বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনার মধ্যে বাড়ছে ডেঙ্গু

অক্টোবরের চেয়ে নভেম্বরে ৩ গুণ বেশি রোগী শনাক্ত নগরবাসীর অভিযোগ নিয়মিত হয় না পরিচ্ছন্নতা অভিযান দেয়া হয় না মশার ওষুধ

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

দেশে চলছে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ। করোনা সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রা। এর মধ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব। গত অক্টোবর মাসের চেয়ে নভেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৩ গুণ বেড়েছে। অক্টোবরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬৩ নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪৭ জনে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ জন। করোনার মধ্যে ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ায় চরম উদ্বেগে রাজধানীবাসী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে যদি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তবে তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে কর্মসূচি ও জনগণের মাঝে সচেতনতা খুবই জরুরি। সমন্বিতভাবে দুই সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এ বছরের প্রায় পুরোটা সময় আসলে করোনাভাইরাস নিয়েই সবার চিন্তা ছিল। এটি নিয়ে ভাবতে গিয়ে অন্যান্য রোগের বিষয়ে আসলে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে ডেঙ্গু রোগ এখন বাড়ছে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এটা বলা যেতে পারে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু রোগীর শনাক্ত বাড়ছে। কারণ ডেঙ্গু পিক টাইমে কিন্তু অনেকেই হাসপাতালে যায়নি করোনা পরিস্থিতির কারণে। আসলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যেতে হবে সারাবছর। এর কোনো বিকল্প নেই।

ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে সিটি করপোরেশন মাঝে মাঝে কর্মসূচি গ্রহণ করে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নভেম্বরের ১০ তারিখ থেকে ১০ দিনের চিরুনি অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এবং অন্যান্য অপরাধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করেছে। বিভিন্ন জলাশয়, খাল এসব পরিষ্কার করে মশা নিধনে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। তবে নগরবাসীর অভিযোগ এসব পরিচ্ছন্নতা অভিযান সব সময় করা হয় না। হঠাৎ হঠাৎ করা হয়। মশার বংশবিস্তার রোধে যে ওষুধ ছিটানোর কথা তাও নিয়মিত করা হয় না। এ কারণে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমছে না।

মোহাম্মদপুর নূরজাহান রোডের বাসিন্দা শাহিন আলম বলেন, এখানে দীর্ঘদিন যাবৎ মশার ওষুধ দেয়া হয় না। মাঝে মাঝে মূল সড়কে স্প্রে করা হয়, অলিগলিতে কেউ আসে না। এ ছাড়া ময়লা আবর্জনাও পরিষ্কার করা হয় না।
পূর্ব রামপুরার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, এই এলাকায় মশার ওষুধ দিতে কেউ আসে না। আমিও কোনো দিন কাউকে দেখি না। মূল সড়কের ময়লা পরিষ্কার করা হলেও অলি গলির ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় না।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ রোধে আমারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। গত নভেম্বরেও চিরুনি অভিযান চালিয়েছি। বিভিন্ন খাল, জলাশয় পরিষ্কার করে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। আমরা নগরবাসীকে ডেঙ্গু, চিকন গুনিয়াসহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত রাখতে চাই। লার্ভা নিধনের জন্য মশার প্রজননের ৬২৯টি হটস্পটে পৌর কর্মীরা ‘নোভালুরন’ নামে চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড কীটনাশক প্রয়োগ করে। আশা করছি ডেঙ্গুর সংক্রমণ এবার কমে আসবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ্ ইমার্জেন্সী অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, চলতি বছর ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩২৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে নতুন ৩ জন রোগী। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৬২ জন। এর মধ্যে রাজধানীর ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৮ জন। মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস শেষে কমতে শুরু করলেও চলতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে দেশে ১৬৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। তবে নভেম্বর মাসে মোট ৫৪৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। যা আগের মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ৩৫ গুণ বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন। ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর ২০১৯ সালের জুন মাসেই ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ডেঙ্গু সংক্রমণ অব্যাহত থাকে জুলাই মাসেও। আগস্ট মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। পরে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসেও দেশে ১৯৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে। ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। পরবর্তী সময়ে মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অক্টোবর মাসে ১৬৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু নভেম্বরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই মাসে সর্বমোট ৫৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, জেলা শহরগুলোর মধ্যে চলতি বছর যশোরে সর্বোচ্চ ৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯৪ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে রাজধানীতেই চিকিৎসাধীন ৮২ জন। রাজধানীতে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এছাড়াও রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ১৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ঢাকা ছাড়া এই বিভাগের অন্যান্য জেলায় ৪২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। খুলনা বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, বরিশাল বিভাগে তিনজন, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগে একজন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রংপুর বিভাগে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আটজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি চারটি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Jaker ali ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
আমরা করোনাকে হারিয়ে দিয়ে ডেঙ্গুর থেকেও শক্তিশালী
Total Reply(0)
Neamat Ullah ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
Ohh Allah save us from dengue,,
Total Reply(0)
Habib ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
Again panic along with pandemic
Total Reply(0)
Gias uddin ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
বিপদে হেফাজত কর আমাদের করি মোনাজাত তোমার কাছে
Total Reply(0)
Kader sheikh ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
লেহালুয়া, এখনো সময় আছে সচেতন হোন, বেশি বেশি আল্লাকে ডাকুন।
Total Reply(0)
Murad ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
কি আর বলবো মানুষ কিছুই মেনে চলে না সবাই সবার মতো করে চলছে,, তাই তো একের পর এক গুজব ছড়াচ্ছে
Total Reply(0)
Unit chief ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
যে কোন সময় মৃত্যু এসে যাবে....মৃত্যুর জন্য আপনি আমি কতোটা প্রস্তুত??
Total Reply(0)
Yusuf samin ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৩৯ এএম says : 0
এক মহামারীতেই জীবন শেষ, আরেক দুর্যোগের বাংলাদেশ
Total Reply(0)
Luna mirza ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
ভাই আমরা বিপদে আছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন