সে বললো-‘এ কথা তো কোরআনে আছে।’ তিনি বললেন-‘আমি রাসুল (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি।’ অতএব যারা কোরআন মানার দাবি করবে, তাদের হাদিস না মেনে উপায় নেই। হাদিস মানলেই কোরআন মানা হবে এবং সত্যিকারার্থে তারা কোরআনের অনুসারী হবে এবং প্রকৃত মুসলমান হবে।
নির্যাতিত ইমাম বুখারি (রহ.) এবং রাসুল (সা.)-এর যুগে হাদিস লেখার প্রচলন: হাদিসের অস্বীকারকারীরা ইমাম বুখারি (রহ.)-এর ওপর সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে। বলে, তিনিই নাকি রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর ২০০ কিংবা ৩০০ বছর পর সবার আগে হাদিস লিখেছেন এবং মিথ্যা ছড়িয়েছেন। কি দুঃখজনক আশ্চর্য ধরনের মূর্খতা! সত্যিই আপনি নির্যাতিত হে ইমাম বুখারি (রহ.)! তাতে কি? ওরা তো আপনার পূর্বে নবী-রাসুলদেরকেও মিথ্যাবাদী বলতে ছাড়েনি, আপনাকে তো বলবেই। এরশাদ হচ্ছে-‘এরা যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে তোমার পূর্বেও এরা এমন বহু নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, যারা নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিলো এবং এনেছিলো সহিফা ও প্রদীপ্ত গ্রন্থ।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৪)। যে ইমাম বুখারি (রহ.) হাদিস সংকলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেছেন, বিশুদ্ধ হাদিস সংগ্রহ করতে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন, সেই ইমাম বুখারি (রহ.) আজ মিথ্যা অপবাদে আক্রান্ত। ইসলামের শত্রুরা এরূপই বলে এবং করে থাকে।
রাসুল (সা.)-এর যুগে হাদিস লেখার প্রচলন: ইমাম বুখারি (রহ.)-ই সর্বপ্রথম হাদিস সংকলন করেননি বা লিপিবদ্ধ করেননি; বরং রাসুল (সা.)-এর যুগেই কিছু কিছু হাদিস লিপিবদ্ধ শুরু হয়েছিলো। যেমনটি তিনি নিজেই হাদিস সংরক্ষণ করার তাগিদও দিয়েছিলেন। বিদায় হজে ভাষণ দেওয়ার পর বলেছিলেন-‘আমার এই কথাগুলো যারা উপস্থিত, তারা অনুপস্থিত লোকদের কাছে যেনো পৌঁছে দেয়।’ (বুখারি : ৩৪৬১)। জুবাইর বিন মুতঈম (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বিদায় হজে মিনার মসজিদে খায়ফে আমাদের সামনে বক্তব্য রাখলেন। বললেন-‘হে আল্লাহ! সেই বান্দাকে উজ্জ্বলতা দান করুন, যে আমার কথা শুনেছে, মুখস্থ করেছে ও ধারণ করে রেখেছে। অতঃপর যারা তা শোনেনি, তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। কেননা কতক জ্ঞান বহনকারী নিজে জ্ঞানী নয়। আর কতক জ্ঞান বহনকারী তার চেয়ে বেশি জ্ঞানীর কাছে তা পৌঁছে থাকে।’ (১) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন-‘রাসুল (সা.)-এর সাহাবিদের মধ্যে আমার চেয়ে বেশি কেউ হাদিস বর্ণনা করেননি। তবে আবদুল্লাহ বিন আমরের কথা ভিন্ন। কারণ তিনি হাদিস লিখে রাখতেন, আর আমি লিখতাম না।’ (বুখারি : ১/১৯৩)। (২) রাসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের পর একটি ভাষণ দিলেন এবং মুসলিম জাতির জন্য কিছু বিধিবিধান আলোচনা করলেন। তাঁর ভাষণ শেষ হলে আবু শাহ নামে জনৈক ব্যক্তি (যে ইয়ামেন থেকে এসেছিলো) বললো-‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এগুলো লিখে দিন।’ রাসুল (সা.) বললেন-‘তোমরা আবু শাহকে হাদিস লিখে দাও।’ (বুখারি : ২২৫৪)।
(৩) আবু জুহাইফা বলেন, আমি হজরত আলী (রা.)-কে প্রশ্ন করলাম-‘আল্লাহর কিতাব ছাড়া কোনো কিতাব কি আপনার কাছে আছে?’ তিনি বললেন-‘আল্লাহর কিতাব ছাড়া কোনো কিতাব আমার কাছে নেই। তবে আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান যা কোনো মুসলমানকে আল্লাহ দিয়েছেন এবং এই সহিফার ভেতর যা লেখা আছে।’ আমি বললাম-‘সহিফাতে কি লেখা আছে?’ তিনি বললেন-‘রক্তপণ, বন্দি মুক্তির নিয়ম এবং কাফেরকে হত্যা করার কারণে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না।’ (৪) বুখারির অন্য বর্ণনায় হজরত আলী (রা.) থেকে আরও উল্লেখ আছে, সহিফাতে আরও লেখা আছে, কেউ কাউকে জখম করলে তার বিচার কি পন্থায় করতে হবে, উটের বয়স কতো হলে জাকাত দিতে হবে, মদিনা শরিফের হারাম এলাকার সীমানা কতো দূর? কোনো মুসলমান যদি কাউকে নিরাপত্তা দেয়, তার বিধান কি? আর ঐ নিরাপত্তা লঙ্ঘন করলে তার করণীয় কি? ইত্যাদি।’ (বুখারি : ১০৮, ২৯৩৬; মুসলিম : ১৩৭০)। (৫) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এবং হাকেম (রহ.) আরও বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.)-এর কাছে একটি কিতাব ছিলো, যা তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে লিখে রেখেছিলেন। ঐ কিতাবটির নাম ছিল ‘সহিফা সাদিকা।’ এ সকল বর্ণনা থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়, সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সা.)-এর হাদিস লিপিবদ্ধ করতেন। তাঁদের মধ্যে হজরত আলী (রা.), হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.), হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) অন্যতম। এ ছাড়া আরও অনেক সাহাবি হাদিস লিখে রেখেছিলেন। তাদের প্রত্যেকের কাছে সহিফা ছিলো। বিশিষ্ট গবেষক ও মুহাদ্দিস মুহাম্মদ মোস্তফা আজমি লিখেন-‘প্রায় ৫২ জন সাহাবি হাদিস লিপিবদ্ধ করেছেন। সাহাবায়ে কেরামের পর তাবেঈদের মধ্যেও অনেকে হাদিস লিপিবদ্ধ করেছেন এবং তাদের কাছে সহিফা ছিলো। তাঁদের সংখ্যা প্রায় ১৫২ ছিলো।’ (দিরাসাহ ফিল হাদিসিন নববি ওয়া তারিখে তাদবিনিহি, পৃষ্ঠা : ৯২-১৪২)।
হাদিস না লেখার প্রমাণ ও তার জবাব : বিরুদ্ধবাদীরা হাদিস লিপিবদ্ধ না করা সংক্রান্ত একটি হাদিস পেয়ে খুবই লাফালাফি করে বলে, হাদিস লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। হাদিসটি হলো- হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন-‘তোমরা আমার কাছ থেকে কোনো কিছু লিখো না। যে ব্যক্তি আমার কাছ থেকে কোরআন ছাড়া অন্য কিছু লিখবে, সে যেনো তা মিটিয়ে দেয়। আর তোমরা আমার কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করো। এতে অসুবিধে নেই। যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যারোপ করবে, সে তার ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ১১৩৪৪, মুসলিম : ১৪/২৯১)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন