শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

করোনার এই শীতে শিশুদের রোগ

| প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

সারা বিশ্বেই করোনা মরণ থাবা বসিয়েছে। এথেকে রক্ষা পাচ্ছে না কোনো বয়সের মানুষই। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাই রয়েছে করোনার ঝুঁকিতে। তাইতো করোনার থাবা থেকে বাঁচতে শিশুদের প্রতি একটু বেশি যত্নশীল হতে হবে। শিশুরা নিজেরা নিজের যত্ন নিতে পারে না। তাই তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আপনাকেই হতে হবে তৎপর। কারণ শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে যে কোনো রোগ তাদের সহজে আক্রান্ত করতে পারে।

শিশু মানেই আমাদের খুব আদরের সঙ্গী। মনে রাখতে হবে, শিশুরা কিন্তু বেশী বেশী রোগে আক্রান্ত হয়। কখনও বা সামান্য সর্দিকাশি আবার কখনও পেটের গোলমাল। সে যাই হোক, শিশুরা রোগের কবলে পড়লে ভোগান্তির শেষ নেই। আবার ঋতু বদলের প্রভাব তো আছেই।

* শিশুর সর্দিকাশিঃ-
শিশুদের বোধয় সবচেয়ে বেশি এই রোগটাই হয় । নাক দিয়ে পানি, ঘন ঘন হাঁচি, পিপাসা, সামান্য জ্বর , গা হাত পা ব্যথা, ইত্যাদি লক্ষণ থাকে। কোনও কোনও শিশু আবার ছটফট করে আবার কেউ চুপচাপ শুয়ে থাকে। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে ভাইরাস সংক্রমণ। সাধারনত ৩ থেকে ৫ দিন পরে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। পথ্য হিসেবে সহজ পাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। সঙ্গে প্রচুর তরল। ঠান্ডা লাগে এমন কিছু খাওয়া যাবে না। লবন পানিতে গরগরা করলে ভাল।

* হোমিও চিকিৎসাঃ একোনাইট ন্যাপ, ব্রায়ওনিয়া, ফেরাম ফস ৬ক্স, কালি মিউর ৬ক্স, টিউবারকুলিনাম ২০০, কালি কারব ২০০, ইনফ্লুএঞ্জিয়াম ৩০ বা ২০০, কালি ফস ৬এক্স, মার্ক সল ৩০, স্যাবাদিলা ৬, অ্যালিয়াম সেপা ৩০, ন্যাট্রাম মিউর ৩০ ইত্যাদি লক্ষনভেদে দেয়া যেতে পারে।

* শিশুর পেটের অসুখঃ সর্দি কাশির পর পেটের অসুখে শিশুরা বেশি ভোগে। পেট ব্যাথা, পেটে ভুটভাট শব্দ, ব্যথা এপাশ ওপাশ করে, শিশু বিছানায় ছটফট করে, কাঁদে, পাতলা পায়খানা, খিদে কম ইত্যাদি
কার্বো ভেজ ৩০, নাক্স ভম ৩০, পালসেটিলা ৬ বা ৩০, কলোসিন্থ ৩০, মার্ক সল ৩০, কামোমিলা ৩০, কষ্টিকাম ৩০, অ্যালুমিনা ২০০ লক্ষণের উপর আসতে পারে।

কিছু নিয়ম জেনে নেয়া যাক শিশুদের কোন বিষয়ে নজর দিতে হবে জেনে নিন ঃ-
* পর্যাপ্ত ঘুম- শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত ঘুম খুবই কার্যকরী। ঘুম কম হলে মানসিক চাপ বেড়ে যায়, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন শিশুদের অন্তত ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।

* ঘরে বসে যত্ন নিন-এ দুঃসময়ে নবজাতকের জন্মের পর থেকেই ঘরে বসে যত্ন নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা বাইরে শিশুকে যতটা কম নেয়া যায় ততটাই ভালো। অনেকে আবার জন্মের পরপরই শিশুকে গৃহবন্দি করে ফেলেন।

দরজা-জানালা বন্ধ করে আবদ্ধ ঘরে মাসের পর মাস কাটান যা শিশুর জন্য কোনোক্রমেই আশানুরূপ নয়। নবজাতকের চর্মরোগের যেহেতু একটা বিষয় রয়েছে সেহেতু ঘরের মধ্যে দিনে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করার সুযোগ করে দিন। এতে বদ্ধঘরে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে তা কমে যায়। প্রতিদিন ভোরের সূর্যের প্রথম আলো শিশুকে লাগানোর ব্যবস্থা করুন।

এই রোদ শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চর্মরোগ থেকে রেহাই দেয়। বাচ্চার বাহ্যিক সুস্থতায় এর বিকল্প নেই। নবজাতকের নরম কোমল ছোট হাত-পা ধরে একটু একটু নাড়াচাড়া করুন। দেহে নিয়মিত তেল মালিশ করুন ও গোসল করান। দেখবেন শিশুর শরীরের ব্যায়াম সম্পন্ন হচ্ছে এবং ছোট ছোট সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাচ্ছে। রাতে নিস্তব্ধ কক্ষ, স্বল্প আলোর বাতি, ক্ষেত্রবিশেষে সুমধুর যন্ত্রধ্বনি শিশুর ঘুমে ভূমিকা রাখতে পারে। মনে রাখবেন, কথায় কথায় ফার্মেসি থেকে ওষুধ আনা আর শিশুকে খাইয়ে দেয়া যুক্তিযুক্ত নয়।

যে শিশুরা একটু বড় হয়েছে তাদের সুষম খাদ্য প্রয়োজন। খাবারের পাশাপাশি করোনা সম্পর্কে আতঙ্ক না দেয়া, আশার কথা বলা, গল্পে গল্পে খেলা, বই পড়াসহ নানা কাজে উৎসাহ দেয়া হতে পারে মজবুত কর্মপরিকল্পনা।

* চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুনঃ
সব চিকিৎসা ঘরে বসে হয় না। তাই, আপনার শিশুকে ভালো করে লক্ষ করুন। তার কান্নার ধরন পরিক্ষা করুন। বাহ্যিক অঙ্গভঙ্গি খেয়াল করুন।

যদি স্বাভাবিক মনে না হয়, ফোনে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এখন অনলাইনে অনেক বিশেষজ্ঞ এই সেবা দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এটি নিশ্চিত যে, শিশুর প্রতি আপনার ধারণামূলক চিহ্নিত রোগ এবং দোকান থেকে আনা ওষুধ যে কোনো সময় যে কোনো মারাত্মক ক্ষতি করে দিতে পারে। কোনো চিন্তা না করে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন, ভালো ফল পাবেন।

* সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করুনঃ-
করোনার এ সময়টাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করুন। সামাজিক দূরত্ব বলতে পরিবারের সদস্যদের দূরত্ব নয়, বরং অন্য স্থান থেকে বেড়াতে আসা আত্মীয়দের কাছ থেকে কিছু দিন দূরত্ব মেনে চলুন আপনার ও বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য।

তাদের সবকিছু বুঝিয়ে বলুন। বর্তমান রোগ সম্পর্কে জানান। সবার ভালো থাকার উপায়গুলো আলোচনা করুন, দেখবেন তারাও আস্তে আস্তে বুঝে যাবে এবং অন্যকে শিখাবে। বিশেষ প্রয়োজনে কোথাও যেতে হলে ৬ ফুট দূরত্বে থাকুন। জনসমাগম মূলক স্থানগুলোতে শিশুকে না নেয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত। ঘরে থেকে থেকে শিশুরা যদি অস্থির হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে খোলা জায়গায় যেখানে মানুষের কোলাহল নেই সেখানে ঘুরিয়ে আনতে পারেন। তবে, এক্ষেত্রে আপনাকেই ভ্রমণস্থান, বাহন, খাবার-দাবার, পরিবেশ-পরিস্থিতি নিশ্চিত করে নিতে হবে।

* বুকের দুধ খাওয়ানঃ-
যেহেতু ছোট বাচ্চারা কথা বলতে পারে না সেহেতু যে কোনো সমস্যায় তারা উচ্চস্বরে কাঁদে। এই কান্না নিয়ে অনেকে আপনার কান ভারী করে দিতে পারে। কখনও কখনও কুসংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহ দিতে পারে। কখনওবা আপনাকে ভুল পথে চালনা করতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি আপনি কিছু না জানেন তাহলে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এখন অনলাইনে অনেক অ্যাপ পাওয়া যায় যাতে সবকিছু বিস্তারিত রয়েছে, ডাউনলোড করে নিতে পারেন, কিছুটা হলেও ভালো-মন্দ বুঝতে পারবেন। মনে রাখবেন, মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই। সব রোগের প্রাথমিক ও মহৌষুধ এটি। কারণ এতে রয়েছে প্রোটিন, ফ্যাট, আয়রন, ভিটামিনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই, কোনো ক্রমেই বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ নয়।

* মাস্ক নয়, ফেসশিল্ড ব্যবহার করুনঃ-
যেখানে বড়রাই নাকে-মুখে মাস্ক পরে দিশেহারা সেখানে আপনার সন্তানকে নিয়ে কি ভেবে দেখেছেন? জেনে রাখুন, নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাস হয় খুব ছোট ছোট। আবার ২ বছর বয়স পর্যন্ত কোনো শিশুকে মাস্ক পরানোও উচিত নয়।

দরকারের ভিত্তিতে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে, বাচ্চার তাওয়াল শরীরে ও মাথায় সুন্দর করে পেঁচিয়ে ফেসশিল্ড পরান। করোনার এ সময়ে শিশুর টিকায় নিস্তব্ধ হয়ে থাকাটা সম্পূর্ণ বোকার পরিচয় দেয়া। রোগ প্রতিরোধের জন্য এই টিকা সময়মতো দিতে হয়। যে শিশুরা বেশ বড়, তাদের জন্য বেবি মাস্ক রয়েছে। পছন্দমতো রং ও নকশা দেখে কিনে নিন। তবে মাস্কের মান ও গ্রহণযোগ্যতায় খেয়াল রাখা উচিত।

* হাত ধোয়ার অভ্যাস করানঃ-
শিশু যখন হামাগুড়ি দিতে শেখে তখনই তারা হাত দিয়ে এটা সেটা ধরে। তাই, তার হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করুন। জীবাণু ধ্বংসে বিভিন্ন বেবি সোপ ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সব কিছু শেখাতে পারলে হয়তো এই শিশুরাই এক সময় বড় হয়ে অনেক সচেতন হয়ে উঠবে। আজ থেকে নিজেদের সুস্থতার পাশাপাশি শিশুর সুস্থতাও নিশ্চিত করুন। পরিশেষে আশা করি ভালো থাকব আমরা, ভালো থাকবে আমাদের শিশুরা। অনিশ্চিত এ যাত্রায় ঘরে থাকি, সুস্থ থাকি, শিশুদের যত্নে রাখি।

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
কো-চেয়ারম্যান, হোমিও বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ইমেইল: drmazed689@gmail. Com
মোবাইল: ০১৮২২৮৬৯৩৮৯।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন