে নেন। এবিষয়ে প্রতিবাদ করলে প্রথম স্ত্রী ও তার কন্যাদেরকে হুমকি প্রদর্শন করে দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে-মেয়েরা। পরে নুরুল হকের প্রথম স্ত্রী বাদী হয়ে সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা দাবী করে চেয়ারম্যান বরাবর দরখাস্ত করলে স্থানীয়ভাবে বিষয়টির নিস্পত্তি করা হলেও বাড়িতে এসে প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা আবারও সম্পত্তি থেকে তাদের বঞ্চিত রাখে। সমস্যা সমাধান না করে নুরুল হক আজ সোমবার মৃত্যুবরণ করলে পিতার সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে লাশ দাফনে বাধা প্রদান করে প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা। এসময় দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা প্রথম স্ত্রীর কন্যাদেরকে সম্পত্তি নিতে অস্বীকার করে প্রবাস থেকে ছেলে নুরুল আফছার মোবাইলে গ্রামবাসীকে বলেন, “বাবার লাশ দাফনের দরকার নেই, আমরা কাউকে সম্পত্তি দেবনা”। এই রির্পোট লেথা পর্যন্ত এখনো লাশ দাফন করা হয়নি। এবষিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য পেয়ার আহমেদ বলেন, “নিহত নুরুল হকের দুই পরিবারের শান্তির জন্য এবং তার লাশ দাফনের ব্যবস্থায় গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি”। এবিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মো: কামাল হোসেন বলেন, “সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পিতার লাশ দাফনে বাধা দেয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পরিবার ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আলোচনা স্বাপেক্ষে সমাধান করা হয়েছে। নিহতের লাশ আগামীকাল দাফন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন”।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন