শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চলমান শৈত্য প্রবাহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে

দেশে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ কোটি ৮১ লাখ টন বোরা, গম, ভুট্টা ও গোল আলু উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:৪৬ পিএম

চলমান শৈত্য প্রবাহে বোরো বীজতলা ও রোপা ধান ‘কোল্ড ইনজুরী’ এবং গোল আলু ‘লেটব্লাইট’ রোগে আক্রান্ত হবার দুঃশ্চিন্তায় কৃষক সহ মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। এমনকিএ ধরনের আবাহওয়া গম উৎপাদনে সহায়ক হলেও যদি বৃষ্টি নামে, তবে পুনরায় ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ রোগের সংক্রমনও ছাড়াতে পারে। চলতি রবি মৌসুমে দেশে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি ৮১ লাখ টন বোরা, গম, ভ’ট্টা ও গোল আলু উৎপাদনের লক্ষে মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা দিনরাত কাজ করলেও ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রার পারদ ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে গেছে। এমনকি কম শীতপ্রবন দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পেয়েছে। ফলে রোপা বোরো’র সাথে এর বীজতলা এবং গোল আলু নিয়ে কৃষকের দুঃশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই থেকে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে শৈত্য প্রবাহ থেকে ফসল রক্ষার কৌশল পৌছে দেয়ার লক্ষে জেলা-উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি এখনো যেহেতু বোরো বীজ রোপন মাত্র ১%-এর বেশী নয়, সেহেতু খুব বেশী ক্ষতির আশংকা না থাকলেও বীজতলা নিয়ে কিছুটা দুঃশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। পাশাপাশি গোল আলু নিয়েও শংকা বাড়ছে।
‘সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২’ মৌসুমে আমন আবাদ লক্ষ ছুলেও ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’এর ছোবলে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান এ খাদ্য ফসল উৎপাদন ঘাটতির করনে সারাদেশেই তার প্রভাব পড়ছে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই কৃষি মন্ত্রনলয় চলতি মৌসুমে দেশে বোরো,গম, ভ’ট্টা, গোল আলু সহ সব ধরনের রবি ফসলের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে গত বছরের চেয়ে ৫Ñ১০% বেশী জমিতে আবাদের মাধ্যমে অধিক ফসল ঘরে তোলায় আগ্রহী। সে হিসেব মাথায় রেখেই এবার লক্ষমাত্রাও নির্ধারন করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়।
চলতি মৌসুমে দেশে বোরা আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে গত বছরের ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টরের স্থলে ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৬ হেক্টরে। আর গত বছর বোরো চালের উৎপাদন ২ কোটি ১ লাখ ৮১৩ টনের স্থলে এবার ২ কোটি ৫ লাখ ৩১৪ টনে উন্নীত করার লক্ষ্য স্থির করেছে মন্ত্রনালয়। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজও শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২ লাখ ২৫ হাজার ৪শ হেক্টরে বোরা বীজতলার লক্ষ্য থাকলেও ইতোমধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার ৮শ হেক্টরে তা সম্পন্ন হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম সম্ভব হতে পারে বলেও আশা করছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
অপরদিকে গত কয়েকটি বছর ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ রোগের কারনে সরকার কিছু এলাকায় গম আবাদ নিরুৎসাহিত করলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দূর্যোগ কাটিয়ে চলতি মৌসুমে গম আবাদ সম্প্রসারনের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রনালয়। গত বছর দেশের কিছু এলাকায় সামান্য জমিতে ব্লাষ্ট-এর সংক্রমন হলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়। এসব বিবেচনায় নিয়েই গত বছরের ৩ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরের স্থলে চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৪ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে গত বছরের ১২ লাখ ৪৬ হাজার টনের স্থলে ১২ লাখ ৯৮ হাজার টন। ডিএই’র হিসেব মতে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে গম আবাদের পরিমান ছিল ৩ লাখ ১৪ হাজার হেক্টরের কিছু বেশী। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৯%। চলতি মাসের পুরো সময় যুড়েই গমের আবাদ চলবে বলে জানা গেছে।
এদিকে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই চলতি মৌসুমে দেশে গোল আলুর উৎপাদনও গত বছরের তুলনায় অন্তত সাড়ে ৪ লাখ টন বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারন করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। গত বছর দেশে ৪ লাখ ৬৪ হাজার জমিতে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৯ লাখ ১৮ হাজার টনের মত। সেখানে চলতি মৌসুমে দেশে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭১ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্যে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে গোল আলুর আবাদ লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর বা লক্ষমাত্রার ৯৬% জমিতে আলুর আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে ডিএই সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে সাম্প্রতিককালে দেশের পোল্ট্রি ফিড সহ বিভিন্ন সম্পুরক খাদ্য হিসেবে ভ’ট্টার ব্যাবহার বৃদ্ধির সাথে এর আবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার চলতি মৌসুমে এ দানাদার ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারন করেছে। গত বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ ৬৩ হাজার জমিতে ৪৭ লাখ ২১ হাজার ৫শ টনের মত ভ’ট্টা উৎপাদন হলেও এবার ৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ৪৮ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন ভ’ট্টা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে।
এবার রবি মৌসুমে বিভিন্ন ফসলের শুধু আবাদ বৃদ্ধি নয় উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশলও নির্ধারন করা হয়েছে। গত বছর দেশে হাইব্রিড, উফশী ও স্থাণীয় সহ বোরো ধানের উৎপাদন ছিল হেক্টর প্রতি ৩.৬৫ টন। এবার সেখানে ৪.২৪ টনে পৌছতে ডিএই কাজ করছে। গত বছর গমের উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৩.৬৪ টন থেকে চলতি মৌসুমে ৩.৬৫ টনে পৌছাতে চাচ্ছে সরকার। ভ’ট্টার উৎপাদনও এবার হেক্টর প্রতি ১০.৩৬ টনে পৌছার লক্ষে কাজ করছে ডিএই। গোল আলুর ক্ষেত্রেও গত বছরের ২৩.৫০ টন থেকে এবার হেক্টর প্রতি ২৪.২৭ টন নির্ধারন করা হয়েছে।
তবে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদদের মতে, এবারও রবি মৌসুমে বিভিন্ন খাদ্য ফসলের উৎপাদন নির্ভর করছে অনুকুল প্রকৃতিক পরিবশ সহ উচ্চ ফলনশীল বীজ ও সার-এর সহজলভ্যতা সহ আবাদ প্রযুক্তির ওপর। পাশাপাশি ফসলের ন্যায্য দাম প্রাপ্তির ওপরও কৃষকের আবাদ আগ্রহ নির্ভরশীল। কিন্তু কৃষকের ঘরে যতক্ষন ফসল থাকে,ততক্ষন বাজারে সে কৃষিপণ্যের দাম থাকে কম। মজুদদারদের নিয়োজিত ফরিয়ারা কৃষকের কৃষিপণ্য গুদামজাত নিশ্চিত করার পরেই সে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি শুরু হয়। মূল্য বৃদ্ধির সে ঘোড়া একসময় পাগল হয়ে ভোক্তাকে নিস্পেষিত করে। তবে কৃষকের ন্যাযমূল্য প্রপ্তি সহ ভোক্তাদের জন্যও সহনীয় বাজার নিশ্চিত করার পথ সরকারকেই খুজে বের করার তাগিদ দিয়েছেন বাজার পর্যবেক্ষকগন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack Ali ২২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:৫৫ পিএম says : 0
O'Allah protect us from cold wave and protect our food grain from natural disaster. Ameen
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন