মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

দেশের মানুষ কি ভালো আছে?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের মানুষ কতটা সুখী বা অসুখী তার সঠিক পরিমাপের প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। কেউ কেউ মানুষের সুখী হওয়ার ফলাফল প্রকাশ করলেও, তা যে সত্যিকারের সুখী-অসুখীর পরিমাপক তা হলফ করে বলা যায় না। কারণ, মানুষের মনের খবর বের করা সহজ কাজ নয়। কেউ হয়তো অসুখে থাকলেও বলবে ‘ভাল আছি’। কেউ হয়তো মনের ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলবে, ‘ভাল নেই’। মাঝে মাঝে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা জরিপ করে বিশ্বের সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করে। তাতে বাংলাদেশেরও ঠাঁই হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশের মানুষ কতটা সুখী তার একটি পরিসংখ্যানগত চিত্র পাওয়া যায়। তবে এ জরিপ যে একেবারে নিরেট সত্য প্রকাশ করে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ সুখের বিষয়টি আপেক্ষিক। এতে বাহ্যিক ও অন্তর্গত এবং উপলব্ধিগত বিষয় থাকে। এক জনের কাছে যা সুখের, অন্যের কাছে তা অসুখের হতে পারে। যেমন, একজনের সম্পদ যখন আরেকজন কেড়ে নেয়, তখন যার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হলো তার জন্য এটা চরম দুঃখের। অন্যদিকে যে কেড়ে নিল তার কাছে অত্যন্ত সুখের। তবে সার্বিকভাবে একটি দেশের মানুষ কতটা সুখী বাহ্যিকভাবে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি, উন্নতির আকাক্সক্ষা এবং ধারা থেকে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার যুগে সুখের মূল উৎস হিসেবে ধরা হয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে। যে দেশ আর্থিকভাবে যত বেশি উন্নত সে দেশের মানুষকে তত বেশি সুখী হিসেবে ধরা হয়। এ ধারণা থেকে সরকারও বলতে থাকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হবে এবং দেশের উন্নতি হলে মানুষও সুখী হবে। এটা পুঁজিবাদী সুখের তত্ত্ব। পুঁজিবাদে সুখী হওয়ার একমাত্র সংজ্ঞাই হচ্ছে, যেভাবে পারো অর্থ রোজগার করো, সুখী হও। সরকারও এ তত্তে¡ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। মানুষও এ সংজ্ঞা মেনে অর্থের পেছনে ছুটছে। উন্নতির প্রতিযোগিতায় শামিল হচ্ছে। যারা পারছে, এগিয়ে যাচ্ছে। যারা পারছে না তারা ছিটকে পড়ছে। ছিটকে পড়াদের দুঃখের সীমা থাকছে না। ভাববাদীরা অনেক সময় বলেন, অর্থ থাকলেই সুখী হওয়া যায় না। তবে তাদের এ কথাকে পুঁজিবাদে অক্ষমের সান্ত¦না পাওয়া হিসেবে গণ্য করা হয়। বাস্তববাদীরা ভাববাদীদের এ কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, অর্থ থাকলে সুখের সন্ধানে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যাওয়া যায়। পুঁজিবাদের এ যুগে অধিকাংশ মানুষের কাছে এখন সুখের একমাত্র সংজ্ঞা এটাই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।

দুই.
সর্বশেষ জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন)-এর এক জরিপে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ডেনমার্ক, আর সবচেয়ে অসুখী দেশ বুরুন্ডি। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১০। সংস্থাটি তিন বছর ধরে ১৫৬টি দেশে জরিপ চালিয়ে এ তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রতিটি দেশের এক হাজার নাগরিকের কাছে প্রতিবছর তাদের জীবন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় এবং শূন্য থেকে দশের মধ্যে একটি পয়েন্ট তালিকায় নম্বর দেয়ার জন্য বলা হয়। সুখের এ মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), সামাজিক সহায়তার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, দাতব্য সেবা এবং দুর্নীতিহীনতা। দশ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৪.৬৪৩ পয়েন্ট। জরিপে দেখানো হয়েছে, যেসব দেশে বৈষম্য বা ভেদাভেদ কম, সে দেশের মানুষ বেশি আনন্দে থাকে। বিশেষ করে যেসব দেশে সামাজিক সহায়তা বেশি, বিপদে সমাজ বা রাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়া যায়, সেসব দেশের নাগরিকরাই বেশি সুখী। তবে এ কথাও সত্য, জরিপ বা পরিসংখ্যানে সবসময় সত্যিকারের চিত্র প্রতিফলিত হয় না। এটা একটি ধারণামাত্র। সার্বিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য এক ধরনের পরিমাপক। দেশের মানুষ যে এখন খুবই বিপদে বা অসুখী অবস্থায় আছে, তা বুঝতে পরিসংখ্যানের প্রয়োজন পড়ে না। করোনার আগে তারা নানা অসন্তোষ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে এক ধরনের জীবনযাপন করলেও, করোনা তাদের সেই জীবনযাপন তছনছ করে দিয়েছে। দেশের এখন অর্ধেকের বেশি মানুষ বেকার অবস্থায় রয়েছে। দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়েছে, নিম্নবিত্ত দরিদ্র হয়ে দারিদ্র্যতার কাতারে যুক্ত হয়েছে, আর মধ্যবিত্তের অনেকে নিম্নবিত্তে পরিণত হয়েছে। মানুষ এখন এক চরম দুঃসময় ও দুঃখীসময় পার করছে। এর মধ্যে তাদের দুঃখ বাড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তদের আস্ফালন। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ত্রাস সৃষ্টি, সম্পত্তি দখল এমনকি গবাদিপশু চুরির ঘটনা তাদের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারি এসব দুর্বৃত্তকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। বরং আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষের অসুখের মাত্রা তীব্র করে তুলেছে। তার মধ্যে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির বেকার হওয়া থেকে আয় কমে যাওয়া সংসারের অশান্তি ও অসুখ বাড়িয়ে দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় দু’বেলা খাওয়ার অনিশ্চয়তাও তাদের সুখ কেড়ে নিয়েছে। আশপাশের পরিবারগুলোর দিকে নজর দিলে যে কেউ বুঝতে পারবে মানুষ এক অশান্তির মধ্যে দিনযাপন করেছে। এসব অসুখ তো পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করা যায় না। অন্যদিকে জাতিসংঘের জরিপে ১১০ নম্বর হওয়া থেকেই বোঝা যায় দেশে মানুষ সুখে নেই। তার চেয়েও বড় বিষয়, এখনও আমাদের শাসক গোষ্ঠীর বক্তৃতা-বিবৃতিতে বাংলাদেশকে একটি সুখী সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার কথা অহরহ বলা হচ্ছে। এ থেকে এটাই বোঝা যায়, দেশের মানুষ দুঃখের মধ্যেই আছে। তাদের যে সুখের জন্য ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন-তা সোনার হরিণ হয়েই রয়েছে। তা নাহলে, বাংলাদেশের অবস্থান ১১০ নম্বরে হবে কেন? কথায় আছে, আমাদের দেশের মানুষ অল্পতেই তুষ্ট হয়। দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারলে তাদের আর কিছু লাগে না। অথচ তাদের এ চাহিদার বিপরীতে তো আমাদের সম্পদ অনেক ছিল। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছের কথা সবার জানা। এখনও এ কথা বলা হয়। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। উন্নতির সব সূচকে এগিয়ে। তারপরও কেন বাংলাদেশ সুখী মানুষের দেশের তালিকায় একশ’র পরে? এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন না হলেও এটা সবাই স্বীকার করবেন, বিভিন্ন সময়ে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা জনগণকে সুখে রাখতে বা সুখী করতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি বা করছেন না। তার পরিবর্তে জনগণের সম্পদ লুটপাট করে তাদের একটি শ্রেণী বেশ সুখে-সচ্ছন্দে জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ শুনছে শাসক গোষ্ঠী বলছে, আমরা আপনাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছি। সাধারণ মানুষের কাছে এ ধরনের কথা প্রপঞ্চ ছাড়া কিছুই নয়। জনগণেরও কিছু করার নেই। তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেরাই সুখী হওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির মাধ্যমে ফসলের বাম্পার উৎপাদন করছে। বিদেশ গিয়ে আধুনিক দাসবৃত্তি অবলম্বন করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে। মানুষের এই উদ্যমী ভূমিকার কারণেই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে বাংলাদেশ এখনো টিকে আছে। এ নিয়ে শাসক গোষ্ঠীও গর্ব এবং কৃতিত্ব নিতে ছাড় দেয় না। জনগণের এ ভেবে দুঃখ হতে পারে, কার ফসল কার ঘরে যায়। বাম্পার ফসল ফলাই আমরা, কৃতিত্ব নেয় শাসক গোষ্ঠী। বিদেশে কামলা দিয়ে টাকা পাঠাই আমরা, আনন্দ করে সরকার। বিষয়টি তাদের কাছে এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ‘কেউ মরে বিল সেঁচে, কেউ খায় কৈ’। তাদের আরও দুঃখ হতে পারে যখন তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা থাকে না। ফসল উৎপাদনের খরচ দিয়েও ফসল কেনে না। এ দুঃখে কৃষকদের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা গতি থাকে না। অনেকে দুঃখে রাস্তায় ফসল ফেলে প্রতিবাদ করে। আবার যাদের কষ্টার্জিত অর্থে দেশের রিজার্ভ রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়, সেই অর্থও নয়-ছয় হয়ে যায়। দেশের এরকম অবস্থায় মানুষের সুখী হওয়ার কি কারণ থাকতে পারে?

তিন.
বাংলাদেশের মানুষের দুঃখের কথা বলার মতো কোনো প্ল্যাটফর্মও নেই। তাদের সুখের কথা জাতিসংঘ বা অন্য কোনো বিদেশি জরিপ করে বলে দিচ্ছে। হাজার খানেক মানুষের মতামত নিয়েই সুখ-দুঃখের বিচার করছে। এই হাজার খানেক মানুষের সুখ-দুঃখের উপর ভিত্তি করে ষোল কোটি মানুষের সুখ-দুঃখের বিচার করা কতটা যৌক্তিক, তা পাঠকরাই ভাল বলতে পারবে। হতে পারে কিছু মাপকাঠির উপর ভিত্তি করে এ জরিপ করা হয়। তবে তা যে সঠিক হবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এই সময়ে যদি বাংলাদেশের মানুষের সুখ-দুঃখের হিসাব করা হয়, তবে অনেকেই একমত হবেন, তারা ভাল নেই। এই ভাল না থাকার কারণ হচ্ছে, তারা অত্যন্ত দুঃখে-কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে। করোনার আগে যেমনই থাকুক, করোনাকালে তাদের সেই অবস্থাকে শোচনীয় করে তুলেছে। বেকারত্ব, আয় কমে যাওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সংসার চালানোর দুঃশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছে। এই সময়ে যদি তাদের সুখের পরিমাপ বা জরিপ করা হয়, তাহলে তার সূচক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বোধ করি বুঝিয়ে বলার অবকাশ নেই। কারণ হচ্ছে, যে দেশে জনসংখ্যার অর্ধেক বেকার অবস্থায় থাকে, সে দেশে সুখের বিচার করা অর্থহীন। তবে দেশের সব মানুষ যে অসুখী তা নয়, কেউ কেউ অত্যন্ত সুখে-সাচ্ছন্দে বসবাস করছে। এটি একটি শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই শ্রেণীটা যেমন ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত, তেমনি অত্যন্ত প্রভাবশালী। তারা অনেকটা দরিদ্র দেশের ‘বিশ্ব ধনী’র মতো। তাদের সম্পদের অভাব নেই। ইউরোপ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশসহ অন্যান্য দেশে বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। দেশের অর্থেই তারা সেখানের বাসিন্দা হয়েছে। প্রতি বছর যে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়, তাদের মাধ্যমেই তা হচ্ছে। এদেরকে বলা হয়, লুটেরা শ্রেণী। এই শ্রেণীটিই আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরই শ্রমে-ঘামে অর্জিত অর্থ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। তারা এ দেশে সুখে-শান্তিতে বসবাস করলেও এ দেশকে সুখের আবাস মনে করে না। তাদের সব সুখ বিদেশে। তাদের আচরণ অনেকটা ইংরেজদের মতো। ইংরেজরা যেমন ইংল্যান্ডের বাসিন্দা হয়ে এ দেশ দুইশ’ বছর শাসন করেছে এবং সম্পদ নিয়ে গেছে, তেমনি আমাদের দেশেরও কিছু লোক এ কাজ করে চলেছে। যে দেশে জনগণের অর্থ নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা হয়, সে দেশের মানুষ কিভাবে সুখে থাকে? তার উপর অভাব-অনটনে থাকা মানুষকে যতভাবে টানাপড়েনের মধ্যে ফেলা যায়, তার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ায় তাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এক পা আগালে দুই পা পিছিয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনযাপন হয়ে পড়েছে বানরের তৈলাক্ত বাঁশে উঠানামার মতো। আমরা যদি মানুষের নিরাপত্তার দিকে তাকাই, তাহলে মানুষের চেহারায় আতঙ্কই দেখব। খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস এতটাই বেড়েছে যে, কে কখন এর শিকার হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। হিংসা, বিদ্বেষ, ঈর্ষা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, নীতি-নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় মানুষকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, পুরো সমাজব্যবস্থায় এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বলা বাহুল্য, রাষ্ট্রের পরিচালকরা যদি সঠিক পথে না থাকে বা সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে না পারে, তবে অনিবার্যভাবে তার প্রভাব সমাজ ও পরিবারে পড়ে। আমরা যদি রাজনীতির দিকে তাকাই, তাহলে দেখব সেখানে যারা বিচরণ করেন, তারা সুখে আছেন, এমন কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথা বাদ দেয়া যাক। তাদের দুঃখের সীমা নেই। তবে সরকারে যারা আছেন এবং যেভাবে আছেন, তারা কি সুখে আছেন? শান-শওকত ও ক্ষমতা-প্রতিপত্তির মধ্যে থেকেও কি শঙ্কার মধ্যে নেই? বিশেষ করে যে দল জনসাধারণের ভোটের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে, তাদের শঙ্কা তো স্বৈরাচার সরকারের চেয়েও বেশি থাকার কথা। কারণ, ক্ষমতাচ্যুত হলে এর জবাব জনগণকে অবধারিতভাবে দিতে হবে। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, যে দেশ জোরজবরদস্তির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়, সে দেশের মানুষ কোনোভাবেই সুখে থাকতে পারে না।

চার.
আমরা প্রায়ই সরকারের পক্ষ থেকে শুনি, ‘বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই’। সচেতন মহল থেকে এর বিপরীতে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও যদি এ কথা শুনতে হয়, তবে মানুষের দুঃখের সীমা থাকার কথা নয়। তারা প্রশ্ন করতেই পারে, দুঃখী মানুষ সুখী হতে পারল না কেন? সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যমলা সমৃদ্ধ সোনার বাংলার দুঃখ ঘুচলো না কেন? সমস্যা কোথায়? ঘুরে-ফিরে এসব প্রশ্নের উত্তর ঐ এক জায়াগায়ই পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পর থেকে সোনার বাংলা যারা পরিচালনা করেছেন এবং করছেন তারা সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারেনি। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যে দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে পারে, সে দেশ পরিচালনার জন্য দক্ষ চালকের খুবই অভাব দেখা যায়। দেশ ও দেশের মানুষকে সুখী করার জন্য সর্বপ্রথম যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন, তা আজও প্রতিষ্ঠা কারা যায়নি। এখনও এ নিয়ে আলোচকরা বিস্তর আলোচনা করছেন। তাদের কথাবার্তা আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। সুশাসন আর প্রতিষ্ঠা হয় না। কেবল দুঃশাসনই গ্রাস করে চলেছে। এর ফলে মানুষের দুঃখের শেষ নেই। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ত্রাস, বিরাজনীতিকরণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি সঞ্চার করেছে। অন্যদিকে জনগণের সামনে উন্নয়নের ‘প্ল্যাকার্ড’ তুলে ধরে আশ্বস্থ ও সান্ত¦না দেয়ার অবিরাম চেষ্টা চলছে। জাতিসংঘ সুখী দেশের যে তালিকা প্রকাশ করে এবং বাংলাদেশ যে অবস্থানে থাকে, তা না দেখলেও কারো বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশের মানুষ সুখে নেই। সুখ তাদের কাছে সোনার হরিণ হয়েই রয়েছে।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
AC Abdus ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:১৯ এএম says : 0
মানুষের নাই ভাষা প্রকাশের স্বাধীনতা, অরাজকতা আর দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে পুরো দেশ। মানুষের নেই কাজ, অন্য রাষ্ট্র দ্বারা দেশের প্রসাশন পরিচালিত। ইসলাম ধর্মকে প্রতি মুহুর্ত অবমাননা করা হচ্ছে। দরিদ্র মানুষ না খেয়ে দিনাতিপাত করছে, সেইসব মানুষকে প্রশ্ন করুন!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন