মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

তারাবীহ আট না রাকয়াত বিশ?

মোঃ আরমান খালাসী | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

প্রতি বছর আমাদের সামনে হাযির হয় রমজান মাস। মুসলমানদের নিকট শারীরীক এবাদাতের মধ্যে রমজানের রোজা পালন অন্যতম। রমজান মাসে আদায় করতে হয় সালাতুল তারাবীহ। এ তারাবীহ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক মতভেদ। কেউ বলে আট রাকাত, কেউ বলে বিশ রাকাত। এ নিয়ে ঝগড়া বিবাদও হয়ে থাকে ব্যাক্তি টু ব্যাক্তি এমনকি পাড়া মহল্লায়ও। কেউ বলে ওই মসজিদে আট রাকাত পড়ে আমি বা আমরা ওই মসজিদে তারাবীহ আদায় করতে যাব না। কেউ বলে ওই মসজিদে বিশ রাকয়াত পড়ে আমি বা আমরা ওই মসজিদে তারাবীহ আদায় করতে যাব না। কিন্তু এর সমাধান কোথায় ?

তারাবীর অর্থঃ তারাবীহকে আরবীতে বলে ‘তারবিহা’। এই তারবিহা থেকে তারাবীহ এসেছে যার শাব্দিক অর্থ হলো অনেকগুলো ব্রেক বা বিশ্রাম। তারাবীর নামাজের ব্যাপারে শুরুতে কোন দ্বন্দ না থাকলেও এখনে রয়েছে অনেক দ্বন্দ। আমাদের দেশের এক শ্রেনীর মানুষের মুখে শোনা যায় যে, “তারাবীহ মানে তাড়াতাড়ি পড়া।” তারাবীহ যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় ততই সাওয়াব। এদিকে ইমাম সাহেব কি করবেন, চাকরী বাঁচানোর জন্য হোক আর ক্লান্তির জন্য হোক সেও মাশাল্লাহ ফোর জি গতিতে তারাবীহ শেষ করে। কারন, তারও ঘুমের দরকার। সব ইমাম সাহেব কিংবা সব মসজিদের কথা এখানে বলছি না। তবে অধিকাংশ ইমাম ও মসজিদের এ অবস্থা বললেই চলে।

হাদীসের ভাষাঃ উমর (রা) এর আমলের শুরুর দিকে তারাবীহর নামাজ আট রাকআত পড়া হতো, সাথে তিন রাকআত বিতর। সবমিলিয়ে এগারো রাকআত। কিন্তু, তাঁর খিলাফতের শেষদিকে তিনি আট রাকআতকে বাড়িয়ে বিশ রাকআত করেন। তিন রাকআত বিতরসহ মোট তেইশ রাকআত। এটা মানুষের জন্য সহজ করার জন্য করেন। কারণ, আট রাকআত নামাজ এতো লম্বা হতো যে, মানুষের পায়ে ব্যাথা হতো। দাঁড়িয়ে অনেক্ষণ থাকতে হতো। এজন্য তিনি আট রাকআত থেকে বিশ রাকআত করেন।”

লোকেরা তখন আরেকটা জিনিসের প্রচলন করে। প্রতি চার রাকআত পর তারা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার নামাজ শুরু করতো। এটার ভিত্তি কী? হাদীসে আছে। আয়িশা (রাঃ) কে রাসূলে (সাঃ) এর রাতের নামাজের বিবরণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বর্ণনা করেন, “তিনি চার রাকআত পড়তেন, তারপর বিশ্রাম নিতেন। অতঃপর আবার চার রাকআত পড়তেন। তুমি জিজ্ঞেস করো না তাঁর নামাজ কতটা সুন্দর ছিলো!” [সহীহ বুখারী]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি রামাদ্বানে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাতে নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার পূর্বের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিবেন।” -সহীহ বুখারী

একবার একজন সাহাবী এসে জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি রাতের নামাজ কিভাবে আদায় করবো?” রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “দুই রাকআত দুই রাকআত করে আদায় করবে। আর যদি আশঙ্কা করো ফজরের সময় হয়ে যাচ্ছে, তখন বিতর পড়া শুরু করবে।” [সহীহ বুখারী] এ হাদীস দ্বারা বোঝা যায় সারারাত তারাবী পড়তেও নিষেধ নাই।

তারাবী পড়তে হবে আস্তে আস্তেঃ এখন কথা হলো বিশ রাকাত আদায় করার দলিলও আছে আবার আট রাকাত আদায় করার দলিলও আছে। আবার সারা রাত পড়ার ব্যাপারেও বলা আছে। তাহলে আমরা কোনটা আদায় করব?

আমি বলব যে, তারাবী আট রাকায়াত নাকি বিশ রাকায়াত নাকি সারা রাত। এ দ্বন্দের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ আপনার তারাবীহটা যেন ধীরস্থির ভাবে হয়। এবং রূকু সেজদার যেন যথাযথ হক্ব আদায় হয়। ফোর জি গতিতে যেন তারাবীহ না হয়। প্রয়োজন বোধে আপনি আট রাকায়াত আদায় করেন। তাতে কোন সমস্যা নাই। আপনি চাইলে বিশ রাকায়াত আদায় করতে পারেন তাতেও সমস্যা নাই। চাইলে সারারাত পড়েন তাতেও সমস্যা নাই। কিন্তু কথা হলো যতটুকু পড়বেন ততটুকু খুশু খুযুর সহিত পড়বেন।

তারাবীহর নামাজ কোনো সংখ্যাগত বিষয় নয়। এটা ফরজ না যে কমালে বাড়ালে ক্ষতি হবে। আপনি আপনার ইচ্ছামতো আট রাকআত, বিশ রাকআত পড়ুন। যেটাই পড়ুুন নামাজ হতে হবে ধীরস্থির। কেউ যদি আপনাকে বলে আট না বিশ এ বিষয়ে তার সাথে তর্ক করার কোন দরকার নাই। সে যদি আট রাকয়াত পড়ে আর আপনি যদি বিশ রাকয়াত পড়েন তাহলে তাকে বলার দরকার নাই যে, তোমার নামাজ হবে না। আবার কেউ যদি বিশ রাকয়াত পড়ে আর আপনি আট রাকয়াত পড়েন তাহলে তাকেও বলবেন না যে, তোমার নামাজ হবে না। বিপরীত পক্ষের কোন লোক যদি আপনাকে বলে বসে “তোমার নামাজ হবে না। আপনি তর্কে লিপ্ত হবেন না। বলবেন, “ঠিক আছে ভাই তোমার তারাবীহ তুমি পড় আর আমার তারাবীহ আমি। এ নিয়ে তোমার সাথে তর্ক করতে চাই না।”.
লেখক : স্বরমঙ্গল টেকেরহাট রশিদিয়া কামিল মাদ্রাসা। মাদারীপুর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন