শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

হাজার হাজার শ্রমিকের মানবেতর জীবন

একযুগ ধরে বন্ধ বেসরকারি পাঁচ পাটকল

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

পাট উৎপাদন নির্ভরশীল হওয়ায় ৭০’র দশকে রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যার পাড়ে গড়ে ওঠে ৮টি পাটকল। এসব পাটকলগুলোকে ঘিরে ১৫-২০ হাজার শ্রমিকের জীবিকার সন্ধান মেলে। কালের বিবর্তনে ও নানা কারণে কমতে থাকে পাটের উৎপাদন। মিলগুলো গুণতে থাকে লোকসান। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত¡ একটি ও বেসরকারি ২টি ছাড়া বাকি ৫টি পাটকল গত এক যুগ আগেই বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ মিলগুলোর প্রায় ১১ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। এসব শ্রমিক ও তাদের পরিবার অর্থাভাবে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এমনকি সংসার চালাতে বিক্রি করতে হয়েছে ভিটেমাটির পাশাপাশি স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কারও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলখ্যাত রূপগঞ্জ উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৮টি পাটকল রয়েছে। নবাব আশকারী জুট মিল, মার্সিকি জুট মিল, সাত্তার জুট মিল, এলাইড জুট মিল, গাউছিয়া জুট মিল, উত্তরা জুট মিল ও নবারন জুট মিলসহ ৭টি পাটকল গড়ে ওঠে। এছাড়া জুটো ফাইবার নামে তারাবো এলাকায় একটি সরকারি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল গড়ে ওঠে। বেসরকারি পাটকলের মাঝে উত্তরা জুট মিলস ও নবারুন জুট মিল ছাড়া বাকি পাটকলগুলো লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় একযুগ আগেই। বাকি দুটো চলছে খুঁড়িয়ে-খুড়িয়ে।

বেসরকারি পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে শিল্পাঞ্চলখ্যাত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১১ হাজার হাজার পাটকল শ্রমিক এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদের মাঝে সিংহভাগ ভিটেমাটি বিক্রি করে আজ নিঃস্ব। পাটকলগুলো বন্ধের প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেলেও মালিকপক্ষের কাছ থেকে সিংহভাগ শ্রমিকই ব্যক্তিগত তহবিলের টাকা, বকেয়া বেতন ও সার্ভিসের টাকা পাননি বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন। এছাড়া মিল বন্ধের পর সরকারিভাবে অথবা মালিকপক্ষও শ্রমিকদের কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেননি বলেও তারা জানান। সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে রূপগঞ্জ উপজেলার বন্ধ হওয়া পাটকলগুলোতে কাজ করা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। স্থানীয় শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, বিরাব এলাকার নবাব আশকারী জুট মিলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতো। গত এক যুগ আগে লোকসান দেখিয়ে পাটকলটি কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়। নবাব আশকারী জুট মিলের ৫ হাজার শ্রমিকের মাঝে সিংহভাগ শ্রমিক এখনো তাদের ব্যক্তিগত তহবিলের টাকা পাননি বলে জানা গেছে। এছাড়া কেউ কেউ সার্ভিস চার্জ ও কয়েক সপ্তাহের বেতনও পাননি বলে অভিযোগ করে শ্রমিকরা।

কাঞ্চন এলাকার মার্সিকি জুট মিলে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করতো। প্রায় ১০ বছর আগে পাট সঙ্কটের কারণে লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। এটিতেও শ্রমিকরা তাদের সার্ভিস চার্জ ও ব্যক্তিগত তহবিলের টাকা পাননি। হাটাবো এলাকার সাত্তার জুট মিলে ১ হাজার ৭শ’ শ্রমিক কাজ করতো। লোকসানের কারণে প্রায় ১২-১৩ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। ব্যক্তিগত তহবিলের পাওনা ১৬ ভাগ টাকার মধ্যে মাত্র ৬ ভাগ দিয়েই মালিকপক্ষ জোর করে তাদের নিকট থেকে কাগজে সই করিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকরা।

উপজেলার বানিয়াদি এলাকার এলাইড জুট মিলটি গত ১০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। এ মিলে প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিক কাজ করতো। মিলটি বন্ধের পর গত ২০১৮ সালে প্রথম দিকে দেড় শতাধিক শ্রমিক নিয়ে পুনরায় মিলটি চালু করা হলেও পাট সঙ্কট ও চাষি না থাকায় লোকসানের কারণে গত দেড় মাস আগে এটি আবারো বন্ধ হয়ে হয়ে যায়। তবে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন তারা তাদের বেতন ও ব্যক্তিগত তহবিলের টাকা পুরোপুরি পাননি। তবে এ ব্যাপারে এলাইড জুট মিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের পূর্ণ পাওনাদি পরিশোধ করে দেয়া হয়েছে।

মুড়াপাড়া এলাকার গাউছিয়া জুট মিলে ১৪শ’ শ্রমিক কাজ করতো। গত ১৪ বছর আগে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এ পাটকলটিতে শ্রমিকরা পাওনাদি সঠিকভাবে পাননি। দড়িকান্দির এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলী গাউছিয়া জুট মিলে কাজ করতো। পাটকলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কয়েক বছর পরই তার মৃত্যু হয়। তিনিও তার প্রাপ্য পাওয়াদি ঠিক মতো পায়নি বলে জানান নিহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে পারভেজ।

পাটকল শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পাটকল মালিকদের পক্ষ থেকে ও সরকারিভাবে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। পাটকল শ্রমিকদের একটাই দাবি সরকারিভাবে তাদের কর্মসংস্থান ও পাটকল কর্তৃপক্ষ যাতে করে তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করে দেন। এ ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন