নাগর্নো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে ছয় সপ্তাহের ভয়াবহ লড়াই থামাতে হওয়া শান্তি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। এ ঘটনায় শনিবার আর্মেনিয়ান সেনাদের ‘লোহার মুষ্টি’ দিয়ে চূর্ণ করার হুমকি দিয়েছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট।
নাগর্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজারবাইজানীয় সামরিক বাহিনী শুক্রবার গভীর রাতে একটি আক্রমণ চালিয়েছিল এবং এতে আঞ্চলিক তিন আর্মেনিয়ান সেনা সদস্য আহত হয়েছেন। শান্তি চুক্তি পর্যবেক্ষণ করতে এই অঞ্চলে মোতায়েন করা রাশিয়ান শান্তিরক্ষীরা শুক্রবার গদরুত অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের খবর জানিয়েছে। শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রতিবেদনে অবশ্য সরাসরি কাউকে দোষ দেয়া হয়নি। পরেরদিন আর্মেনিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও অভিযোগ করে যে, শনিবার আজারবাইজানীয় সেনাবাহিনী নাগর্নো-কারাবাখের দক্ষিণে আক্রমণ চালিয়েছে।
আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ শনিবার নতুন সংঘর্ষের জন্য আর্মেনিয়াকে দোষারোপ করে প্রতিক্রিয়া জানিছেন এবং ‘লোহার মুষ্টি দিয়ে তাদের মাথা গুড়িয়ে দেয়ার’ হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আর্মেনিয়ার এটি আবার শুরু করা উচিত না। তাদের খুবই সতর্ক হওয়া উচিত এবং কোনো সেনা অভিযানের পরিকল্পনা না করা উচিত। এই মুহূর্তে, আমরা তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করব। এটি এখন কারো কাছে গোপনীয় নয়।’ আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে যে, তাদের বাহিনী আর্মেনিয়ান ‘উস্কানি’র জবাব দিয়েছে। তারা সবসময় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।
আর্মেনিয়ান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাদরুত অঞ্চলের একমাত্র জনবসতি হিন টেগার এবং খসতাবার্ড গ্রামগুলির কাছে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, যা এখনও আর্মেনিয়ান বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারা লক্ষ করেছে যে এই দুটি গ্রাম আজারবাইজানীয় সেনাবাহিনী দ্বারা সম্পূর্ণভাবে ঘেরাও করা হয়েছে, যা তাদের দিকে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করে। রাশিয়া শান্তিরক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র গোলাগুলির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুই পক্ষের মধ্যে অটোমেটিক অস্ত্রের মাধ্যমে গুলি বিনিময় হয়। তিনি দুইপক্ষকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানান।
এদিকে শনিবার সকালে নাগোরনো-কারাবাখের বাহিনী দাবি করে, আজারবাইজানি সেনার হামলায় তাদের তিনজন নিরপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন। অপরদিকে আর্মেনীয় সেনাবাহিনীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগোরনো-কারাবাখ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন দুটি গ্রামে হামলা চালিয়েছে আজারবাইজান।
প্রায় ত্রিশ বছর বিরোধপূর্ণ নাগোরনো-কারাবাখ আর্মেনীয় নৃ-গোষ্ঠীদের দখলে ছিল। ওই অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত। ছয় সপ্তাহের টানা যুদ্ধের পর ১০ নভেম্বর রাশিয়ার হস্তক্ষেপে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। এতে ওই অঞ্চলটির বেশিরভাগ আজারবাইজানকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় আর্মেনিয়া। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন