শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন : ইবাদত কবুলের শর্ত কি?

উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি আবুল কাসেম | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

উত্তর : মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়ালার ইবাদতও দাসত্ব করা। পবিত্র কোরআনে তিনি ঘোষণা করেছেন, আমি মানুষ এবং জিনজাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত:৫৬) আর ইবাদত কবুল হলে সফলতা সুনিশ্চিত। কিন্তু আমাদের কজনের ইবাদত কবুল হয়? সুতরাং এমনভাবে ইবাদত করতে হবে যেন তা আল্লাহর নিকট কবুল হয়। যে কোনো ইবাদত কবুল বা গ্রহনযোগ্য হওয়ার জন্যে তিনটি প্রধান ও মৌলিক শর্ত রয়েছে।

প্রথম শর্ত: ইখলাসের সহিত ইবাদত করা । ইখলাস মানে একমাত্র আল্লাহকে খুশি ও সন্তুষ্ট করার জন্যে ইবাদত করা। ইখলাস হলো, ইবাদতের প্রাণ। প্রাণহীন দেহের যেমন মূল্য নেই, তেমনি ইখলাস ছাড়া ইবাদতের ও কোনো দাম নেই। । যদি ইবাদতের সঙ্গে মনের অভিপ্রায়, খেয়াল-খুশি,যুক্ত হয় তাহলে সেটা ইখলাস পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে এবং সে ইবাদত আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না ।আল্লাহ তায়ালা বলেন, তাদের কেবল এনির্দেশ দেয়া হয়েছে,তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁর জন্যে দীনকে একনিষ্ঠ করে। (সূরা বায়্যিনাহ:৫) অনত্র ইরশাদ হয়েছে, হে রাসূল! আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামাজ,আমার কাজকর্ম,আমার জীবন, আমার মরন,সবই মহাবিশ্বের পালনকর্তার জন্য (সূরা আনআম:১৬২) হাশরের ময়দানে আল্লাহ পাক অনেক বড় বড় রিয়াকার (লোক দেখানো ইবাদতকারী)কে প্রতিদান না দিয়ে বলবেন, তোমরা আমার সন্তুষ্টির জন্যে ইবাদত করোনি বরং তোমরা তো ইবাদত করেছো মানুষ তোমাদেরকে বড় আবেদ বলার জন্যে। আর দুনিয়াতে তা বলা হয়ে গেছে। তেমনি হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, নিয়্যতে গড়বড় থাকলে ও ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া যায় না। যদিও নিয়তকৃত বিষয়টি অর্জিত হয়। হযরত উমর (রা.)বলেন, আমি প্রিয়নবি (সা.)কে বলতে শোনেছি যে,আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যতের উপর। সুতরাং যে ব্যাক্তি দুনিয়া লাভের জন্যে অথবা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্য হিজরত করবে সে তা পেয়ে যাবে আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও রাসূলকে পাওয়ার জন্যে হিজরত করবে সে ও তাঁদেরকে পাবে।( সহিহ বুখারি:৩৮৯৮)

দ্বিতীয় শর্ত: হালাল খাবার ভক্ষণ করা। একজন মুমিন বান্দাকে আকিদা-বিশ্বাস ও ইবাদতের ক্ষেত্রে যেমন কিছু বিধিবিধান,কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়, ঠিক এমনিভাবে তার জীবন চলার যত উপকরণ তাতে ও কিছু বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। এর ভেতরে রয়েছে তার খাবার-দাবার ও ।খাবারের বিধান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে রাসূলগণ! পবিত্রবস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত। (সূরা মুমিনুন :৫১)

অনুরুপ হাদিস শরিফে নবিজি(সা.) বলেন, দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত, এলোমেলোকেশি এক লোক আকাশ পানে হাত দারাজ করে দোয়া করে হে প্রভু!হে প্রতিপালক!অথচ তার পানাহার হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবিকা ও হারাম। এমতাবস্থায় কিভাবে তার দোয়া কবুল হবে। (জামে আত তিরমিজি:২৯৮৯) হালাল খাবার ভক্ষণ, এমন মৌলিক বিষয় যে, তা গ্রহণ না করলে জান্নাতেই যাওয়া যাবে না। হাদিস শরিফে এমন কঠোর বাণী ও উচ্চারিত হয়েছে। তৃতীয় শর্ত: সুন্নত পদ্ধতিতে ইবাদত করা।ইবাদত বা আমল কবুল হওয়ার জন্য প্রিয়নবি( সা.) এর অনুসরন ও অনুকরণ জরুরি।কোনো মনগড়া পদ্ধতিতে ইবাদত করলে তা কবুল হবেনা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো আর যা থেকে তিনি তোমাদের নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাকো। (সূরা হাশর :৭) হাদিস শরিফে নবিজি ইরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি এমন আমল করলো যার মধ্যে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত বলে গণ্য হবে। (সহিহ মুসলিম: ৪৩৮৫) নবিজি (সা.)প্রতিটি আমলের শুধু তরিকাই বলে দেননি বরং প্র্যাক্টিক্যালী শিক্ষা ও দিয়ে গেছেন। রাসূল (সা.)একটা ইবাদত করতেন আর বলতেন আমি যেভাবে করি তোমরা ও সেভাবে করো। যেমন নামাজ সম্পর্কে তাঁর বাণী, তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখো সেভাবে নামাজ পড়ো। (সহিহ বুখারি:৭২৪৬) আল্লাহ আমাদেরকে বিশুদ্ধভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Afia Sarkar ২৪ জুলাই, ২০২১, ৯:৫৪ এএম says : 0
Beautiful
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন