বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশের ক্ষমতাবানরা বিচারহীনতা উপভোগ করছেন : টিআইবি

দুদকে মেরুদন্ডহীনের বদলে দৃঢ়চেতা পেশাদার নেতৃত্ব নিয়োগের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী এবং অন্য যেকোনোভাবে ক্ষমতাবানরা দেশের বিচারহীনতা উপভোগ করছেন বলে অভিমত দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতাবানরা যেমন বিচারহীনতা উপভোগ করছেন তেমনি ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এক্ষেত্রে কার্যত ক্ষমতার বি-টিমের ভূমিকা পালন করছে। দুর্নীতি দমন ও এর কার্যকর প্রতিরোধে দুদককে ‘কাগুজে বাঘের’ পরিচয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের মেয়াদপূর্তি আসন্ন এবং দুদককে কার্যকর সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে নিতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ, নেতৃত্ব গুণাবলিসম্পন্ন দৃঢ়চেতা ও পেশাদার নেতৃত্বের নিয়োগ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা আশা করি, সরকার আমাদের হতাশ করবে না। ’

‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস-২০২০’ উপলক্ষ্যে টিআইবি করোনা অতিমারির আর্থ-সামাজিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্য খাতসহ সংশ্লিষ্ট সব খাতে সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ ঘোষিত রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন দেখতে চায়। এক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে ‘চুনোপুঁটি’ টানাটানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাাটি।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষ্যে বিবৃতিতে বলা হয়, সুশাসিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে দেশে আইনের শাসন ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তাই সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন, বিচার প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি, গণমাধ্যম ও দেশবাসীর স্বাধীন মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার অক্ষুণœ রাখার জোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাাটি।

‘কোভিড-১৯ সংকটের মাঝে যেসব অভাবিত ঘটনা সামনে এসেছে, তাতে দুর্নীতি যে দেশে সর্বব্যাপী একটা রূপ নিয়েছে এটাই এখন অপ্রিয় সত্য’ এমন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া আর কি করণীয় আছে? সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণা থাকলেও এখনকার বাস্তবতায় তা কী অর্থ বহন করে তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। আমরা দেখতে পাচ্ছি এই ঘোষণার বাস্তবায়ন আটকে যাচ্ছে শুধু চুনোপুঁটিদের টানাটানিতে। অথচ এই পর্যায়েই দুর্নীতির যে ভয়াবহতার কথা আমরা জেনেছি, তাতে এই প্রক্রিয়ার মূল কারিগর- যারা পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়ছে, তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপ্তি ও আর্থিক মূল্য কী হতে পারে, সেটা চিন্তা করলেও আতঙ্কিত হতে হয়। একজন ছাত্রনেতার হাজার কোটি টাকা পাচার করার খবর গণমাধ্যম দিয়েছে মাত্র ক’দিন আগে। আরো ওপরের দিকের দুর্নীতিবাজ নেতাদের অবস্থা তো আমাদের কল্পনার বাইরে। অথচ তাদের কারো বিষয়ে কোনো তদন্ত বা কার্যকর আইনি ব্যবস্থাার খবর তো আমরা কখনও দেখিনি!

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, দুদকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জাতীয় রাজস্ববোর্ড এবং বিশেষ করে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকেও তাঁদের নিরপেক্ষতা, দক্ষতা ও কার্যকরতার দৃশ্যমান উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় গগনচুম্বী অর্থ পাচারসহ সর্বব্যাপী দুর্নীতির রাশ টানা অসম্ভব। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডার বেগমপাড়ায় অর্থপাচার সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যম জানাচ্ছে এই তথ্য খন্ডিত এবং কেবলমাত্র একটি পেশাজীবী গোষ্ঠীর কথাই জানানো হয়েছে। আমরা আশা করব সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কানাডা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে তথ্য চাইবে। একইভাবে মালেয়শিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়, তা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে স্বীকৃত যে পদ্ধতি আছে, তা সরকার অনুসরণ করার মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনাসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনবে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এক্ষেত্রে সফলতার দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। কাজেই একটি ক্ষেত্রে এটি ঘটে থাকলে অন্যক্ষেত্রে কেনো হবে না!

দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে স্বাধীন মতামত ও সংবিধান স্বীকৃত বাক্স্বাধীনতা চর্চা অপরিহার্য উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, গণমাধ্যম ও দেশবাসী সরকারের প্রতিদ্ব›দ্বী নয়, বরং সহযোদ্ধা। অথচ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালাকানুনসহ অন্য সব আইনের অপব্যবহার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে। দেশে মৌখিকভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রচার থাকলেও বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। তাই অবিলম্বে মুক্ত সাংবাদিকতা ও সাধারণের মতপ্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি, সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে একটি সুশাসিত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সনদ’ অনুমোদিত হয়। প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন