বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চাকায় উড়ছে ধুলাবালি

নোয়াখালী-কুমিল্লা মহাসড়ক

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

ধুলার যন্ত্রণায় কাহিল নোয়াখালী-কুমিল্লা মহাসড়কের চলাচলরত যাত্রীসহ আশপাশের মানুষ। ধুলাবালিতে দূষিত হচ্ছে প্রাকৃতিক বাতাস। বিষাক্ত হয়ে উঠছে ধুলায় ধূসর ওই অঞ্চলের বাতাস। বাড়ছে অসহনীয় যন্ত্রণা, ভোগান্তি। সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। শীত আসার আগে বাড়ছে রোগ-বালাই। সড়কে নেমে দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। মুখে মাস্ক ব্যবহার করেও ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না।
নোয়াখালী-কুমিল্লা দুই লেনের সড়কটি ধীরগতিতে উন্নীত হচ্ছে চার লেনে। যার কারণে ওই সড়কের বেশির ভাগ এলাকা ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে যানবাহনের কালো ধোঁয়া। দুই থেকে চার লেনে সড়ক নতুন করে নির্মাণের জন্য বালু, মাটি, খোয়া ও পাথর ফেলা রাখা হয়েছে পুরো সড়কজুড়ে। গাড়িতে করে বালি ফেলবার কারণে সড়কে ধুলাবালির অভাব নেই।

সওজ সূত্র জানায়, কুমিল্লার টমছম ব্রিজ থেকে নোয়াখালী (বেগমগঞ্জ) পর্যন্ত সড়কটিকে দুই লেন সড়ক থেকে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এর মধ্যে পিচঢালা রাস্তা হবে ৫৪ ফুট। এর বাইরে দুই পাশে ৩ ফুট করে ফুটপাত রাখা হবে। দুই জেলার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর প্রকল্পের কাজটি তদারকি করছে।

সরেজমিন গতকাল ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা অংশের বিপুলাসার বাজার হয়ে কাঁচিরপোলের উত্তর অংশ পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার কাজ মাঝপথে বন্ধ আছে প্রায় ৮ মাস। এতে সড়কের ধুলাবালুতে এলাকার লোকজনের অবস্থা কাহিল। এ বিষয়ে সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদ উল্যাহ বলেন, কুমিল্লা অংশের টমছম ব্রিজ থেকে লালমাই পর্যন্ত অংশের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ, লালমাই-লাকসাম অংশের প্রায় ৩০ শতাংশ এবং লাকসাম
সোনাইমুড়ী অংশের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। লালমাই-লাকসাম অংশে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে তিন মাস আগে। তবে লালমাই-লাকসাম অংশে ভ‚মি অধিগ্রহণে সময় লেগেছে। প্রয়োজনীয় অর্থ জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই জেলা প্রশাসন থেকে সওজকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা।

অপর দিকে নোয়াখালী অংশের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে চৌমুহনী চৌরাস্তা থেকে দিঘিরজান পর্যন্ত কিছু অংশে কাজ শেষের দিকে, আর বাকি অংশের কাজ চলমান। আর দিঘিরজান থেকে সোনাইমুড়ী বাইপাস পর্যন্ত আংশিক কাজ করার পর বন্ধ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, নোয়াখালী অংশের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ভ‚মি অধিগ্রহণ সম্পর্কিত জটিলতা নিরসন না হওয়ায় সোনাইমুড়ী চৌরাস্তা থেকে চাষিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু করতে পারছেন না।

এদিকে, প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে নোয়াখালী-কুমিল্লা মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়নকাজ শুরু হলেও ধীরগতি কাজের কারণে আগের দেওয়া পিচঢালা বিভিন্ন অংশে উঠে গিয়ে মহাসড়কে সব ধরনের যান-চলাচল করায় ধুলায় আচ্ছন্ন হচ্ছে পুরো মহাসড়কজুড়ে। সড়কের দু’ধারের অফিস, দোকানপাটসহ ঘরবাড়ি ধুলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। নোয়াখালী-কুমিল্লা মহাসড়কে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। সেই সঙ্গে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়া করেছেন ওই সড়কে। এমন ব্যস্ত মহাসড়কে ধুলোর ভয়াবহতায় সাধারণ মানুষ এখন ক্ষোভে ফুঁসছেন। প্রতিদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে কুমিল্লা শহরের দীর্ঘ পথ ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলছে। ধুলোর হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন।

ওই সড়কের দিঘিরজান এলাকার ব্যবসায়ী মনির হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ধুলাবালুতে হাঁচি, কাশি, অ্যালার্জিসহ নানা রোগে ভুগছেন তারা। কুমিল্লার চিকিৎসক ইকবাল হোসেন দৈনিক ইনকলাবকে জানান, এই ধুলাবালির পরিবেশের কারণে প্রতিটি নিঃশ্বাসে মানুষের দেহে শত শত রোগের জীবাণু প্রবেশ করছে। আর যারা অ্যাজমা বা অ্যালার্জি রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য মৃত্যুময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
সড়কটি লেনে উন্নীতকরণের কাজটি সম্পূর্ণ করতে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের বাকি আছে আর মাত্র সাত মাস। অথচ নোয়াখালীর একটি অংশে ভ‚মি অধিগ্রহণ কার্যক্রম এখনো শুরুই হয়নি। আবার কুমিল্লার অংশের অধিগ্রহণ শেষ হলেও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি সওজকে। ফলে ওই অংশের কিছু এলাকায় কাজ শুরু হয়নি। এতে নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ।

এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, কুমিল্লা অংশে সওজ এ পর্যন্ত যেসব স্থানে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছে, তার সবটুকুই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন উন্নয়নকাজে যদি বিলম্ব হয়, সেটি সওজের কারণেই হবে। একই বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খানের ভাষ্য, মৌজার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে একটি জটিলতা ছিল। এ বিষয়ে ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর সেটি কেটে গেছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে সওজকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন