শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুয়াশা বায়ুদূষণে জনদুর্ভোগ

আসছে গুঁড়িবৃষ্টি শৈত্যপ্রবাহ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

অসময়ে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা নিচু মেঘমালার সাথে বাতাসে ভাসছে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অত্যধিক জলীয়বাষ্প। এর সাথে ভাসমান দূষিত ধুলোবালি ও ধোঁয়ার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ প্রধান শহর-নগর, বন্দর-গঞ্জ-শিল্পাঞ্চল ছাড়াও দেশের অনেক এলাকায় বায়ুদূষণ অব্যাহত রয়েছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে ব্যাপক বায়ুদূষণে নানামুখী জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও মৌসুমের এ সময়ের স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে রাতের তাপমাত্রা। গতকাল শুক্রবার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল সীতাকুন্ডে ১৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

তবে মেঘ-কুয়াশা-জলীয়বাষ্পে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে সূর্যের তেজ ও আলো। এরফলে দিনের বেলায় তাপমাত্রা গত ক’দিনে অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। রাতের সর্বনি¤œ তাপমাত্রার প্রায় কাছাকাছি এসে গেছে। গতকাল ঢাকায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০.৭ ও রাতের পারদ ১৭.৬ ডিগ্রি সে.। দেশের অধিকাংশ জেলায় দিনের তাপমাত্রা ২২/২৩ ডিগ্রি বা এর নিচে। সর্বোচ্চ পারদ ছিল কক্সবাজারে ২৭.৫ ডিগ্রি সে.।
পঞ্জিকার পাতায় শীতঋতু পয়লা পৌষ (১৬ ডিসেম্বর) থেকেই আসছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। মেঘ-বৃষ্টি ও জলীয়বাষ্প কেটে গেলেই শীত কামড় বসাবে। তখন রাত থেকে সকাল পর্যন্ত তাপমাত্রার পারদ নামতে পারে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এরআগে দেশের দুয়েক জায়গায় হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহে বিক্ষিপ্ত গুঁড়িবৃষ্টি ঝরেছে। জানান দিচ্ছে পৌষের আগমনী এবং শীত জেঁকে বসার আলামত।
আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এমনকি কুয়াশা কোথাও কোথাও বিকেল পর্যন্ত অর্থাৎ দিনভর অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া থাকারই সম্ভাবনা। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলে হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরের ৫ দিনে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে গতকাল রাত ৮টায় ঢাকায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) ছিল আকুওয়েদার’র পর্যবেক্ষণে ২৪৯। চট্টগ্রামে ১৮৭। ঢাকায় বায়ুমান মাত্রা আইকিউএয়ারের তথ্য মতে ২০৬। যা বিশে^র গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণে কিরগিস্তান ও মঙ্গোলিয়ার পরই ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। ঢাকায় বায়ুদূষণ ক্রমাগত বেড়ে গিয়ে আজ শনিবার ২৫৯, রোববার ৩৫৩, সোমবার ৩১১-এ দাঁড়াতে পারে এমনটি পূর্বাভাস আকুওয়েদার’র। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ক্ষতিকর। অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা জলীয়বাষ্পের হার ছিল ৭৭ শতাংশ। সকালে তা ৯২ শতাংশ।
মেঘ-কুয়াশা-জলীয়বাষ্পের সাথে বাতাসে ভেসে চলা ধুলোবালি ও ধোঁয়ার মারাত্মক দূষণের কারণে বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে। যেমন- শ্বাসকষ্ট-হাঁপানি, সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ¦র, গলাব্যথা, ফুসফুস, সাইনাস, টনসিলের জটিলতা।
ঘন কুয়াশা ও জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে নৌপথ, সড়ক মহাসড়কে যোগাযোগ পরিবহন ব্যাহত এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মাঝরাত থেকে সকাল, দুপুর গড়িয়ে অনেক জায়গায় প্রায় দিনভর গুঁড়িবৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে। কাছাকাছি দৃষ্টিসীমা আটকে যাচ্ছে। সেই সাথে উত্তর-পশ্চিম দিকের হিমালয় পাদদেশ থেকে আসা হিমেল কনকনে হাওয়ায় বিশেষত উত্তরাঞ্চলে বেড়েছে শীতকষ্ট। বিরূপ আবহাওয়ায় হতদরিদ্র দিন এনে দিনে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।

চট্টগ্রাম বহিনোঙরে মালামাল পরিবহণ ব্যাহত
রাত থেকে সকাল পেরিয়ে এমনকি দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙরে আমদানিকৃত মালামাল ওঠানামা, লাইটারিং কার্গো জাহাজে খালাস ও পরিবহণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সেই সাথে বহিনোঙর থেকে কর্ণফুলী চ্যানেল হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে সিডিউল অনুসারে জাহাজবহরের আসা-যাওয়া বিঘ্নিত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিপিং কোম্পানি, এজেন্টগণ এ অবস্থায় পাইলটিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।
গত কয়েকদিন যাবত ঘন কুয়াশার কারণে বন্দরে জাহাজের সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঘন কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে পণ্যসামগ্রী খালাস শেষে বহির্নোঙরে চলে যায় ৬টি জাহাজ। সন্ধ্যা নাগাদ বহির্নোঙর থেকে বন্দরের সিসিটি-১, সিসিটি-৩ এবং এনসিটিতে ৩টি জাহাজ আমদানি চালান নিয়ে ভিড়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পাইলটিং ব্যবস্থা এবং টাগবোটগুলো সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন