কেননা মানুষের আচার ব্যবহার পরিবেশ কর্তৃক প্রভাবিত হয় এবং এর ভিত্তিতে মানুষের জীবন যাত্রার মান পরিচালিত হয়। মানুষ সামাজিক জীবন বিধায় একে অপরের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলতে হয়, যাতে মানুষ কর্তৃক পরিবেশের কোনরুপ বিপর্যয় না হয়। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ও জাতীয় টেসই উন্নয়ন কৌশলপত্র পরিবেশ দূষন রোধ করে এর সুরক্ষা ও প্রাকৃতিক সম্পদের যথার্থ ব্যবহার প্রসংগে নবায়নযোগ্য জ্বালানী, অবকাঠামো ও শিল্প উন্নয়ন, টেকসই নগর ও সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা, ভূমির টেকসহিত্ব ইত্যাদির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা করেছে। ইসলাম ও এসব বিষয়ের বিস্তারিত নীতিমালা প্রদান করেছে। নিম্নে এ সম্পর্কে ইসলামের দিক নির্দেশনা উল্লেখ করা হলো:
পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ূ পরিবর্তন: মানুষ তার অগ্রযাত্রার পরিবেশ থেকে নানা উপকরণ গ্রহণ করছে প্রতিনিয়ত। পরিবেশের নানা উপাদানকে মানুষ তার প্রয়োজনে যথেষ্ট ব্যবহার করার ফলে এর বিপর্যয় ও পাশাপাশি জলবায়ূর পরিবর্তনকে অবশ্যম্ভবী করে তুলেছে। ইসলাম পরিবেশ দূষণের কারণসমূহ চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধ করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: স্থলে ও সমুদ্রে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কতিপয় কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ইসলাম নীতিমালা নির্ধারণ করেছে, নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:
বৃক্ষরোপন উদ্ধুদ্ধকরণ: পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষায় ওদুষণমুক্ত সবুজ পরিবেশ তৈরিতে বৃক্ষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মহানবী স. পরিবেশ বিপর্যয়ের বেশি বেশি বৃক্ষ রোপনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছে: যদি কোনো মুসলিম একটি বৃক্ষ রোপন করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তাে থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষন করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সদকাহ (দান) স্বরুপ গণ্য হবে।
পানিতে ও বাতাসের বিপরীতে মলমুত্র ত্যাগ নিষেধ: পানিতে মলমূত্র ত্যাগ পানিকে দূষিত করে, যা পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম করণ। এ জন্য ইসলাম বদ্ধ পানিতে মলমূত ত্যাগ নিষিদ্ধ করেছে। রাসূলূল্লাহ স. এ সম্পর্কে বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব না করে, (কারণ হয়তো) পরে সে ঐ পানিতে উযূ করবে। একইভাবে ইসলাম বাতাসের বিপরীত দিকেও প্রস্রাব না করার নির্দেশ দিয়েছে। কেননা এর দ্বারা বায়ূ দূষন হয় এবং তা জামা কাপড়ে লাগার উপক্রম হয়।
মৃত জন্তুকে পুঁতে রাখা: মৃত প্রাণী পচে দূর্গন্ধ যুক্ত হয়ে পরিবেশকে দূষিত করে। এক সময় বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করে। ফলে ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী মৃত প্রাণীকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আল্লাহ এক কাক প্রেরণ করলেন। সে মাটি খনন করছিল, যাতে তাকে শিক্ষা দেয় যে আপন ভ্রাতার মৃতদেহ কিভাবে আবৃত করবে। সে বলল: আফসোস, আমি কি এ কাকের সমতুল্য ও হতে পারলাম না যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ আবৃত করি। অতঃপর সে অনুতাপ করতে লাগল।”
হাঁিচর সময় মুখ ঢেকে রাখা: হাঁচির সাথে শরীরের ভিতর থেকে অসংখ্য জীবাণু বের হয়, যার করণে পরিবেশ দুষিত হয়। বিধায় ইসলাম হাঁচির দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখার বিধান প্রবর্তন করেছে। “মহানবী স. বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা হাঁচিকে পছন্দ করেন এবং হাঁই তোলাকে পছন্দ করেন। অতএব, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ হাঁচি দেয়, তোমরা তখন আলহামদুলিল্লাহ বলবে, আর যে আলহামদুলিল্লাহ শুনবে সে যেন ইয়ারহামুল্লাহ বলে (আল্লাহ তোমার প্রতি রহম বর্ষণ করুন)। হাঁই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে, আর যখন তোমাদের কেউ হাঁই তোলে, সে যেন তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কারণ, হাইতোলার উপক্রম হলে শয়তান হাঁসতে থাকে।
পরিবেশ দূষন ইমানের পরিচায়ক নয়: পরিবেশ দূষিত করা ঈমানের পরিপন্থি হিসেবে বিবেচিত। কেননা পরিবেশ দূষনকারী এর দ্বারা অন্যকে কষ্ট প্রদান করে এবং নিজেও কষ্ট পায়। অথচ অন্যকে কষ্ট দেয়া মুসলিমের পরিচায়ক নয়। রাসূলূল্লাহ স. বলেন: সেই প্রকৃত মুসলিম যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে।
প্রাকৃতিক সম্পদের দায়িত্ব পূর্ণ ব্যবহার: অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষন করা প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়নের ধারণায় প্রাকৃতিক সম্পগুলোর ব্যবহারকে যৌক্তিক সীমার মধ্যে সীমিত রাখা, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সকলের অংশগ্রহন এবং জনগণের সহানুভূতি, ন্যায় বিচার ও ভারসাম্য এসব বিষয় মৌলিক চাহিদা হিসেবে বিবেচিত হয়। ইসলাম প্রাকৃতিক সম্পদকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় এবং অপচয় রোধ করে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছে। নিম্নে এ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা উল্লেখ করা হলো:
মহাসাগর ও পানি: ইসলামের দৃষ্টিতে পানির পরিমান সীমিত, তাই এর দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। মহান আল্লাহ বলেন: আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষন করে থাকি পরিমাণমত, অতঃপর আমি জমীনে সংরক্ষন করি এবং আমি তা অপসারণ করতে সক্ষম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন