শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

পৃথিবীব্যাপী যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠলো তখনই একটি ঐক্য ও সংহতির প্ল্যাটফর্ম তৈরির মনোভাবের সূচনা ঘটে। তার সূত্র ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ‘জাতিসংঘ’ নামক সংস্থার যাত্রা শুরু হলো। সানফ্রানসিস্কোতে ১৯৪৫ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৬ জুন আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রশ্নে ‘বিশ্বের জাতিসমূহের সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ সনদ রচনা করেন। অবশ্য ১৯৪৪ সালে আগস্ট-অক্টোবর ওয়াশিংটনে ডাম্বার্টন ওকসের বৈঠকে চীন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিবর্গের প্রস্তাবাবলীর ওপর ভিত্তি করে এ সনদ গড়ে ওঠে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ৫০টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন সনদটি অনুমোদন ও স্বাক্ষর করেন। পোলান্ড সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও পরে এতে স্বাক্ষর প্রদান করে প্রথম স্বাক্ষরকারী ৫১টি রাষ্ট্রের একটিতে পরিণত হয়। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর চীন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও সাক্ষরকারী অন্যান্য দেশের অধিকাংশ কর্তৃক সনদ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ: ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে এবং প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন, যা সেদিন বিশ্ববাসীর কাছে ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সার্থকতা প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১৯৭৯-১৯৮০ সালে বাংলাদেশ প্রথম নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পরবর্তী ২০০০-২০০১ সালে দ্বিতীয় বার এ পদ লাভ করে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্যপদ লাভ করে ১৯৭৬-৭৮, ১৯৮১-৮৩, ১৯৮৫-৮৭, ১৯৯২-৯৪ এবং ১৯৯৬-৯৮ মেয়াদে। বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) এর সদস্যপদ ১৯৭২ সালে ১৭ মে লাভ করে। আন্তর্জাতিক সংস্থা (ওখঙ) এর সদস্যপদ লাভ করে ১৯৭২ সালের ২২ জুন। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ) এর সদস্যপদে ১৯৭২ সালের ১৩ নভেম্বর ভূষিত হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের চাঁদার পরিমাণ .০১ শতাংশ। পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে আজকের জাতিসংঘ বিশ্বের সকল দেশ ও জনগণের সেবায় তুলণামূলক বেশি নিয়োজিত রয়েছে। এ সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য আলোচনা করা হল:

১. নিউইয়র্ক, জেনেভা, নাইরোবি ও ভিয়েনায় সচিবালয় এবং ৫টি আঞ্চলিক কমিশনের কার্যক্রম ভিত্তিক জাতিসংঘের মূল কাজ পরিচালিত হয়।

২. জাতিসংঘ ব্যবস্থার কাজের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ নিয়োজিত রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তায় আত্মনির্ভরতার সামর্থ্য গড়ে তুলতে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষা, অনাহার ও রোগব্যাধি থেকে শিশুদের রক্ষা, উদ্বাস্তু ও দুর্যোগ উপদ্রুতদের ত্রাণ সহায়তা দান, বিশ্বব্যাপী অপরাধ, মাদক ও রোগব্যাধিরোধ এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও স্থলমাইনের দীর্ঘ মেয়াদী হুমকি কবলিত দেশসমূহকে সহায়তা করা।

৩. জাতিসংঘের নিউইয়র্ক সদর দফতরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার লোক কাজ করে। বৃহত্তর জাতিসংঘ পরিবারে সচিবালয় এবং ইউনিসেফের মতো ২৯টি সংগঠন রয়েছে। আর সামগ্রিকভাবে এ বৃহত্তর জাতিসংঘ ব্যবস্থায় ৫০ হাজারের বেশি লোক কর্মরত রয়েছে।

৪. জাতিসংঘের কোনো সেনাবাহিনী নেই। শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে এমন সংঘাত বন্ধের জন্য সরকারগুলো স্বেচ্ছায় সেনা ও অন্যান্য কর্মচারীরা জোগান দেয়। কখন ও কোথায় শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা হবে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যবর্গ।

৫. সদস্য দেশগুলো শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ঝুঁকির ভাগীদার। ১৯৪৮ সাল থেকে ৮৫টি দেশের প্রায় দু’ হাজার লোক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষার কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মারা গেছে।

৬. সচিবালয়ের অভ্যন্তরে এবং সচিবালয় ও অন্যান্য অভিন্ন ব্যবস্থার সংগঠন ও সুশীল সমাজের মধ্যে এক ব্যাপক সমন্বয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে এসব ম্যান্ডেট পরিচালনায় জাতিসংঘের প্রয়াস জোরদার হয়েছে (নির্বাহী কমিটি, আবাসিক সমন্বয়কারী, মানবিক সমন্বয়, জাতিসংঘ উন্নয়ন সহায়তা সমন্বয়)।

৭. জাতিসংঘ এবং তার সংস্থা, তহবিল ও কর্মসূচীগুলো প্রধানতUNICEF, UNDP, UNFPA, WFP, WHO কে স্বাস্থ্যসেবা স্যানিটেশন, কৃষি ও খাদ্য বিতরণের মতো ক্ষেত্রে দেশগুলোকে সহায়তা দানে কয়েকশ’ কোটি ডলার ব্যয় করতে হয়।

মানবাধিকার: বিশ্বের মানবাধিকার প্রসঙ্গটি আজকের মূল আলোচ্য বিষয়। ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের পর ফ্রান্সে আইন পরিষদ প্রতিষ্ঠা হয়। যার মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষের অধিকার সম্পর্কিত কিছু নিয়মাবলী সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষণা করা হয় (যাকে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র বলে)। এ বিষয়ে ইংরেজি অনুবাদ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Tomoush Pain (১৭৩৭-১৮০৯) সর্বপ্রথম Human Rights (মানবাধিকার) পরিভাষাটির প্রচলন করেন। জাতিসংঘের বাংলাদেশে অবস্থানরত দূতাবাস কর্তৃক প্রকাশিত মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত ব্যাখ্যায় বলা হয়, এ অধিকার ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য। এ অধিকার সবার জন্য সমান। এ অধিকার কারো বংশ মর্যাদা, অর্থ সম্পদের নিরিখে বিচার্য নয়। এ অধিকার কেউ কাউকে দেয় না। এটি কারো দয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়। মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে এর ক্রমবিকাশের ধারা দেখানো হয়। যথা: ১২১৫ খ্রিস্টাব্দের Magnacarta (Keystone of English liberty) বলে কথিত ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দেPetition of Rights. ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দে Bill of Rights. ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে Universal Declaration of Human Rights তৎ সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট Franklin D. Rosevelt (১৮৮২-১৯৪৫) এর প্রস্তাব অনুসারে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১০ ডিসেম্বর ১৯৪৮ তারিখে এটি ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার ফলে বিশ্বব্যাপী এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। তখন থেকে জাতিসংঘ মানব জাতির সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষ শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এ ঘোষণাপত্রের পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৩০টি, যা দুই দিকে বিভক্ত। প্রথমত, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার। নিম্নে প্রকাশিত জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের হুবহু কতিপয় নীতিমালা উপস্থাপন করা হল:

১. সকল মানুষ (শৃঙ্খলাহীন) স্বাধীন অবস্থা এবং সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারা সকলে বৃদ্ধি এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারা বুদ্ধি ও বিবেকের অধিকারী। অতএব তারা একে অন্যের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করা উচিত।
২. প্রত্যেকের জীবন ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে।

৩. কাউকে দাস হিসেবে অথবা দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা চলবে না। সকল প্রকার দাস প্রথা ও দাস ব্যবস্থা নিষিদ্ধ থাকবে।
৪. কারো প্রতি নিষ্ঠুর অমানুষিক বা অবমাননাকর আচরণ করা অথবা কাউকে নির্যাতন করা বা শাস্তিভোগে বাধ্য করা চলবে না।
৫. যে সব কাজের ফলে শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলো লঙ্ঘন করা হয় তার জন্য উপযুক্ত বিচার লাভের বা আদালত মারফত কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকের আছে।

৬. কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা পরিবার বসতবাড়ি বা চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়াল খুশিমত হস্তক্ষেপ করা চলবে না। কারো সম্মান ও সুনামের উপর ইচ্ছামত আক্রমণ করা চলবে না।

৭. প্রত্যেকের চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। প্রত্যেকের নিজ ধর্ম অথবা বিশ্বাস পরিবর্তনের স্বাধীনতা রয়েছে। একা অথবা অপরের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে বা গোপনে নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস শিক্ষাদান ও প্রচার করার স্বাধীনতা এ অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া প্রত্যেকের উপাসনা পালনের মাধ্যমে নিজ বিশ্বাস ও ধর্ম পালন করার অধিকার রয়েছে।

৮. নিজের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করার সময় এ কথা প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে যে, তাতে যেন অপরের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি কোনরূপ অস্বীকৃতি বা অশ্রদ্ধা প্রকাশ না পায়। অধিকন্তু একটি গণতান্ত্রিক সম্পর্কে নৈতিকতা, গণশৃঙ্খলা ও সর্বসাধারণের কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে এবং আইন মান্য করে প্রত্যেকে তার অধিকার ও স্বাধীনতার প্রয়োগ করতে পারবে।

আজ অশান্তবিশ্বের এ নাজুক পরিস্থিতিতে দুঃখের সাথে বলতে হয় জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহের প্রতি উল্লেখিত নীতিমালা মেনে চলার জন্য উদাত্ত আহবান জানানো হলেও কোনো প্রকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করার ব্যবস্থা নেই। আমরা একটু সুদৃষ্টি দিয়ে তাকালে দেখতে পাই, গোটা পৃথিবীর কী এক ভয়াবহ সময়কাল অতিক্রান্ত হচ্ছে। শাসক গোষ্ঠির স্টিম রোলারে নারী, পুরুষ ও শিশুদের আর্তনাদের দীর্ঘশ্বাসে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। অত্যাচার, অনাচার, অবিচার ও জুলুমের শিকার আজ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ। জাতিসংঘের ঘোষিত এ মানবাধিকার তাদের হাতে যথেচ্ছ লংঘিত হচ্ছে।

ইসলাম ও মানবাধিকার: আজ সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশ্বের মুসলমানদের নতুন করে চিন্তা করতে হবে। মানব রচিত মতবাদের ব্যর্থতা ও ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে মহান স্রষ্টার বিধানের শরণাপন্ন হয়ে শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বিদায় হজে যে মানবাধিকার ঘোষণা প্রদান করেছেন তা বাস্তবায়ন করার জন্য জোর উদ্যোগ নিতে হবে। আল্লাহর ঐশী গ্রন্থ কুরআনের ভারসাম্যপূর্ণ বাস্তবসম্মত বিধান গোটা প্রাণীজগতের জন্য ন্যায্য অধিকার ও মুক্তির পথ দেখিয়ে দিয়েছে। আজ আমাদের সে পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই। ইসলাম শুধু একজন জীবিত মানুষের অধিকার নয়; মৃত মানুষের অধিকারও নিশ্চিত করেছে। মহানবী (স.) বিদায় হজের ভাষণে দাস প্রথা বিলুপ্ত ও স্বামী-স্ত্রীর অধিকার প্রদান করে প্রমাণ করেছেন মানুষের জন্য এগুলো অপরিহার্য কর্তব্য। নারী জাতিকে অভাবনীয় মর্যাদার আসনে সম্মানিত করেছে ইসলাম, যা ইতিহাসে বিরল। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে মানবাধিকার ও মানব মর্যাদা তা শুধু ঘোষণাতে সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামী বিচার ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, মানুষের কতটুকু অধিকার দিয়েছে কুরআন ও হাদীস।

পরিশেষে বলব, নারী-পুরুষ-শিশুর অধিকার, ন্যায্যবিচার, সুশাসন, ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা, সুষম অর্থ ও বাণিজ্য ব্যবস্থাসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলাম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই কাক্সিক্ষত শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারসহ যাবতীয় অধিকার নিশ্চিত হবে। মানবরচিত কোনো বিধান এসব দিতে পারে না, পারবেও না।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন