বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শিরকও এক প্রকার কুফর-০২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

আমরা পূর্ববর্তী আলোচনায় শিরক ফিল ইবাদাতের কতিপয় প্রমাণপঞ্জি উপস্থাপন করেছি। অদ্যকার আলোচনায় তার অবশিষ্টাংশ সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাগণের খেদমতে পেশ করা হলো। (গ) তিনি (আল্লাহ) তোমাদের ওপর মৃত প্রাণী, প্রবাহিত রক্ত, শুকরের মাংস, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহকৃত পশুর গোশত হারাম করেছেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৭৩)।

(ঘ) হে নবী! আপনি বলুন : অবশ্যই আমার সালাত, আমার কোরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ একমাত্র রাব্বুল আলামীন আল্লাহপাকের জন্য নিবেদিত। (সূরা আনয়াম : আয়াত ১৬৩)। (ঙ) রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে উদ্দেশ করে বলেছেন : তোমরা আমার মর্যাদার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, যেরকম নাসারাগণ ঈসা বিন মারয়ামের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে। আমি শুধুমাত্র আল্লাহর বান্দাহ। বরং তোমরা ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে বলবে মোহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। (সহীহ বুখারী : পৃষ্ঠা ৪৯০)।
(চ) রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ফরমান : আল্লাহপাক ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে লানত বর্ষণ করুন, তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছে। (সহীহ বুখারী : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৭)। (ছ) রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন : তোমরা তোমাদের গৃহসমূহকে কবরে পরিণত করো না, আমার কবরকে ঈদগাহে পরিণত করো না। আমার ওপর তোমরা সালাত ও সালাম পাঠ করো। তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের সালাত-সালাম আমার কাছে পৌঁছবে। (সুনানে আবু দাউদ : পৃষ্ঠা ২৮৬)।

(জ) হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজ্বহাহু বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে চারটি বিষয়ে হাদীস শুনিয়েছেন : (ক) আল্লাহপাক তাকে লানত বর্ষণ করুন, যে তার পিতাকে অভিশম্পাত দেয়। (খ) আল্লাহপাক তাকে লানত বর্ষণ করুন, যে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু যবেহ করে। (গ) আল্লাহ পাক ওই ব্যক্তির ওপর লানত বর্ষণ করুন, যে কোনো বেদআতীকে (ধর্মীয় বিধি বিধানে নতুন পন্থা উদ্ভাবনকারীকে) আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। (ঘ) আর আল্লাহপাক ওই ব্যক্তির ওপর লানত বর্ষণ করুন, যে জমীনের সীমানা পরিবর্তন করে দেয়। (সহীহ বুখারী : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬০)।

(৪) শিরক ফিল হুকুম : অর্থাৎ, আহকামুল হাকেমীন আল্লাহর হুকুমের মধ্যে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা। হাকীম তথা বিধান দিবার যোগ্য সত্তা একমাত্র আল্লাহতায়ালা। কোনো বস্তুর হালাল বা হারাম হওয়ার ব্যাপারটি শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত হতে পারে। কোনো ব্যক্তি আল্লাহপাকের এ বৈশিষ্ট্যে গাইরুল্লাহকে তাঁর শরীক মনে করলে সে শিরক ফিল-হুকুম করল। আল্লাহ তাআলার দেয়া বিধানের তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র কোনো শাসক বা নেতার নিষেধ করার জন্য কোনো বিষয়কে হারাম ও নিষিদ্ধ জ্ঞান করা, কিংবা একই কারণে কোনো বিষয়কে হালাল ও বৈধ মনে করা, কিংবা নেতা বা শায়খ কর্তৃক নির্দেশিত কাজকে আল্লাহপাকের নির্ধারিত ফরযের মতো ফরজ মনে করা, অথবা অন্যের নির্দেশকে আল্লাহর নির্দেশের সমকক্ষ ও সমপর্যায়ের একীন বিশ্বাস করা এবং তা পালন ও মান্য করা এসবই শিরক ফিল হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) তারা (ইয়াহুদী ও নাসারাগণ) আল্লাহকে ছেড়ে তাদের আলেম (আহবার) এবং ধর্ম যাজকদেরকে (রূহবান) এবং মারয়াম পুত্র মাসীহকে রব অর্থাৎ প্রতিপালক বানিয়ে নিয়েছে, অথচ তাদেরকে এ হুকুমই দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা একমাত্র উপাস্য আল্লাহর ইবাদত করবে, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, প্রকৃতই আল্লাহপাক তাদের শিরক হতে পূত-পবিত্র। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ৩১)।
(৫) শিরক ফিল এলেম : অর্থাৎ, জ্ঞানগত বিষয়ে অংশী স্থাপন করা। এলমে গায়েব তথা অদৃশ্য ও ভবিষ্যতের নিশ্চিত ও সন্দেহ মুক্ত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহপাকের জন্য নির্ধারিত। উল্লেখ্য যে, এলমুল গায়েব অর্থ মৌলিক জ্ঞান। এ মৌলিক জ্ঞানের ভান্ডার একমাত্র আল্লাহপাকই সংরক্ষণ করেন। তবে, যে জ্ঞান আংশিক, যে জ্ঞান অর্জিত বা অন্যে কর্তৃক প্রদত্ত, কিংবা অন্য কিছুর মাধ্যমে আহরিত তা এলমে গায়েব নয়। এতদর্থে যে ব্যক্তি আল্লাহপাকের আলিমুল গাইবের বৈশিষ্ট্যে অন্যকে তাঁর সাথে অংশীদার মনে করল, সে শিরক ফিল এলেম-এর আওতায় পড়ে গেল।

কারও ব্যাপারে এ ধারণা পোষণ করা যে, অমুক সিদ্ধপুরুষ গায়েব বা অদৃশ্যর খবর জানেন, অমুক ব্যক্তি সৃষ্টি জগতের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ের এলেম রাখেন, অমুক ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় এবং মরণোত্তর জীবনে পৃথিবীবাসীর সকল অবস্থা সম্পর্কে অবহিত আছেন, অমুক ব্যক্তি দূর-নিকট তথা অগ্র-পশ্চাত সকল বিষয় অবগত আছেন, ইত্যাদি ধারণা ও বিশ্বাস শিরক ফিল এলেমের অন্তর্ভুক্ত।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
সোলায়মান ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:২৬ এএম says : 0
শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম, যা থেকে মুক্ত থাকা অত্যন্ত কঠিন।
Total Reply(0)
নাজিম ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:২৭ এএম says : 0
মানুষকে পরিপূর্ণ ঈমানদার মুসলমান হতে হলে অবশ্যই ইসলাম, কুফর ও শিরকের ব্যাপারে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকা জরুরি।
Total Reply(0)
মারিয়া ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:২৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরক এবং কুফরি বিশ্বাস থেকে হিফাজত করে সঠিক পথের উপর থাকার তাওফিক দান করুন।
Total Reply(0)
নাবিল আব্দুল্লাহ ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:২৮ এএম says : 0
কুফরি এবং শিরক থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র পথ হলো- বিনা শর্তে আল্লাহ তাআলাকে সমস্ত ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতি বলে বিশ্বাস করার পাশাপাশি বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবি ও রাসুল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর বিধি-বিধানকে কর্মে বাস্তবায়ন করা।
Total Reply(0)
আবদুল মান্নান ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:২৯ এএম says : 0
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন