বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মোবারকগঞ্জ চিনিকল

উৎপাদন খরচ ২০৮ বিক্রি ৬০ টাকা

আশিকুর রহমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দক্ষিণের অন্যতম ভারি চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠান মোবারকগঞ্জ সুগার মিল। ২০১৯-২০২০ মাড়াই মৌসুমে লোকসান হয়েছে ৯৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ মৌসুমে ৯৪ কর্মদিবসে এক লাখ ৩৮ হাজার ৮০৩ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ৭ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন। বছর শেষে চিনির প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়ে ২০৮.৪২ টাকা। আর ২০৮ টাকা উৎপাদন খরচের এ চিনি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬০ টাকা কেজি।
যদিও মিল কর্তৃপক্ষ বলছে ব্যাংক ঋণের সুদ বাদ দিয়ে ২০১৯-২০২০ মৌসুমে চিনির উৎপাদ খরচ হয়েছিল ১২৪ টাকা। এর আগের ২০১৮-১৯ মৌসুমে সুদ বাদে উৎপাদন খরচ হয়েছিল ১৩৪ টাকা এবং সুদসহ খরচ হয়েছিল ১৯৪ টাকা।

এর আগে ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে মিলটির লোকসান গুনতে হয় ৭৭ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ওই মৌসুমে মিলটি এক লাখ আট হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ৫ হাজার ৭৮৫ মেট্রিক টন। ওই বছর প্রতি কুইন্টাল চিনি উৎপাদনে খরচ হয়েছিল ১৯৪১৯.৬৫ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ পড়ে ১৯৪.১৯ টাকা। সে বছর ১৯৪ টাকায় উৎপাদিত চিনি বিক্রি করেছিল ৫৫ টাকায়।
এসব তথ্য দেখে ভুল মনে হলেও মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের চিত্র এমনই। আর দীর্ঘ বছর ধরে এভাবেই চলছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অবস্থিত মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের চিনি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ। যদিও উৎপাদন খরচের এই টাকার অংকটা একেক বছর একেক রকম হয়ে থাকে। ফলে প্রতিবছরই কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম ও গুরত্বপূর্ণ এই ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠানটিকে।

এদিকে মিলের রেকর্ড বই বলছে, ২০১৭-২০১৮ মাড়াই মৌসুমে এসে এই উৎপাদ খরচ ছিল ১৮৯.১২ টাকা। ২০০১৬-২০১৭ মৌসুমে তা বেড়ে হয় ১৯৯.৮ টাকা। তার আগের মৌসুম ২০১৫-২০১৬ তে প্রতিকেজি চিনির উৎপাদন ব্যয় হয়েছিল ১৭৬.৪০ টাকা। উল্লিখিত বছরগুলোতে চিনির কেজি প্রতি বিক্রয় মূল্য ছিল ৫০, ৪৭ ও ৪৫ টাকা। বর্তমানে মিলে কর্মকার্তা ও শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে প্রায় ৯শ’ জন।

বছরের পর বছর ঐতিহ্যবাহি এ মিলটির মোটা অংকের লোকসানের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, চমকপ্রদ সব তথ্য। মিলটির পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা, মোটা অংকের ব্যাংক সুদ প্রদান ও মান্দাতার আমলের ম্যানুয়াল পদ্ধতির কারখানাকে লোকসানের জন্য প্রধানতম কারণ বলছেন মিল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া আখের জাত উন্নয়ন করা গেলে চিনি আহরণের বাড়বে। ফলে লোকসানের ভাগ কিছু কমে আসবে বলেও মত শ্রমিকদের।

অন্যদিকে, চিনি উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক মজুরী খরচ, আখ ক্রয়, মিলে অপরিস্কার আখ সরবরাহ, রস ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত দৈনিক আখ মাড়াই, পরিবহন খরচ, কারখানা মেরামত এবং বয়লারের জ্বালানীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক খাতের খরচ মিটিয়ে প্রতি বছরই বাড়ছে চিনি উৎপাদন খরচের এই অংক। সে তুলনায় বাড়েনি চিনির বিক্রয় মূল্য।

মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীর বলছেন, পুরাতন যন্ত্রপাতি, কৃষক পর্যায়ে আখের মূল্য বৃদ্ধি, জনবল সংকট, শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি ও উৎপাদন ব্যয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্য নির্ধারনের ফলে লোকসান বাড়ছে। সাথে পুঞ্জিভুত মোটা অংকের ব্যাংক ঋণের সুদ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণ বলছেন এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এদিকে অব্যহত এই লোকসানের জন্য সরকারের নীতি-নির্ধারণকেও দুষছেন মিলের কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা।

তবে, চিনিকলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীর সরকাররের নীতি-নির্ধারনকে ভুল বলতে রাজি নয়। তার ভাষ্য, উৎপাদন খরচ বেশি হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর এই খাদ্য পণ্যটি জনসাধারনে মধ্যে সহনীয় রাখতেই সরকার নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন